ETV Bharat / state

Panchayat Elections 2023: বাম থেকে তৃণমূলেও 'শাসন আছে শাসনেই', আবারও বিরোধী-শূন্য ভেড়ি এলাকার পঞ্চায়েত

শাসনে ফের বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত ৷ জানা গিয়েছে, সেখানে কোনও বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন তুলতে পারেননি ৷ অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের শাসানি ও ভয় দেখানোর জেরে মনোনয়ন তোলা থেকে বিরত থেকেছেন বিরোধীরা ৷

author img

By

Published : Jun 20, 2023, 12:58 PM IST

Panchayat Elections 2023 ETV Bharat
Panchayat Elections 2023
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসন পঞ্চায়েতের দখল তৃণমূলের

শাসন, 20 জুন: 'শাসন আছে শাসনেই', বহু চর্চিত এই শব্দবন্ধগুলি প্রযোজ‍্য ভোট-রাজনীতির ক্ষেত্রেও ৷ তা না হলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শাসন পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য হতে পারে না ৷ 2013 সাল থেকে 2023, পরপর তিনটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও মনোনয়নই দাখিল করতে পারল না বিরোধী দলগুলি ৷ যার জেরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসন পঞ্চায়েতে জয়ের হ্যাটট্রিক বজায় রইল তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ তবে, বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে নারাজ বিরোধী শিবির ৷ শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ অন্যান্যরা ৷ বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত আসলে 'গণতন্ত্রের হত্যা' বলেই মনে করছে তারা ৷ যদিও, বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তৃণমূল ৷

বাংলার রাজনীতিতে শাসন বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে ৷ তা বাম আমল হোক কিংবা পরিবর্তনের পর তৃণমূল জমানায় ! এর মূলে অবশ্য রয়েছে ভেড়ি দখলের রাজনীতি ৷ কারণ, শাসন অঞ্চলজুড়ে বিঘার পর বিঘা ভেড়ি রয়েছে ৷ যেখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে ৷ বলাই বাহুল্য, শাসনের রাজনীতি আবর্তিত হয় ভেড়িকে কেন্দ্র করেই ৷ যে যখন রাজ‍্যপাটে থাকে, তখনই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকে তার হাতে ৷ লোকমুখে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে ‘‘ভেড়ি যার, শাসন তার ৷’’

একসময় বাম আমলে বিঘার পর বিঘা এই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ হত শাসনের তৎকালীন বেতাজ বাদশা তথা সিপিএমের দাপুটে নেতা মজিদ মাস্টারের হাত ধরে‌ ৷ অভিযোগ, তখনও সিপিএমের সন্ত্রাসে বিরোধীদল তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে মনোনয়ন তোলার সাহস দেখাতে পারেনি ৷ একচেটিয়া ভোট করে শাসন পঞ্চায়েত-সহ বারাসত 2 নম্বর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের দখল নিত তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিএম ৷ এরপর শাসন দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে ৷ রাজ‍্যে শাসক দলের পরিবর্তন হয়েছে ৷ তবু, তৃণমূলের জমানাতেও বদলায়নি শাসনের ভোট ছবি ৷ মনোনয়ন তুলতে বাধা, হুমকি, সন্ত্রাস, বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত ৷ সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে ৷

আরও পড়ুন: আগে সুষ্ঠু ভোট পরে মিষ্টি, তৃণমূল প্রার্থীর সৌজন্যে 'না' বিজেপি প্রার্থীর

প্রশাসন সূত্রে খবর, শাসন পঞ্চায়েতে এ বছর আসন সংখ্যা বেড়ে 29 হয়েছে ৷ এর একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ 2013 ও 2018 সালে পঞ্চায়েতের 22টি আসনে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি বিরোধীদের থেকে ৷ সেবারও শাসন পঞ্চায়েত এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ৷ ফলে, পরপর তিনবার এই পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য করে জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ল শাসকদল ৷ শুধু শাসনের কথা বললেই ভুল হবে ৷ হাড়োয়ার বকজুড়ি এবং মিনাখাঁ ব্লকের আটপুকুর পঞ্চায়েতও বিরোধী-শূন্য হতে চলেছে ৷ এই পঞ্চায়েতের 41টি আসনের একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ ইতিমধ্যে উত্তর 24 পরগনার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের আসন শাসকদলের ঝুলিতে এসেছে বলে জানা গিয়েছে ৷ যা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷

