হাবরা, 10 মে : করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মায়ের। 12 ঘণ্টার উপরে উঠোনে পড়েছিল দেহ ৷ রোদ পুড়ল-বৃষ্টিতে ভিজল দেহটি। দীর্ঘক্ষণ প্রশাসনের দেখা না পেয়ে শেষে মেয়েরাই পিপিই কিট পড়ে মায়ের মৃতদেহ তুলে দিলেন শববাহী গাড়িতে। এ যেন মাতৃ দিবসে মাতৃ অর্ঘ্য দিলেন দুই মেয়ে। রবিবার এমনই করুণ দৃশ্য দেখা গেল উত্তর 24 পরগনার হাবরা কুমড়ো গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষা বেলের মাঠ এলাকায় ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, "বেলে মাঠের বাসিন্দা বছর 60 এর বৃদ্ধা স্মৃতি গাইন 8 দিন আগে জ্বরে পড়েন। প্রথমে তাঁকে স্থানীয় ডাক্তারের ওষুধ খাযওয়ানো হয়। ওষুধ খেয়েও শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয় না ৷ তখন তাঁকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 6 তারিখে সেখানে তাঁর কোভিড পরীক্ষা করানো হলে শনিবার বিকেলে তাঁর রিপোর্ট পজেটিভ আসে। রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বার থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এগিয়েও আসেনি স্থানীয়রা। সারা দিন রোদের মধ্যে উঠানে পড়ে থাকে দেহ। বিকেল বৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টিতে পড়ে ভেজেও সেটি।
পরিবারের অভিযোগ, রাতের দিকে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শববাহী যান পাঠানো হলেও, দেহ তোলার জন্য থেকে কেউ আসেনি। তার পরিবর্তে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দুটি পিপিই কিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ভিন রাজ্যে কাজের থাকায় পিপিই কিট পরে মায়ের দেহ শববাহী যানে তুলে দেন স্মৃতি দেবীর দুই মেয়ে।
আরও পড়ুন : মমতার মন্ত্রিসভায় 43 সদস্য, তালিকায় নেই রুপোলি পর্দার বিধায়করা
মৃত স্মৃতি দেবীর মেয়ে আশালতা মণ্ডল বলেন, "সকাল থেকে আমার মায়ের দেহ উঠানে পড়ে। রোদে পড়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে। বারবার প্রশাসনকে জানিও কোন লাভ হয়নি। প্রতিবেশীরাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। কেউ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেননি। আমার মায়ের সঙ্গে যা ঘটলো, এমন যেন আর কোনও মা বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে না ঘটে।"
করোনায় মানুষ মরছে, মৃত্যু হচ্ছে মনুষ্যত্বের। সব মিলিয়ে অমানবিক চিত্রই আবার ধরা পরল হাবরা থানার বেলের মাঠ এলাকায়। বৃদ্ধার মৃত্যুর 12 ঘণ্টা পরে সহযোগীতা না পেয়ে, অবশেষে যেভাবে তাঁর দুই মেয়ে পিপিই কিট পরে মৃত মায়ের দেহ শ্মশানে পাঠেলেন। তাতে করোনায় যে মানবিকতারও মৃত্যু হয়েছে তার প্রমাণ মেলে।