বারাসত, 29 এপ্রিল: 'রাজ্যপাল কি ভাবছেন সেটা ওনার ব্যাপার। আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা মেনে নিলেই হল।' 'আচার্য' বিল নিয়ে এখনও রাজ্যপালের সবুজ সংকেত না মেলায় এভাবেই তাঁর দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ও দলের জাতীয় মুখপাত্র কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সেই সঙ্গে রাজ্যপাল রাজ্য়ের বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য বিলে সই না করে অযথা এই বিষয়ে সময় নিচ্ছেন বলেও মনে করেন শাসকদলের এই সাংসদ।
শনিবার কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন,"বিলে সই করতে বাধ্য তিনি (রাজ্যপাল)। হয়তো উনি একটু চিন্তাভাবনা করছেন। সেটা উনি করুন। কিন্তু, সকলেই চাইছেন রাজ্যপালের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হোন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরাও সেটাই চাইছি ৷" প্রসঙ্গত,'আচার্য' বিল নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত চরমে উঠেছে। এই বিল বিধানসভায় বিল পাশ হওয়ার পরও তা আটকে রয়েছে রাজভবনে। দীর্ঘদিন ধরেই বিলে সই করার জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে আবেদন নিবেদন করা হচ্ছে সরকারের তরফে।
সেই সঙ্গে রাজভবনের ওপর পালটা চাপ তৈরির কৌশলও নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার দাবিতে পথে নেমেছে দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। শুরু হয়েছে গণস্বাক্ষর অভিযানও। শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠন আবার এক কদম এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার সমর্থনে হোর্ডিং, ব্যানার দিয়ে ছেয়ে দিয়েছে মহানগরী। যদিও এতকিছুর পরও 'আচার্য' বিল কিন্তু আটকে রয়েছে সেই রাজভবনেই। সম্প্রতি এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, "আচার্য বিলে অবিলম্বে সই করুন রাজ্যপাল। তা না হলে তা ফেরত পাঠান ৷" এভাবে বিল সই না করে আটকে রাখা সমীচীন নয় বলেও দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তারই উত্তর দিতে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, "আচার্য বিল নিয়ে যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷" তবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে রাজভবন তা অবশ্য খোলসা করেননি রাজ্যপাল। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শনিবার নাম না করে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এদিন দুপুরে বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যোগ দিতে আসেন সমিতির চেয়ারম্যান তথা সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বৈঠকে হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডল, তৃণমূলের চিকিৎসক কাউন্সিলর বিবর্তন সাহা-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক হাজির ছিলেন।
বৈঠকে হাসপাতালের উন্নয়ন সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। এরপরই ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে আচার্য বিল নিয়ে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার স্পষ্ট জানান,"যে কোনও বিল ফেরত পাঠাতেই পারেন উনি। তবে প্রথমবার বিল ফেরত পাঠালেও দ্বিতীয়বার সেই বিলে সই করতে বাধ্য তিনি। তাছাড়া বিল লাগু করার অন্য সংস্থানও রয়েছে। হয়তো উনি চিন্তাভাবনা করে এগোতে চাইছেন। সেটা ওনার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীকে মেনে নিলেই হল ৷" অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণের পালটা জবাব দিয়ে কাকলি বলেন,"যাঁরা এ রাজ্যে উন্নয়ন চোখে দেখতে পায়না, তাঁরাই শুধু মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করে। পরিবারবাদ নিয়ে কোনও কথা ওনার মুখে শোভা পায়না। কারণ, ওনার কাছ থেকেই পরিবারবাদ শিখছে ভারতবর্ষের মানুষ ৷"
আরও পড়ুন: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হতাশ চাকরিপ্রাপকরা