সন্দেশখালি, 17 জানুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের ধমকের মুখে পড়ে অবশেষে হুঁশ ফিরল পুলিশ ও প্রশাসনের । 24 ঘণ্টার মধ্যেই হামলার মাস্টারমাইন্ড তৃণমূলের ফেরার 'বাহুবলী' নেতা শেখ শাহজাহানের আকঞ্জিপাড়ার বাড়িতে বসানো হল সিসিটিভি ক্যামেরা ।
মোট তিনটি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে সেখানে । একটি বাড়িতে ঢোকার মুখে ও বাকি দু'টি তৃণমূল নেতার বাড়ির দু'দিকের রাস্তা বরাবর । ঢোকার মুখে যে সিসিটিভি ক্যামেরাটি বসানো হয়েছে, সেটির মাধ্যমে 'নিখোঁজ' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে আসা যাওয়ার গতিবিধি স্পষ্টত ধরা পড়বে ।
সূত্রের খবর, সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিক্স বসানো হয়েছে শাহজাহানের নির্মীয়মাণ একটি গ্যারেজে । সেখান থেকেই 24 ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে সিসিটিভি ক্যামেরার । সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্তে গড়িমসির জন্য মঙ্গলবারই রাজ্য পুলিশকে তিরস্কার করে কলকাতা হাইকোর্ট । তারপরই কি এই তৎপরতা ? উঠছে প্রশ্ন !
সন্দেশখালি কাণ্ডে এখনও বেপাত্তা তৃণমূলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহান । ঘটনার পর 12 দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনও হদিশ মেলেনি 'ফেরার' এই তৃণমূল নেতার । যা নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে । কেন শাহজাহান এখনও আত্মসমর্পণ করেননি তা নিয়ে হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে রাজ্য পুলিশকে । শুধু তাই নয়,পলাতক এই তৃণমূল নেতার বাড়ি কেন এখনও পর্যন্ত 'সিল' করা হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । এরপরই মঙ্গলবার তিনি 'ফেরার' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ির সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দেন । আর আদালত কড়া হতেই একের পর এক ভোলবদল ঘটে । শাহজাহান অন্তরাল থেকেই প্রথমে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে । যদিও পরবর্তী সময়ে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে সরে দাঁড়ান তিনি । কারণ মামলায় যুক্ত হতে হলে ওকালত নামায় সই করতে হবে তাঁকে । তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে, এই শংকা থেকেই তৃণমূল নেতার আইনজীবী আবেদন প্রত্যাহার করে নেন বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ।
এ দিকে, বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মঙ্গলবারই শাহজাহানের গতিবিধি জানতে তাঁর সরবেড়িয়ার বাড়ির সামনে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দেন । তিনি বলেন,"যত দ্রুত সম্ভব সিসিটিভি বসাতে হবে । আর এর সমস্ত ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে পুলিশকে ৷" এরপরই রাজ্য পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রাতারাতি মূল অভিযুক্তের বাড়ির সামনে সিসিটিভি বসায়। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখতে পাওয়া গেল,তাঁর বাড়ির সামনে অর্থাৎ আকুঞ্জি পাড়ার মোড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে । এমনকী তাঁর বাড়ির লাগোয়া গ্যারাজে বসানো হয়েছে একটি মনিটর । যেখান থেকে সিসিটিভি-র মাধ্যমে যাবতীয় গতিবিধির দিকে নজর রাখা হচ্ছে ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এছাড়া আরও একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে সরবেড়িয়া বাজারে শেখ শাহজাহান মার্কেটে । অন্যদিকে,বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে শেখ শাহজাহানের ছোট ভাই শেখ আলমগীর বলেন, "হাইকোর্টের নির্দেশেই সম্ভবত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে । ঘটনা ঘিরে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে আমাদের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে । না পারছি ঘরে থাকতে, না পারছি বাড়ির বাইরে বেরোতে । আইনের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে । আমরা চাই আইনি মাধ্যমে এর একটা সুরাহা হোক । রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে যদি শেখ শাহজাহান দোষী হয় তবে তাঁর সাজা হোক আইনের মাধ্যমে । কিন্তু, বিচার হওয়ার আগেই তাঁকে দোষী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যেটা ঠিক নয় ৷"
আরও পড়ুন: