কদম্বগাছি (উত্তর 24 পরগনা), 8 জুলাই: আজ পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ রাজ্যজুড়ে হিংসার ঘটনা ঘটছে ৷ এর মধ্যে মৃত্যু নিয়ে ভুয়ো খবরও রটে গেল ৷ শনিবার সকালে ঘটনাটি বারাসত এক নম্বর ব্লকের কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের পীরগাছা এলাকার ৷ প্রথমে জানা যায়, পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীর সমর্থকের ৷ তাঁর নাম আব্দুল্লাহ (45) ৷ তাঁর দাদা আবদুল কাশিম ও বোন জাহানারা বিবিও সাংবাদিকদের জানান, তাঁদের ভাই আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে ৷ পরে বারাসত হাসপাতালের সুপার ডা. সুব্রত মণ্ডল এই বিভ্রান্তি দূর করেন এবং জানান আবদুল্লাহর মাথায় আঘাত লেগেছে ৷ তবে তিনি জীবিত এবং তাঁর চিকিৎসা চলছে ৷
এমনকী রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও হাসপাতালে এসে তাঁকে দেখে গিয়েছেন ৷ কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গেও রাজ্যপাল কথা বলেছেন ৷ তবে এ দিন দুপুরে আবদুল্লাহকে বারাসত হাসপাতাল থেকে কলকাতায় একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ৷ তাই তাঁর মৃত্যু ঘিরে আবদুল্লাহর পরিবার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ভিন্ন বয়ানে বিভ্রান্তি তৈরি হয় ৷
অভিযোগ, ভোটের আগে থেকেই তাঁকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল ৷ শুক্রবার রাতে আবদুল্লাহর উপর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায় ৷ তাঁকে মারধর করা হয়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ ৷ রক্তাক্ত অবস্থায় রাতেই তাঁকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ শনিবার সকালে আবদুল্লাহর দাদা আবদুল কাশেম এবং তাঁর বোন জাহানারা বিবি জানান, শনিবার ভোরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে নির্দল প্রার্থীর সমর্থক আবদুল্লাহর ৷ এই ঘটনায় আরও দু'জন আহত হয়েছেন বলে খবর ৷ তাঁদের মধ্যে কাশেম আলি নামে এক ব্যক্তির অবস্থা আশংকাজনক ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে সেই 'মৃত্যু-উপত্যকা' বাংলা, রাজ্যজুড়ে মৃত 7, জখম বহু
পরে বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, আবদুল্লাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ তবে তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় আছেন ৷ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস গুরুতর জখম আবদুল্লাহকে দেখে গিয়েছেন ৷ তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে রাজ্যপাল নিজে কথা বলেছেন ৷ আবদুল্লাহর মাথায় আঘাত লেগেছে ৷ তবে তাঁর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় দুপুরে আবদুল্লাহকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ৷
এ দিকে, আবদুল্লাহর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই শনিবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দত্তপুকুরের কদম্বগাছির পীরগাছা এলাকা ৷ প্রায় আধ ঘণ্টা টাকি রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা ৷ পরে পুলিশ এসে টাকি রোড থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয় ৷ তবে দাদা আবদুল হাকিম পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, রাত আনুমানিক সাড়ে 12টা নাগাদ এই হামলার ঘটনা ঘটে ৷ পুলিশের কাছে গিয়ে কোনও লাভ হয়নি ৷ পুলিশ জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে গাড়ি নেই ৷ পরে পুলিশ এলেও সব দেখেশুনে চলে যায় ৷
আরও পড়ুন: ভোটগ্রহণ শুরুর 3 ঘণ্টা পর কমিশনে রাজীবা, মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নে নির্বিকার কমিশনার
মৃতের দাদা আবদুল হাকিম ভাইয়ের খুনের পিছনে কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের 41 ও 42 নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী রুনা বিবির স্বামী রিয়াজুল ও তাঁর দলবদলের দিকে আঙুল তুলেছেন ৷ বোন জাহানারা বিবির গলাতেও একই সুর শোনা গিয়েছে ৷ এ দিকে, এই ঘটনায় কদম্বগাছি ফাঁড়ির ওসি-ও তৃণমূলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ৷ তাঁকে কদম্বগাছির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে ৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত কারওকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি ৷