বারাসাত, 5 জুন: "বেঁচে থাকতে জীবনে আর কোনও দিন রেলে চড়ব না। ট্রেনের হর্ন শুনলেই আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। মনে হয় এই বুঝি ঘাড়ের ওপর পড়ল ট্রেনের কামরা।" রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি ঘরে ফিরে সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনই দুঃস্বপ্নের কথা শোনালেন অভিশপ্ত যশবন্তপুর-হাওড়াগামী হামসফর এক্সপ্রেসের আহত যাত্রী সুজল রায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এই ট্রেনের জেনারেল কামরাতেই দুই সহযাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর আঠারোর এই যুবক। শুক্রবার অর্থাৎ বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনার দিন বেঙ্গালুরু থেকে এই ট্রেনেই সুজল রওনা দিয়েছিলেন হাওড়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যশবন্তপুর-হাওড়াগামী হামসফর এক্সপ্রেস।
প্রাণহানি, আর্তনাদ, হাহাকার সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনার জেরে। সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং দুঃস্বপ্ন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সুজল-কে। কিছুতেই ভুলতে পারছে না। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের হাড়হিম করা দুঃস্বপ্নের সেই সমস্ত স্মৃতি। তাই বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে আসা এই যুবক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কোনওদিন ট্রেন যাত্রা করবেন না। কাজের জন্য যাবেন না ভিন রাজ্যেও। এখানেই যা কাজ পাবেন সেই কাজ করবেন ।
বারাসত পৌরসভার 33 নম্বর ওয়ার্ডের নিবেদিতা পল্লীতে ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে বাস করেন এই যুবক। রেললাইনের পাড়েই এক চিলতে ঘরে কোনও রকমে জীবনযাপন তাদের। বাবা পুলিন রায় অসুস্থ। মা গৃহবধূ। দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলে আবার প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে নার্ভের রোগী। তাই ছোট ছেলে সুজলকে-ই সংসারের হাল ধরতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে কাজের সূত্রে। যাতে অভাবের সংসারে উপার্জন একটু বেশি হয়। প্রায় আট মাস আগে বেঙ্গালুরুতে সেন্টারিংয়ের কাজে যোগ দেন সুজল রায়। সেখানে কাজ করে উপার্জনের কিছু টাকাও বাড়িতে পাঠাতেও শুরু করেছিলেন তিনি। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আগেই সবকিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেল! এই বিষয়ে সুজল বলেন, "সেদিনের দুর্ঘটনার সেই ভয়াবহতা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে।"