দেগঙ্গা, 28 এপ্রিল : এলাকার কোয়ারানটিন সেন্টারে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের রাখাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ দেখাল স্থানীয়রা । ঘটনাটি উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার । কোয়ারানটিন সেন্টারে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের রাখা নিয়ে আজ সকাল থেকে দফায় দফায় গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখায় । এমন কী, বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন তালা ভেঙে সেন্টারের ভিতরে ঢোকারও চেষ্টা করে । পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থানে পুলিশে ও RAF নামানো হয় । তবে, গ্রামবাসীরা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়, যতক্ষণ না জনবহুল এলাকা থেকে কোয়ারানটিন সেন্টার ও শ্রমিকদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে,ততক্ষণ বিক্ষোভ চলবে । পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেয় গ্রামবাসীরা । তারপরই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি ।
দেগঙ্গা ব্লকের চাপাতলা পঞ্চায়েতের খড়ুয়া চাঁদপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোয়ারানটিন সেন্টার করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে । সেখানেই এদিন সকালে কয়েকজন ভিনরাজ্যের শ্রমিককে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা । এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই খড়ুয়া চাঁদপুর গ্রামের মানুষ কোয়ারানটিন সেন্টারের সামনে প্রতিবাদ জানায় । গ্রামবাসীদের দাবি, জনবহুল এলাকায় বাইরে থেকে লোক এনে রাখা যাবে না । দেগঙ্গার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরি বলেন, "এলাকার লোকজন প্রথমে আপত্তি তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । পরে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ।"
স্থানীয় সুত্রে খবর, অশোকনগর ও দত্তপুকুর থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি কারখানা রয়েছে । সেখানে বিহার, অসম ও এই রাজ্যের মালদার প্রায় 20জন শ্রমিক কাজ করেন । এর মধ্যে মালদার কালিয়াচকের একজন শ্রমিক বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন । অসুস্থ শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে কালিয়াচক থানার পুলিশ জানতে পারে, তিনি অশোকনগরের বালিসার এলাকার কারখানায় কাজ করতেন । এরপরই কালিয়াচক থানার পুলিশ যোগাযোগ করেন অশোকনগর ও দত্তপুকুর থানার পুলিশের সঙ্গে । গতকাল রাতেই বালিসার এলাকার ওই কারখানায় যায় পুলিশ । আজ সকালে সেখান থেকে ওই 20জন শ্রমিককে দেগঙ্গার এই কোয়ারানটিন সেন্টারে নিয়ে আসা হয় । সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ওই কোয়ারানটিন সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে গ্রামবাসীরা । কয়েকজন গ্রামবাসী সেন্টারের তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ । ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে থাকে ।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থানে আসে দেগঙ্গা থানার পুলিশ । নামাতে হয় RAF-ও । তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে । কিন্তু, গ্রামবাসীরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, জনবহুল এলাকায় ওই কোয়ারানটিন সেন্টার করা যাবে না । রাখা যাবে না ভিনরাজ্যের শ্রমিকদেরও । শেষে, দুপুর আড়াইটা নাগাদ কোয়ারানটিন সেন্টারে আসে দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক অনির্বাণ সাহা । তিনি ওই 20জন শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, তারা সকলে সুস্থ আছে । চিকিৎসকের কথা শোনার পরই শান্ত হয় গ্রামবাসীরা । মোমিন মণ্ডল ও দীপঙ্কর অধিকারী নামে দুই শ্রমিক বলেন, "মালদার কালিয়াচকের ওই শ্রমিকের ম্যালেরিয়া হয়েছিল । কোরোনায় আক্রান্ত হয়নি বলেই আমরা জেনেছি । তারপরও পুলিশ আমাদের ওখানে গিয়ে বলে আসে কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকতে হবে ।"
এবিষয়ে দেগঙ্গার BDO সুব্রত মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ভিন রাজ্যের কয়েকজন শ্রমিককে কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা হয়েছে জেনেই স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখায় । তাদের অন্য জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে ।"