মধ্যমগ্রাম, 8 জানুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড, তৃণমূলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহান কোথায় ? এই প্রশ্নই যখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে, তখন এনিয়ে প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারিয়ে ফেললেন দলের বর্ষীয়ান নেতা ও কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি মন্ত্রীর দাবি, এমন 'জনবিস্ফোরণ' আরও হবে ৷ কার্যত সন্দেশখালির ঘটনাকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, "এখন বাংলার একটা জায়গায় জনবিস্ফোরণ হয়েছে ৷ এরপর গোটা দেশে এই জনবিস্ফোরণ ঘটবে ৷"
সোমবার উত্তর 24 পরগনা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে মধ্যমগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে আসেন শাসকদলের এই প্রবীণ নেতা।মূলত লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে একসূত্রে বাঁধতে এবং সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতেই এদিন বৈঠকে বসে মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত এই কোর কমিটি। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ-সহ কোর কমিটির অধিকাংশ সদস্যই হাজির ছিলেন এদিনের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। তবে, বৈঠকে গরহাজির ছিলেন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য জেলাপরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, মন্ত্রী রথীন ঘোষ, সুজিত বোস-সহ আরও কয়েকজন। যাঁরা আবার লোকসভা ভিত্তিক দায়িত্বেও রয়েছেন দলের তরফে। তাঁদের অনুপস্থিতি ঘিরে রীতিমতো অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, সকলকে চমকে দিয়ে এদিনের কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের যুযুধান দুই তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং ও সোমনাথ শ্যাম উভয়ই। দু'জনকেই এদিন দেখা গিয়েছে মুখোমুখি বসতে। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে লোকসভা নির্বাচন কিভাবে পরিচালনা করা হবে, কোথায় কী করণীয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যদিও শেখ শাহজাহানের প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই খবর দলীয় সূত্র মারফত। এবিষয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেবেন বলে বৈঠক শেষে জানান দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। স্বভাবতই শেখ শাহজাহানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোথাও না কোথাও দোটানায় রয়েছে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটি। সেই ইঙ্গিতই মিলেছে সাংসদ সৌগত রায়ের কথাতে।
যদিও এসবের কোনও ধার ধারেননি দলের আরেক প্রবীণ নেতা, মমতার মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরোক্ষে তিনি শেখ শাহজাহানের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শোভনদেবের কথায়, "দেশের যে সমস্ত জায়গায় বিজেপি ক্ষমতায় নেই।সেখানেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি (ইডি) যাচ্ছে। দুর্নীতি খুঁজে পাচ্ছে। অথচ, বিজেপি শাসিত রাজ্যে তাঁরা দুর্নীতি দেখতে পাচ্ছে না। তাই, ইডি বলে নয়!কেন্দ্রীয় এজেন্সির অন্যান্য শাখা যেখানেই যাবে, সেখানেই জনবিস্ফোরণ ঘটবে ৷"
তিনি বলেন, "ওদের (বিজেপির) সিবিআই আছে। ইনকাম ট্যাক্স আছে। তেমনই, আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। আমাদের এই লড়াইটা চলতেই থাকবে। ওদের গণসংগঠন নেই, ওদের কেবলমাত্র গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য এজেন্সি আছে। এই গণতান্ত্রিক সংগঠন দিয়ে আগামীদিনে বিজেপিকে মোকাবিলা করব আমরা ৷" এরপরই শেখ শাহজাহান কোথায়, সেই প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারিয়ে শোভনদেব বলেন, "শেখ শাহজাহান নেই তো কী হয়েছে! তাঁর তো দাদু আছে। আদানি, আম্বানি আছে। আজকে ক্যাগ রিপোর্ট বলছে মোদি সরকারের আমলে কেন্দ্রে 5.7 লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। শাহজাহান কে ? শাহজাহান ধোপে টেকে না এদের কাছে। এসব কথা জিজ্ঞেসা করবেন না। বরং জিজ্ঞাসা করুন কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকার দুর্নীতি করেছে ৷" তাঁর মতে, "আইন আইনের মতো করে চলবে ৷"
আরও পড়ুন: