বারাসত, 16 মার্চ: নিয়োগ দুর্নীতিতে অস্বচ্ছতার ভুরি ভুরি অভিযোগ। ইদানিং যা জনসমক্ষে আসতে শুরু করেছে। নিয়োগ দুর্নীতির জেরে ইতিমধ্যে গারদে যেতে হয়েছে তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী এবং বিধায়ককে।শুধু কি তাই! ভুয়ো চাকরির তালিকায় নাম থাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তথা শাসকদলের প্রাক্তন কাউন্সিলর দোলন বিশ্বাসের চাকরিও গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ৷ সেই প্রেক্ষাপটে এবার শিক্ষিকা-কাউন্সিলরের অভিনব পোস্ট সোশাল মিডিয়ায়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে নিজে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের সালটিও জুড়ে দিয়েছেন বারাসত পৌরসভার নির্দল কাউন্সিলর চৈতালী ভট্টাচার্য। পোস্টটি অবশ্য করেছেন চৈতালীর স্বামী সজল ভট্টাচার্য। যিনি আবার একসময়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর পদেও ছিলেন। স্বভাবতই প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতার পোস্ট ঘিরেই এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতির অন্দরে (Social Media Post Controversy)।
কাউন্সিলর তথা শিক্ষিকা স্ত্রীর হয়েই কি এমন পোস্ট করলেন প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা? যা নিয়ে চলছে চর্চা! পোস্টটির প্রথমেই শুভেচ্ছা বার্তা রয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য। তারপরই লেখা সকলের পরীক্ষা ভালো হোক। এই আশা করি। কাউন্সিলর, চৈতালী ভট্টাচার্য। বারাসত পৌরসভা। 28 নম্বর ওয়ার্ড। পোস্টের একেবারে নীচে, শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের সালটি উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, 2006 সালে তিনি যখন শিক্ষিকা হিসেবে কর্মস্থলে যোগ দেন। সেই সময়ে তাঁর নিয়োগ স্বচ্ছভাবে হয়েছিল বলে বার্তা দিতে চেয়েছেন সোশাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে। যা শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে ইঙ্গিতবাহী বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
যদিও এই পোস্টের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে ভিন্ন মতামতও রয়েছে। কেউ বাম আমলে হওয়া নির্দল কাউন্সিলর চৈতালী ভট্টাচার্যের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে যেমন নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। কেউ আবার সেই নিয়োগ নিয়ে নির্দল কাউন্সিলরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হয়ে জোরালো সওয়াল করেছেন। তাও আবার এমন একটা সময়ে যখন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে একের পর এক ভুয়ো চাকরি বাতিল হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। তাহলে কি শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে স্ত্রীর নিয়োগে স্বচ্ছতা বোঝাতেই এই তথ্য জুড়ে দিয়েছেন নির্দল কাউন্সিলরের স্বামী? নাকি, এর মাধ্যমে নিজের পুরনো দল তৃণমূলকে খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা? এমনই সব প্রশ্ন ঘিরে কার্যত সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার সদর শহর বারাসতের রাজনীতি।
যদিও এর সঙ্গে খোঁচা দেওয়ার কোনও বিষয় নেই বলে দাবি করেছেন নির্দল কাউন্সিলরের স্বামী সজল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "এক বছর আগে পৌরসভা নির্বাচনে 28 নম্বর ওয়ার্ড থেকেই তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দোলন বিশ্বাস। সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি তাঁরও চাকরি গিয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। আমার স্ত্রীর নিয়োগ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে হয়েছে। যারা আমার পোস্টের বিপরীতে কমেন্ট করছেন তাঁরা শুধু নিজেদের গায়ের জ্বালা মেটাতেই কাদা ছুড়েছে।"
আরও পড়ুন: দুয়ারে কাউন্সিলর ! অভাব-অভিযোগ শুনতে সাইকেলে চেপে পৌঁছে যাচ্ছেন মালদার রিমি
এদিকে, এই পোস্ট ঘিরে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। যিনি প্রাক্তন তৃণমূল নেতার স্ত্রীর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোশাল মিডিয়ায় কমেন্ট করেছিলেন, সেই 29 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি সমীর ঘোষ বলেন, "ওনার স্ত্রী বাম আমলে চাকরি পেলেও তার পিছনে কারও না কারও সুপারিশ রয়েছে। আমাদের একটাই কথা, কেউ অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি হবে। তার মানে এই নয় যে তিনিও ধোয়া তুলসী পাতা।" অন্যদিকে, এই ইস্যুতে প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই তৃণমূল নেতাকেই খোঁচা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই প্রসঙ্গে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "তৃণমূলে কেউ সৎ নন। যিনি পোস্ট করছেন। আর সেই পোস্টের প্রেক্ষিতে যিনি আবার মন্তব্য করছেন তাঁদের মধ্যে নিশ্চয় কিছু না-কিছু লেনদেনের ব্যাপার রয়েছে।"