আরও পড়ুন: প্রথমবার পঞ্চায়েতে মহিলা পরিচালিত 'পিংক বুথ', জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন

শাসন-সহ জেলার একাধিক পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য হতে চলায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিরোধীরা ৷ এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান বলেন, "ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শাসন অঞ্চলে বোমা-বন্দুকের রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল ৷ ওখানে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখা হয়েছে ৷ 2021 সালের বিধানসভা ভোটে শাসন পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এগিয়ে ছিল বিরোধীরা ৷ ফলে, শাসকদল বুঝতে পেরেছে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে এই পঞ্চায়েতে তাদের পরাজয় নিশ্চিত ৷ সেই কারণে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধীদলকে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে ৷ এর দায় তৃণমূল সরকারকেই নিতে হবে ৷"

আরও পড়ুন: হাইজ্যাক আতঙ্ক, প্রার্থীদের গোপন ডেরায় রাখল বিজেপি !

একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্রের গলাতেও ৷ তাঁর কথায়, "শাসন, ভাঙড়, হাড়োয়া এই এলাকাগুলি এখন দুর্বৃত্তদের মুক্তাঞ্চল ৷ সেখানে দুষ্কৃতীরাজ কায়েম করেছে তৃণমূল সরকার ৷ যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে শাসকদল বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত তৈরি করছে, তা লজ্জার ৷ এরাজ্যে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে হলে 356 ধারা (রাষ্ট্রপতি শাসন) জারি করতেই হবে ৷ এছাড়া আর কোনও রাস্তা দেখছি না আমরা ৷"

অন‍্যদিকে, বিক্ষিপ্ত হিংসার কথা স্বীকার করে নিয়েও, শাসন পঞ্চায়েতে মনোনয়ন তুলতে না পারার দায় বিরোধীদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী ৷ তিনি বলেন, "যে সমস্ত জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়ন তুলতে পারেনি, সেখানে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে ৷ সেই কারণে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি বিরোধীরা ৷ আমরা তো আর প্রার্থী খুঁজে দেব না বিরোধীদের ৷ তার পরেও বলব বহু জায়গায় তৃণমূলের থেকে মনোনয়ন বেশি তুলেছে বিরোধী দলগুলি ৷"

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসন পঞ্চায়েতের দখল তৃণমূলের

শাসন, 20 জুন: 'শাসন আছে শাসনেই', বহু চর্চিত এই শব্দবন্ধগুলি প্রযোজ‍্য ভোট-রাজনীতির ক্ষেত্রেও ৷ তা না হলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শাসন পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য হতে পারে না ৷ 2013 সাল থেকে 2023, পরপর তিনটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও মনোনয়নই দাখিল করতে পারল না বিরোধী দলগুলি ৷ যার জেরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসন পঞ্চায়েতে জয়ের হ্যাটট্রিক বজায় রইল তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ তবে, বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে নারাজ বিরোধী শিবির ৷ শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ অন্যান্যরা ৷ বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত আসলে 'গণতন্ত্রের হত্যা' বলেই মনে করছে তারা ৷ যদিও, বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তৃণমূল ৷

বাংলার রাজনীতিতে শাসন বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে ৷ তা বাম আমল হোক কিংবা পরিবর্তনের পর তৃণমূল জমানায় ! এর মূলে অবশ্য রয়েছে ভেড়ি দখলের রাজনীতি ৷ কারণ, শাসন অঞ্চলজুড়ে বিঘার পর বিঘা ভেড়ি রয়েছে ৷ যেখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে ৷ বলাই বাহুল্য, শাসনের রাজনীতি আবর্তিত হয় ভেড়িকে কেন্দ্র করেই ৷ যে যখন রাজ‍্যপাটে থাকে, তখনই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকে তার হাতে ৷ লোকমুখে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে ‘‘ভেড়ি যার, শাসন তার ৷’’

