বারাসত, 28 ফেব্রুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে । ইতিমধ্যে এই মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বর্ণিত বাগদার 'সৎ রঞ্জন' ওরফে চন্দন মণ্ডল (Chandan Mondal)। এবার সৎ রঞ্জনের 'সৎ জামাই' অর্থাৎ জয়ন্ত দাসের (Jayanta Das) নিয়োগ নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন । সেই প্রশ্ন আরও উসকে দিয়েছে চন্দন মণ্ডলের জামাই জয়ন্তর অসংলগ্ন কথাবার্তা ! কখনও তিনি দাবি করেছেন, তাঁর শিক্ষক নিয়োগে কোনও অস্বচ্ছতা নেই । আবার পর মুহূর্তেই জয়ন্তর দাবি, তাঁর নিয়োগ বৈধ না অবৈধ তা আদালত বুঝবে । তিনি কিছু জানেন না । তাঁর এই রকমারি মন্তব্য থেকে অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে তাহলে বাগদার চন্দন মণ্ডলের জামাইয়ের নিয়োগ অসৎ উপায়ে হয়নি তো ? তাঁর এই শিক্ষক নিয়োগের পিছনে শ্বশুর মশাইয়ের হাত নেই তো কোনওভাবে ? যদিও যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে এ নিয়ে সরকারের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন 'সৎ জামাই' জয়ন্ত দাস ।
জানা গিয়েছে, 2009 সালে হাওড়া জেলা থেকে শিক্ষক নিয়োগের চাকরি পরীক্ষায় বসেছিলেন জয়ন্ত । কিন্তু তাঁর চাকরি হয় 2014 সালে । সেই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রথমে 17 জন চাকরিপ্রার্থী মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে । পরে আরও 78 জন অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে এই বিষয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । দ্বিতীয় মামলাটি আপাতত হাইকোর্টে বিচারাধীন । তবে, প্রথম মামলায় 17 জন মামলাকারীকেই সরকার চাকরি দিয়েছিলেন বলে দাবি চন্দনের জামাই জয়ন্ত দাসের । সেই নিরিখে তিনিও নিয়োগ পেয়েছিলেন । কিন্তু সরকার কেন চাকরি দিল এই 17 জনকে ? কেনই বা সরকারকে সেই পথে হাঁটতে হল ? এই বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি 'সৎ রঞ্জন'-এর জামাই ।
আরও পড়ুন : প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় চন্দন মণ্ডল ও উপেন বিশ্বাসকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
উলটে তিনি দাবি করেছেন, মামলা হলেও তাঁর নিয়োগ হয়েছে সৎভাবেই । আইনজীবী মারফত হাইকোর্টে সমস্ত তথ্য পেশ করার পরই তিনি নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন বলে দাবি জয়ন্ত দাসের । কিন্তু এরপরও তাঁর নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে । প্রথমত, এসসি কোটায় চাকরির আবেদন করার পরও কীভাবে সৎ রঞ্জনের জামাই জয়ন্তর চাকরি হল জেনারেল কোটায় ? দ্বিতীয়ত, চাকরি পাওয়ার তিন বছরের মাথায় কোন জাদুবলে তিনি বদলি হলেন উত্তর 24 পরগনা জেলায় ? তাহলে কি দুটি ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী কারোর হাত ছিল ? যে কারণে তিনি চাকরি এবং বদলি দুটোই করিয়ে নিতে পেরেছিলেন খুব সহজেই ? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সৎ রঞ্জনের 'সৎ জামাই'-এর নিয়োগ ঘিরে !
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জয়ন্ত দাস নিজেই । তাঁর দাবি, 2009 সালে তিনি যখন এসসি কোটায় চাকরির আবেদন করেন, তখন তাঁর কাছে এসসি শংসাপত্র ছিল না । 2011 সালে এসসি শংসাপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি তা জমাও দেন । কিন্তু 2014 সালে এসসি কোটার পরিবর্তে তাঁর চাকরি হয় জেনারেল কোটায় । তাঁর বক্তব্য, "সরকার যদি ভুল করে জেনারেল কোটায় চাকরি দেয় তাহলে আমি কী করতে পারি ?"
আরও পড়ুন : 'অযোগ্যদের সকলের চাকরি গেলে গ্রামে হাহাকার পড়ে যাবে !' বলছেন চন্দনের পড়শিরা
এদিকে হাওড়ার একটি স্কুলে চাকরি পাওয়া জয়ন্ত আপাতত ডেপুটেশনে বারাসত প্যারীচরণ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন । প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে রয়েছেন তিনি । সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে জয়ন্ত দাস বলেন, "প্রথমে হরিতলা মোড়ের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করলেও পরে ডেপুটেশনে যোগ দিই এই স্কুলে । যেহেতু এই স্কুলে শিক্ষকের অভাব সেই কারণে আমাকে পাঠানো হয় প্যারীচরণ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । 2017 সালে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা থাকার কারণে বদলির আপিল করি উত্তর 24 পরগনায় ৷ সেই সময় শিক্ষা দফতরের পদ্ধতি মেনেই বদলি হয় ৷"
অন্যদিকে, শ্বশুরমশাই চন্দন মণ্ডলের নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন জামাই । এই বিষয়ে জয়ন্ত বলেন, "তিনি কোথায় কী করেছেন তা জানা নেই আমার । সবটাই সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি । যেহেতু আমি ওনার (চন্দন মণ্ডল) জামাই । সেহেতু এখন আমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হচ্ছে । ওনার অনৈতিক কাজকর্মের দায় আমি কেন নিতে যাব ? কেন সিবিআইয়ের মুখোমুখি হব ? টাকা দিয়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না । আমি আমার যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি । এতে ওনার কোনও হাত নেই ।"
আরও পড়ুন : চন্দনের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল পার্থ-প্রসন্নদের, দাবি সিবিআইয়ের