বারাসত (উত্তর 24 পরগনা), 21 জানুয়ারি: ‘‘ইডির (ED) হাত থেকে বাঁচতেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে । তাই এসব বলে কোনও লাভ নেই । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করছে ৷"
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের (TMYC Leader Kuntal Ghosh) অভিযোগ উড়িয়ে কার্যত এভাবেই তাঁকে পালটা জবাব দিয়েছেন তাপস মণ্ডল (Tapas Mondal) । শনিবার উত্তর 24 পরগনার বারাসতে নিজের বাড়িতে বসে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) ঘনিষ্ঠ এই তাপস মণ্ডল ।
ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, "ওঁর (কুন্তল ঘোষ) সঙ্গে ব্যাক্তিগত কোনও আক্রোশ নেই আমার । তাই কেন ওঁর কাছে টাকা চাইতে যাব আমি ! চাকরির নামে যাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন,তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার বলেছি ! ও নিজেই আমাকে বলেছে এক-দু'দিন সময় দিন । আমি 50 লাখের মতো ব্যবস্থা করেছি । তারপরও সে টাকা ফেরত দেয়নি অকৃতকার্য চাকরি প্রার্থীদের ৷"
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এবার ইডির হাতে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ
এই বিষয়ে বলতে গিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরক দাবি করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল । তাঁর কথায়, "দু'দিন আগে আমার এক প্রতিনিধি গিয়েছিল কুন্তল ঘোষের কাছে । তাঁকে তিনি বলেছেন ‘তাপসদাকে বেশি চাপ না দিতে বলুন । আমি 50 থেকে 60 লাখ টাকার ব্যবস্থা করেছি, দিয়ে দেব ।’ ইডি, সিবিআইয়ের (CBI) কাছে আমি যেন বেশি মুখ না খুলি, সেটাও আমার ওই প্রতিনিধিকে বলতে ছাড়েননি তিনি । এটা আমার টাকা নয় । আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনও টাকাও চাইনি ওঁর কাছে । যাঁদের টাকা, তাঁদের ফেরত দিলেই হবে । এটাই ওঁর কাছে আমার প্রার্থনা ৷"
এদিকে, নিজের দাবিতে অনড় থেকে এদিন আবারও চাকরির নামে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ 19 কোটি 44 লাখ 50 হাজার টাকা নিয়েছেন বলে বোমা ফাটিয়েছেন অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি তাপস মণ্ডল । তিনি বলেন, "আপনারা জানেন যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আমার দু-তিনটে কলেজ রয়েছে । সেই সূত্রে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আমার । সেই সময় কিছু পরিচিত পড়ুয়া এবং আরও কয়েকজন চেনা লোকজন আমার কাছে এসে বলে, আপনি একটা আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিন ।’’
আরও পড়ুন: হুগলির নির্বাচনে কোটি টাকা খরচ করেন কুন্তল, দাবি ইডির
এরপর তাঁর সংযোজন, ‘‘তখন শুনলাম টেট উত্তীর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরি পাচ্ছে না । অথচ, অকৃতকার্য চাকরি প্রার্থীরা পাস করে যাচ্ছে বেআইনিভাবে । এমন সব তথ্য আমি পেয়েছি কুন্তলের কাছ থেকে । সেই সময় আমি পরিচিত পড়ুয়াদের ওর কাছে পাঠাই চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য । সবাই টাকাও দেয় । সেই টাকার হিসাবও রয়েছে আমার কাছে । কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে হয়তো চাকরির ব্যবস্থাও করেছিল । পরে অবশ্য তাঁদের চাকরিও চলে যায় । যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই গরিব । বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা । তাঁদের টাকা ফেরত দিক, সেটাই আমি চাই ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ আমি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি । ও টাকা নিয়েছে না নেয়নি তার সমস্ত রশিদ রয়েছে আমার কাছে । সিবিআই এবং ইডি তদন্ত করলেই, তা প্রমাণ হবে । এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আমার সরাসরি কোনও যোগ নেই । শুধু আমার একটাই অপরাধ, বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকরির জন্য ওর কাছে পাঠিয়েছিলাম ৷"
অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের ছেলের দু’টি সংস্থা কীভাবে রাজ্যের ডিএলইডি কলেজগুলি থেকে টাকা তুলত, তারও বিস্তারিত বিবরণ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে তুলে ধরেছেন তাপস মণ্ডল ।
আরও পড়ুন: তাপস মণ্ডলকে ঘুষ দেননি ! তাই ইডির হাতে গ্রেফতার, দাবি কুন্তলের