একসময় বাম আমলে বিঘার পর বিঘা এই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ হত শাসনের তৎকালীন বেতাজ বাদশা তথা সিপিএমের দাপুটে নেতা মজিদ মাস্টারের হাত ধরে‌ ৷ অভিযোগ, তখনও সিপিএমের সন্ত্রাসে বিরোধীদল তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে মনোনয়ন তোলার সাহস দেখাতে পারেনি ৷ একচেটিয়া ভোট করে শাসন পঞ্চায়েত-সহ বারাসত 2 নম্বর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের দখল নিত তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিএম ৷ এরপর শাসন দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে ৷ রাজ‍্যে শাসক দলের পরিবর্তন হয়েছে ৷ তবু, তৃণমূলের জমানাতেও বদলায়নি শাসনের ভোট ছবি ৷ মনোনয়ন তুলতে বাধা, হুমকি, সন্ত্রাস, বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত ৷ সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে ৷

আরও পড়ুন: আগে সুষ্ঠু ভোট পরে মিষ্টি, তৃণমূল প্রার্থীর সৌজন্যে 'না' বিজেপি প্রার্থীর

প্রশাসন সূত্রে খবর, শাসন পঞ্চায়েতে এ বছর আসন সংখ্যা বেড়ে 29 হয়েছে ৷ এর একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ 2013 ও 2018 সালে পঞ্চায়েতের 22টি আসনে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি বিরোধীদের থেকে ৷ সেবারও শাসন পঞ্চায়েত এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ৷ ফলে, পরপর তিনবার এই পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য করে জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ল শাসকদল ৷ শুধু শাসনের কথা বললেই ভুল হবে ৷ হাড়োয়ার বকজুড়ি এবং মিনাখাঁ ব্লকের আটপুকুর পঞ্চায়েতও বিরোধী-শূন্য হতে চলেছে ৷ এই পঞ্চায়েতের 41টি আসনের একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ ইতিমধ্যে উত্তর 24 পরগনার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের আসন শাসকদলের ঝুলিতে এসেছে বলে জানা গিয়েছে ৷ যা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷

আরও পড়ুন: প্রথমবার পঞ্চায়েতে মহিলা পরিচালিত 'পিংক বুথ', জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন

শাসন-সহ জেলার একাধিক পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য হতে চলায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিরোধীরা ৷ এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান বলেন, "ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শাসন অঞ্চলে বোমা-বন্দুকের রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল ৷ ওখানে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখা হয়েছে ৷ 2021 সালের বিধানসভা ভোটে শাসন পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এগিয়ে ছিল বিরোধীরা ৷ ফলে, শাসকদল বুঝতে পেরেছে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে এই পঞ্চায়েতে তাদের পরাজয় নিশ্চিত ৷ সেই কারণে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধীদলকে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে ৷ এর দায় তৃণমূল সরকারকেই নিতে হবে ৷"

আরও পড়ুন: হাইজ্যাক আতঙ্ক, প্রার্থীদের গোপন ডেরায় রাখল বিজেপি !

একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্রের গলাতেও ৷ তাঁর কথায়, "শাসন, ভাঙড়, হাড়োয়া এই এলাকাগুলি এখন দুর্বৃত্তদের মুক্তাঞ্চল ৷ সেখানে দুষ্কৃতীরাজ কায়েম করেছে তৃণমূল সরকার ৷ যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে শাসকদল বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত তৈরি করছে, তা লজ্জার ৷ এরাজ্যে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে হলে 356 ধারা (রাষ্ট্রপতি শাসন) জারি করতেই হবে ৷ এছাড়া আর কোনও রাস্তা দেখছি না আমরা ৷"

অন‍্যদিকে, বিক্ষিপ্ত হিংসার কথা স্বীকার করে নিয়েও, শাসন পঞ্চায়েতে মনোনয়ন তুলতে না পারার দায় বিরোধীদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী ৷ তিনি বলেন, "যে সমস্ত জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়ন তুলতে পারেনি, সেখানে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে ৷ সেই কারণে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি বিরোধীরা ৷ আমরা তো আর প্রার্থী খুঁজে দেব না বিরোধীদের ৷ তার পরেও বলব বহু জায়গায় তৃণমূলের থেকে মনোনয়ন বেশি তুলেছে বিরোধী দলগুলি ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.