কলকাতা, 7 জুলাই : শুরুটা হয়েছিল লুচি-আলুরদমকে কেন্দ্র করে । ক্লাইম্যাক্স যেন নৈশভোজে । আজকের মেনু পরোটা-আলুমটর ।
সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে যখন ঘাসফুলের অন্দরে গুঞ্জন বাড়ছে তখনই তাঁর সঙ্গে ফের দেখা করলেন মুকুল রায় । রবিবাসরীয় রাতে সব্যসাচী-মুকুলের এই সাক্ষাৎ ঘিরে বাংলার রাজনীতিতে এখন নতুন মাত্রা । সমালোচকরা বলছেন, সব্যসাচীর BJP যাত্রা নাকি শুধু সময়ের অপেক্ষা । আবার কারও মতে সব্যসাচীর তৃণমূল থেকে বহিষ্কারও নাকি এখন সময়ের অপেক্ষা ।
আজ যখন সব্যসাচীকে নিয়ে জল্পনার পারদ চড়ছে তখনই সল্টলেকের এক ক্লাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন মুকুল রায় । বৈঠকের পর মুকুল রায়ের দাবি, দাদা হিসেবে নাকি বিধাননগরের মেয়রকে পরামর্শ দিতে এসেছিলেন । আর সব্যসাচীর গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তাঁর বক্তব্য, কিছু জরুরি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে ।
বৈঠকের পর সব্যসাচীর BJP-তে যোগদানের বিষয়ে জল্পনা উস্কেও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মুকুল । বাংলার রাজনীতিতে 'চাণক্য' বলে যিনি এই মুহূর্তে বহুল চর্চিত সেই মুকুল রায়ের বক্তব্য, "আগে সব্যসাচী BJP-তে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করুক । তারপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে ।" স্বাভাবিকভাবেই আজও মমতাকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি তাঁর এক সময়ের ছায়াসঙ্গী । দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি আদৌ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুকুল ।
বেশ কিছুদিন ধরেই সব্যসাচী দত্তের ভূমিকা নিয়ে দলের অন্দরেই গুঞ্জন বাড়ছিল । মাঝে শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি BJP-তে যাচ্ছেন । কিন্তু তারপর নিজেই সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জানিয়েছিলেন তৃণমূলে আছেন, থাকবেন । কিন্তু তারপর থেকে দলবিরোধী কার্যকলাপ, দলবিরোধী মন্তব্য কিছুই থামেনি তাঁর । পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়েছিল যে আজ বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম । বৈঠকে ডাকা হয়নি মেয়র সব্যসাচী দত্তকে । আবার বৈঠকে যোগ দিতে আসা কাউন্সিলররা দাবি করেছিলেন সব্যসাচী দলে থাকলে তাঁরা কাজ করবেন না । আর বির্তক যখন চরমে, তখনই সব্যসাচীর পাশে থাকার বার্তা দেন মুকুল রায় । সকালবেলায় জানিয়েছিলেন লোকসভা ভোটে সব্যসাচীর ভূমিকা BJP-কে সাহায্য করেছে ।
কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে তেমনভাবে কিছু বলতে চাননি ফিরহাদ । কেবল জানিয়েছিলেন সব্যসাচীর বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেবে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি । যখন সব্যসাচীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে তখনই তাঁর পাশে দাঁড়ালেন মুকুল রায় । যেভাবে আজই সব্যসাচী-মুকুল বৈঠক হল তাতে নিঃসন্দেহে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত মিলতে শুরু করল । যদিও দল ছাড়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বললেননি বিধাননগরের মেয়র । মুকুল রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সব্যসাচীর কেবল সাফাই, "ক্লাবে অতিথি হিসেবে এসেছেন তিনি । মুকুলদা ভেবেছিলেন আমি সমস্যায় আছি তাই কথা বলতে আসেন ।" পাশাপাশি আইনজীবীদের সঙ্গেও তিনি যে কথা বলছেন তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন সব্যসাচী ।
তবে আজকের এই পরোটা-আলুমটরের নৈশভোজ বাংলার রাজনীতিতে যে অন্য স্বাদ আনতে চলেছে তা যেন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ।