আমডাঙা, 24 নভেম্বর: তৃণমূল নেতা খুনে লাগাতার বিক্ষোভ এবং আন্দোলন । এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল খুনের আট দিনের মাথায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল উত্তর 24 পরগনার আমডাঙা থানার পুলিশ । ধৃতের নাম আলমগীর শেখ ওরফে আফতাব ।
শুক্রবার ভোরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের ডোমকল থেকে গ্রেফতার করা হয় পলাতক এই দুষ্কৃতীকে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় যে চারজনের বিরুদ্ধে আমডাঙা থানায় এফআইআর হয়েছিল, তার মধ্যে দু-নম্বরে নাম ছিল আলমগীর শেখের ।
এর আগে এই খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ নাম থাকা আনোয়ার হোসেন মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ । এবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল আলমগীর শেখ নামে আরেক অভিযুক্ত । তবে, তৃণমূল নেতা খুনে মূল অভিযুক্ত তোয়েব আলি মণ্ডল এবং পাপ্পু নামে আরও দুই অভিযুক্ত এখনও পলাতক । তাঁদের হদিস পেতে কোমর বেঁধে নেমেছে তদন্তকারী অফিসারেরা ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আলমগীর শেখের পৈতৃক বাড়ি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে । সেখানকার বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে । বিশেষত এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোমাবাজির ঘটনা । দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল আলমগীর শেখকে । যদিও তাঁর হদিস মেলেনি । তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডল খুনে ফের তাঁর উঠে আসায় ঘটনার পরপরই গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য আলমগীর বেছে নেন মুর্শিদাবাদ জেলাকেই । এর কারণ অবশ্যই সীমান্তবর্তী জেলা । ফলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ডোমকল হয়ে ভারতের সীমান্ত পার হয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালানোর ছক ছিল আফতাব শেখের । কিন্তু তার আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ ।
সূত্রের খবর, যে কোনও ধরনের বোমা তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এই আলমগীর । পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমডাঙা-সহ সন্নিহিত এলাকায় বোমা উদ্ধার ও বোমাবাজির ঘটনায় তাঁর হাত রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের । এমনকি, তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডল খুনে যে বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল সেই বোমা প্রস্তুত করেছিলেন ধৃত আলমগীর শেখ । তাঁকে জেরা করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে ।
সূত্র মারফত আরও জানা যাচ্ছে, আলমগীরের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদে হলেও তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে আমডাঙার সোনাডাঙায় থাকছিলেন পরিবার নিয়ে । সেখানে মুরগির খাঁচা তৈরি করতেন তিনি । সেই কারণে সোনাডাঙা এলাকায় তিনি খাঁচাওয়ালা আফতাব নামেও পরিচিত ছিল । ধৃতকে জেরা করে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ 17 নভেম্বর কামদেবপুর হাট সংলগ্ন এলাকাতেই উপস্থিত ছিলেন এই আফতাব শেখ । এর পরপরই জনবহুল সেই এলাকাতে বোমা মেরে খুন করা হয় আমডাঙার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলকে । ফলে, তৃণমূল নেতা খুনে আলমগীর শেখ-ও যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা নিয়ে কোনও সন্দেহ-ই নেই পুলিশের ।
এদিকে, ধৃত আলমগীর শেখের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া আরেক অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন মণ্ডলকে মুখোমুখি বসিয়ে এই খুনের কিনারা করতে চাইছে আমডাঙা থানার পুলিশ । সেই কারণে ধৃত আলমগীর শেখকে নিজেদের হেফাজতে নিতে শুক্রবার দুপুরে তাঁকে বারাসত জেলা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ ।
আরও পড়ুন: