স্বরূপনগর, 13 অগস্ট: ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া টিএমসিপি কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল ইছামতির খালপাড়ের কচুবন থেকে। মৃতের নাম উৎপল বিশ্বাস (24)। ওই টিএমসিপি কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনা ঘিরে শুক্রবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে উত্তর 24 পরগণার স্বরূপনগরে। পুলিশ রক্তাক্ত দেহটি উদ্বার করে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য । খুনের পিছনে রাজনৈতিক কোনও যোগ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে স্বরূপনগর থানার পুলিশ । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
স্বরূপনগরের বাঙলানি পঞ্চায়েতের খালপাড় এলাকায় বাড়ি উৎপল বিশ্বাসের । সে কলকাতার একটি বেসরকারি আইটিআই কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র । পাশাপাশি, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি কর্মী । করোনা আবহে পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে । সেই কারণে ইদানিং স্বরূপনগরের বাড়িতেই থাকছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া উৎপল । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন । এরপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি । পরিবারের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় উৎপলের সন্ধান করলেও হদিস মেলেনি । শুক্রবার সকালে বাড়ির অদূরে ইছামতি নদীর পাড়ে কচুবনে নিখোঁজ ওই টিএমসিপি কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় । স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে দেহ শনাক্ত করেন পরিবারের লোকেরা । পরে খবর পেয়ে বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্রের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী আসে ঘটনাস্থানে । রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের গলায় এবং মুখে গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে । তা দেখে পুলিশের অনুমান, তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে নিহতের মোবাইলও । মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। খুনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকাবাসী থেকে পরিবারের লোকেরা। মৃতের বাবা রতন বিশ্বাস বলেন, "ছেলের সঙ্গে কারোর শত্রুতা ছিল না। তা সত্বেও কেন খুন করা হল বুঝে উঠতে পারছি না। ছেলের বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশ কোনও তথ্য পেতে পারে। আমরা চাই খুনের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক ৷"
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, "উৎপল আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সবসময় লোকের আপদবিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ত সে । সেই সুবাদে অনেক বন্ধুর সংস্পর্শে এসেছিল । আমাদের সন্দেহ অন্য কোথাও খুন করে ওকে খালপাড়ের কচুবনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওর কাছের বন্ধুদের জেরা করলেই কোনও না কোনও সূত্র মিলতে পারে । আমরা চাই, পুলিশ ওর বন্ধুদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক। সেই সঙ্গে খুনিদেরও চিহ্নিত করে খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হোক ৷"
আরও পড়ুন: Tmc member murder : দুষ্কৃতীদের গুলি ও বোমায় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য খুন
খুনের ঘটনা সামনে আসতেই শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। স্বরূপনগর ব্লকের বিজেপি নেতা বৃন্দাবন সরকার বলেন, "তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে খুন, সন্ত্রাস শুরু হয়েছে । তার থেকে বাদ যায়নি স্বরূপনগরও। এর আগেও তেতুলিয়ার খালপাড় থেকে দেহ উদ্ধারের হয়েছিল। আবারও ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল সেখান থেকে। পুলিশ প্রশাসন কী করছে, সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের দাবি, পুলিশ প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে দেখুক । সেই সঙ্গে রাজ্যে শান্তি ফিরুক । অরাজকতা বন্ধ হোক ।