গোবরডাঙা, 27 মে : বাবা বিদেশে ঠিকাশ্রমিকের কাজ করেন । সেলাইয়ের কাজ করে সংসারকে আরও একটু স্বচ্ছল করতে চান মা লিপিকা মণ্ডল । গোবরডাঙায় ভাড়াবাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকে মৃণ্ময় । আর পাঁচজনের মতো বিষয়ভিত্তিক কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না মৃণ্ময়ের । ভরসা বলতে শুধুমাত্র স্কুলের শিক্ষক, তাও বিষয় প্রতি একজন । এই প্রতিকূলতার মধ্যেই 494 নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে গোবরডাঙার মৃণ্ময় মণ্ডল ।
গোবরডাঙা খাঁটুরা হাইস্কুলের ছাত্র মৃণ্ময়। আদি বাড়ি স্বরূপনগর পুবালির নিমতালায়। তার প্রাপ্ত নম্বর পদার্থবিদ্যায় 99, গণিতে 99, রসায়নে 100, জীববিদ্যায় 99, ইংরেজি 97 ও বাংলায় 82 । এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মৃণ্ময় বলে, "এইরকম রেজ়াল্ট আশা করিনি । খুব ভালো লাগছে । তবে আমার মনে হয় ভয় না পেয়ে পড়া ভালো ।" গৃহশিক্ষকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মৃণ্ময় বলে, "কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না । স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়েছি । সব বিষয়ে একজন করে ছিলেন । শিক্ষকরা অর্থনৈতিকভাবেও সাহায্য করেছেন।"
মৃণ্ময় আরও বলে "এই সাফল্যের জন্য প্রথম মাকে কৃতজ্ঞতা জানাই । একটি বাড়িতে মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতাম । সবসময় পাশে ছিল মা। বন্ধু ও শিক্ষকদেরও কৃতজ্ঞতা জানাই । " আদর্শ কে ? মৃণ্ময়ের উত্তর, আমার আদর্শ মা । গ্রামের স্কুল ছেড়ে নিজে ঝুঁকি নিয়ে মা এখানে পড়ানোর জন্য এনেছিলেন । ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়তে চাই । কারণ বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগে । ভালো ডাক্তার হয়ে গরিবদের চিকিৎসা করতে চাই ।"
সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে কী ধারণা ? মৃণ্ময় বলে, "রাজনীতি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই আর ছিলও না । বিদ্যাসাগর তোমার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে, কলকাতায় সেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে ছাত্র হিসেবে এনিয়ে কী বলবে "মূর্তি ভেঙে যদি কারোর লাভ হয়ে থাকে হবে। আমার তো মনে হয় মূর্তি ভেঙে কোনও লাভ হয় না। শুধু রাগ দেখানো যায় আর কিছু হয় না । যার প্রাণ নেই তা ভেঙে কী হবে । মূর্তি নয় সম্মান ভাঙা হয়।"