মধ্যমগ্রাম, 5 অক্টোবর: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তর 24 পরগনার বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা । বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে ইডির বিশেষ টিম এই তল্লাশি অভিযানে নেমেছে । মন্ত্রী, পৌরসভার প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের মধ্যেই এ বার তৃণমূল পরিচালিত মধ্যমগ্রাম পৌরসভায় হানা দিল ইডির তদন্তকারী দল । সূত্রের খবর, ইডির চার সদস্যের একটি দল এ দিন তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারের ঘরে ।সেখানে ওই পৌরকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । এ দিকে, খাদ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বেড়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা ৷
মধ্যমগ্রাম পৌরসভায় ইডি তল্লাশি করতে গিয়ে মূলত তিনটে নাম নিয়ে এসেছিল । তার মধ্যে গৌরাঙ্গ শীল নামে এক ব্যক্তিও রয়েছেন । তিনি মধ্যমগ্রাম পৌরসভার একজন অস্থায়ী কর্মী । মধ্যমগ্রাম পৌর এলাকায় রাস্তাঘাটে পশু পাখি মারা গেলে তাদের তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলাই তাঁর কাজ । যেহেতু তাঁর বাবার নামের সঙ্গে তাঁর বাবার নাম মেলেনি, সেই কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর ইডি সূত্রে । 2017 সালে পৌরসভার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দেন গৌরাঙ্গ শীল । ফলে তাঁর নিয়োগ সঠিকভাবে হয়েছে কি না সেটাও জানতে চাইছেন ইডি আধিকারিকরা ।
মূলত 2014 সালের পর থেকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির হাতে উঠে আসে একাধিক পৌরসভার নাম । নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের সংস্থা এভিএস ইনফোজোনের মাধ্যমে এই সমস্ত পৌরসভায় বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ ।সেই সংক্রান্ত নথিও হাতে এসেছে ইডির তদন্তকারীদের । প্রায় 1500 জনের নিয়োগ পৌরসভাগুলিতে হয়েছে বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের । নিয়োগ সংক্রান্ত যে তালিকা ইডি হাতে পেয়েছে, সেই নথি যাচাই করতেই পৌরসভা ধরে ধরে ইডির তদন্তকারীরা তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন বলে খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে ।
এ দিনের হাইপ্রোফাইল তল্লাশি অভিযানের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রামের মাইকেল নগরের বাড়িও । এছাড়াও কামারহাটি পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান গোপাল সাহা এবং টিটাগড় পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরীর বাড়িতে এখনও চলছে ইডির ম্যারাথন তল্লাশি । খাদ্যমন্ত্রী থেকে পৌরসভার বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পৌরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় । তারই মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রেশ পৌঁছে গেল মধ্যমগ্রাম পৌরসভাতেও । সেখানকার এক্সিকিউটিভ অফিসারের ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন ইডি আধিকারিকরা । যা এখনও চলছে বলে খবর ইডি সূত্রে ।
আরও পড়ুন: পৌর নিয়োগে দুর্নীতি, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে ইডির হানা
এ দিকে, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে ইডি হানার খবর চাউর হতেই তাঁর বাড়ির সামনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উৎসুক জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে । বেলা যত গড়িয়েছে সেই ভিড় তত বেড়েছে । প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় 12 ঘণ্টা হতে চলল, রথীন ঘোষের বাড়িতেই রয়েছেন ইডির আধিকারিকরা । তার মধ্যে দু'জন আধিকারিককে খামের মধ্যে কিছু নথিপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় । এর মধ্যে সংবাদমাধ্যমের জোরাজুরিতে ইডির এক আধিকারিক বলেন, "তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করছেন মন্ত্রী রথীন ঘোষ ৷" তদন্ত প্রক্রিয়া কখন শেষ হবে সেই নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি ওই ইডি আধিকারিক ।
অন্যদিকে,তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন এ দিন বিকেলে আচমকাই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে তৎপরতা বেড়ে যায় সিআরপিএফ জওয়ানদের । আরও অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে আসা হয় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মাইকেল নগরের বাড়ির সামনে । উৎসুক জনতা ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দেওয়া হয় সেখান থেকে ।
যদিও, সিআরপিএফ জওয়ানদের এই তৎপরতা কী কারণে সেই বিষয়ে কিছু জানা না গেলেও এর মধ্যে কোনও অশনি সংকেত রয়েছে কি না তা নিয়ে অবশ্য রয়েছে প্রশ্ন !