মধ্যমগ্রাম, 30 অগস্ট : করোনা আবহে বন্ধ রয়েছে লোকনাথ ধামের দু'টি মন্দির । প্রশাসনের নির্দেশে সেকথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল মন্দির কমিটির তরফে । কিন্তু তারপরও নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে লোকনাথ বাবার জন্ম উৎসবে জল ঢালার জন্য কচুয়া এবং চাকলার মন্দিরে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে পুণ্যার্থীদের একাংশের মধ্যে । রাত থেকেই ভিড় বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে । আগত পুণ্যার্থীদের রাস্তা থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷ গোটা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করেন খোদ বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ।সঙ্গে ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুরও । লোকনাথের মাথায় জল ঢালতে না পেরে মন খারাপ বিশেরভাগ পুণ্যার্থীর ৷ অনেকেরই অভিযোগ, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে প্রচারিত হলে হয়তো এভাবে সমস্যায় পড়তে হতো না । কোথাও একটা বিভ্রান্তি থেকে গিয়েছে প্রশাসনের মধ্যে ৷ নির্দেশিকা যে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়নি তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশ সুপার ।
প্রতি বছরই লোকনাথের জন্ম উৎসবে দূরদুরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন উত্তর 24 পরগনার চাকলা এবং কচুয়ার মন্দিরে । কিন্তু করোনা আবহে পরিস্থিতির বদল ঘটেছে । সংক্রমণের আশঙ্কায় গত বছরের মতো এবছরও বিশেষ এই দিনে বন্ধ রাখা হয়েছে দু'টি মন্দির ৷ এমনিতেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় রাজ্যে বিধি-নিষেধ 15 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার । তার ফলে কোথাও একসঙ্গে 50 জনের বেশি জমায়েত করা চলবে না । ইতিমধ্যে সরকারের সেই নির্দেশিকা মেনে চাকলা এবং কচুয়া মন্দির কমিটি লোকনাথের উৎসবে জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । পুণ্যার্থীরা মন্দির প্রাঙ্গণে যাতে ভিড় না করেন তারও অনুরোধ জানানো হয়েছে । প্রশাসনও প্রচার করে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিল । কিন্তু তারপরও নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করেই কচুয়া এবং চাকলা মন্দিরে যাওয়ার হুজুগ পড়েছে পুণ্যার্থীদের একাংশের মধ্যে ।
রবিবার রাত থেকেই বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং দেগঙ্গায় পুণ্যার্থীদের ভিড় দেখা যায় । রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে যশোর রোড, 34 এবং 35 নম্বর জাতীয় সড়কে । শিকেয় ওঠে করোনা বিধি । এরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে বারাসত পুলিশ জেলা ৷ খোদ পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত সুপার দু'জনেই রাস্তায় নামেন ৷ শেষমেশ পুলিশ কর্মীরা পুণ্যার্থীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাস্তা থেকেই ফেরত পাঠান ৷ সেই সঙ্গে মাইকিং করে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয় । সূত্রের খবর, চাকলা এবং কচুয়া মন্দিরে পুণ্যার্থীদের যাওয়া আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সারারাত নাকা চেকিং চালায় পুলিশের বিশেষ টিম ।
এদিকে রাস্তায় বেরিয়েও লোকনাথ ধামে যেতে না পারায় কিছুটা বিমর্ষ দেখিয়েছে পুণ্যার্থীদের । সুব্রত বিশ্বাস বলেন, "গত বছরও লোকনাথ বাবার মাথায় জল ঢালতে পারিনি । এবছর অনেক আশা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম ৷ কিন্তু মাঝ রাস্তাতেই পুলিশ আটকে দিয়ে বলল, বাড়ি ফিরে যেতে ।" রাজা সেন বলেন, "লোকনাথ ধামে গিয়ে জল ঢালল বলে ঠিক করেছিলাম । সেই মতো বাগবাজারের গঙ্গা থেকে জল তুলে গতকাল বিকেলেই সেখান থেকে রওনা দিয়েছিলাম । কিন্তু বারাসতে এসে পুলিশ আটকে দিয়েছি । বলছে মন্দির বন্ধ ৷ যাওয়া যাবে না । আমরা এর আগে ভূতনাথ এবং তারকেশ্বর মন্দিরে গিয়ে বাবার মাথায় জল ঢেলেছি । তখন কোনও অসুবিধে হয়নি । এখানে এসেই সমস্যার মুখে পড়তে হল ৷"
বারাসত জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, "করোনা আবহে বসিরহাটের কচুয়া এবং দেগঙ্গার চাকলা দু'টি মন্দিরই বন্ধ রয়েছে । তা সত্ত্বেও কিছু পুণ্যার্থী সেখানে জল ঢালার জন্য রওনা দিয়েছিলেন । আমরা তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি । পুণ্যার্থীদের আটকাতে বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং করা হচ্ছে । সোমবার লোকনাথ বাবার জন্ম উৎসবেও চলবে সেই নাকা চেকিং । আমরা পুণ্যার্থীদের কাছে অনুরোধ করব তাঁরা যেন মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা না দিয়ে কাছাকাছি কোনও মন্দিরে গিয়ে জল ঢালার ব্যবস্থা করেন ।" তবে মন্দির বন্ধের নির্দেশিকার বিষয়ে সকলকে যে অবগত করা যায়নি, তা স্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার ।
আরও পড়ুন : COVID Restrictions : রাজ্যে কোভিড বিধি বাড়ল 15 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত