জগদ্দল, 29 অগাস্ট : হঠাৎই দুপুরে থানায় ঢুকল এক যুবক । পুলিশ আধিকারিকের সামনে গিয়ে বলল, আমি কিছু বলতে চাই । জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল পুলিশ আধিকারিক । আমি দাদাকে খুন করেছি । যুবককে চিনতে দেরি হয়নি তার । এ একটু আগেও এসেছিল না ? পুলিশ এবার আর তার কথা উপেক্ষা করেনি । আগেরবার মাথায় গণ্ডগোল আছে বললেও এবার তার কথায় কিছুটা বিশ্বাসই করে তারা । "আমার বাড়ির পিছনের দিকেই দাদার দেহ পোঁতা আছে ।" যুবকের কথা শুনে চমকে যায় পুলিশ । তবে, যুবকের কথা মতো তার বাড়ির পিছন থেকেই উদ্ধার হয় হাড়গোড় । শিউড়ে ওঠে প্রতিবেশীরা ।
জগদ্দল থানার কাউগাছি পঞ্চায়েতের আদর্শপল্লি গ্রাম । গতকাল দুপুরে নিজের বাড়ি পরিষ্কার করতে আসে এক যুবক । প্রতিবেশীর থেকে হেসো নিয়ে চলে কাজ । হেসো ফেরত দিয়েই সোজা পুলিশ স্টেশনে । যা প্রতিবেশীরা জানতে পারে পুলিশের ফোনে । কেন গেছিল তা জেনে প্রতিবেশীরাও অবাকই হয় । কিন্তু একই ঘটনা আবারও কয়েকঘণ্টা পর ঘটে । আবারও থানায় পৌঁছায় ওই একই যুবক । মাটিতে পোঁতা দেহ তার দাদার বলে জানায় । খুন করেছে সে নিজেই ।
2014 সালের 10 ডিসেম্বর । রাতে বিস্তর চিৎকার চ্যাঁচামেচির আওয়াজ আসে ওই বাড়ি থেকে । পরেরদিন সকালে আর কাউকে বাড়িতে দেখা যায়নি । কিন্তু বাড়ি কার দখলে, বাড়ি আছে কেমন তা দেখতে মাঝেমধ্যেই বাড়িতে আসত ওই যুবক । তাকে বাকি ভাইদের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলত বাইরে থাকে । লকডাউনে নিজের আত্মীরদের জানায়, দাদার সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই । কিন্তু গতকাল হঠাৎই এই নাটকে ছন্দপতন হয় । 6 বছর আগে দাদাকে খুন করার কথা স্বীকার করে সে । পুলিশকে দেখিয়ে দেয়, কোথায় পোঁতা রয়েছে তার দেহ ।
তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিল নিপু শীল । ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিল । মেজো অপু শীল ও ছোটো ভাই তপু শীলের সঙ্গে তাদের দাদার ঝামেলা লেগেই থাকত । মা মারা যাওয়ার পর বাবাও ছেড়ে চলে যায় । শুরু হয় জমি নিয়ে বিবাদ । তার থেকেই এই খুন বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা । তবে, প্রায় 6 বছর বাদে খুনের কথা স্বীকার করার ঘটনা রীতিমতো অবাক তারা । অনুশোচনার জেরেই সে একথা স্বীকার করেছে বলে মনে করছে প্রতিবেশীরা । যদিও বাড়ির পাশে এতদিন ধরে মৃতদেহ পোঁতা ছিল তা জানতে পেরে অবাক তারা ।
এবিষয়ে প্রতিবেশী মানিক বৈদ্য জানান, মা আগেই মারা গেছেন । বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায় । বাবা-মা না থাকলে যা হয় । তিন ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত । পরে একদিন 2014- 10 ডিসেম্বর রাতে বিরাট ঝামেলা হয় । আমরা আওয়াজ পাই । কিন্তু ঝামেলা হত বলে আর গিয়ে দেখিনি কী হচ্ছে । সকালে উঠে দেখলাম কেউ নেই । পরে মাঝে মাঝে মেজো ভাই আসত । থাকব বলল । একদিন এসে বলল জায়গাটা পরিষ্কার করব । আমি হেসো দিলাম, পরিষ্কার করল । তারপর বোধহয় অনুশোচনা হয়েছে । থানায় গিয়ে বলেছে আমি দাদাকে মেরে চলে গেছিলাম । পুলিশ ভাবে কেউ মেরে স্বীকার করে না কি । ওর মাথা খারাপ ভেবে ছেড়ে দেয় । পুলিশ আমাদেরও প্রতিবেশী হিসেবে ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করে । আমরাও জানি না । আবার গতকাল পুলিশকে সে জানায়, দাদাকে খুন করেছে এবং এই বাড়িতেই দেহ পুঁতে রেখেছে । কথা মতো পুলিশ মাটি খুঁড়ে ওর দাদার দেহ উদ্ধার করে ।
যুবকের কাকা দুলাল শীল বলেন, "আজ জানলাম আমার দুই ভাইপো তাদের দাদাকে মেরে এখানে পুঁতে রেখেছে । আগে যখন এসেছিল জিজ্ঞাসা করেছিলাম দাদা কোথায়, আমাকে বলেছিল দাদা দিল্লিতে আছে । এবার ও যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে, আমরা জানি চাকরি করছে । কিন্তু ওকে মেরে যে এখানে রেখেছে কে জানে । লকডাউনেও মেজো ভাই মানে অপু শীল আমার কাছে এসেছিল । বলেছে ওর দাদা নীপু শীলের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ নেই । বলে পরে যোগাযোগ হলে জানাবে । আমি তো আর কিছু জানিই না ।"
অপু শীল ও তপু শীল, এই দুই ভাইকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । কীভাবে নীপু শীলকে খুন করা হল বা কীভাবেই বা বিষয়টি এতদিন আড়ালে রাখল তারা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।