ব্যারাকপুর, 2 অক্টোবর: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির জন্মদিবসে হিংসা ও দুর্নীতি-মুক্ত বাংলা গড়ার ডাক দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । এবার রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই মন্তব্যকে সমর্থন করলেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী । তিনি বলেন, "রাজ্যপাল ভুল কিছু বলেননি । বাংলায় যে প্রতিদিন হিংসা চলছে, সেটা তো বাস্তব ! তাঁর করা মন্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা ৷"
তবে শুধু হিংসা, দুর্নীতি-মুক্ত বাংলা গড়ার ডাক দিলেই চলবে না । তার প্রতিফলনও যাতে বাস্তবে ঘটে সেটাও রাজ্যপালকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী । রাজ্যপালের 'সবকো সম্মতি দে ভগবান'-মন্তব্য নিয়েও মুখ খুলেছেন এই কংগ্রেস নেতা ।
সোমবার ব্যারাকপুরের গান্ধিঘাটে এসে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী । এই বিষয়ে তিনি বলেন, "প্রতিবছরই বিশেষ এই দিনে আমি এখানে আসি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে । এটা নতুন কিছু নয় । আমার চিন্তাধারা ও মতবাদের কোনও পরিবর্তন হয়নি । আমি যে ভাবধারা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত, সেই আদর্শ নিয়েই চলছি । সেই আদর্শ থেকে কখনোই বিচ্যুতি হব না ৷" এরপরই রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে এই নিয়ে মুখ খোলেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, মহাত্মা গান্ধির জন্মদিবসেও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মুখে উঠে আসে বাংলার দুর্নীতি এবং হিংসার প্রসঙ্গ । রাজ্যপাল বলেন, "স্বাধীনতার লড়াইয়ে গাঁধীজির দুটি স্তম্ভ ছিল । একটি অহিংসা । অপরটি সত্য । অথচ এখানে দুর্নীতি ও হিংসা চলছে । এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐকবদ্ধ হতে হবে ৷"
সেই বিষয়ে কৌস্তভ বাগচী বলেন, "এটা তো বাস্তব ! গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে হিংসা চলেছে শাসকদলের মদতে । এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই হিংসার ঘটনার সাক্ষী থাকতে হচ্ছে আমাদের । ফলে বাংলার হিংসা ও দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । আমরাও চাই এরাজ্যে অহিংসার বার্তা প্রতিফলিত হোক প্রতি পদে পদে ৷"
এদিকে, সকালেই ব্যারাকপুরের গান্ধিঘাটে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন । রাজ্যপাল বলেন, ‘সবকো সম্মতি দে ভগবান’ । এর প্রত্যুত্তরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "হিংসার কথা বলে কেউ যদি গাঁধীজির গলায় মালা দেন, তাহলে তো আর কিছু বলার নেই ৷" রাজ্যপালের করা সেই মন্তব্যের বিষয়ে কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী বলেন, "আমরা তো চাই সবারই সম্মতি হোক । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের রাজ্যপাল সকলেরই সম্মতি হোক । তাই রাজ্যপাল ভুল কিছু বলেননি ৷"
যদিও রথীন ঘোষের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে কৌস্তভ বাগচী বলেন, "খাদ্য দফতরের মন্ত্রী হিসেবে আগে তো জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ছিলেন । যাকে চাল চুরির মন্ত্রী বলে লোকে জানত । তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে যদি রথীন ঘোষ বসতে পারেন, তাহলে তো রাজ্যপালের মন্তব্যের মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছি না ৷"
অন্যদিকে, লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা তথা সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে কটাক্ষ করতেও এদিন ভোলেননি কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী । তাঁর কথায়, "একসময় সুদীপ বন্দোপাধ্যায়কে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুনেছিলাম আমি 'চোর' নই । তার পিছনে বিজেপির কোনও বদন্যতা রয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই । তবে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের মতো জেল খাটা আসামীদের মুখ থেকে কোনও পরামর্শ শুনতে চাই না । গোটা রাজ্যের মানুষ জানেন তৃণমূল-বিজেপি সেটিংয়ের কথা । দু'দলের কর্মীরাও বলতে শুরু করেছে সেটিংয়ের কথা । ফলে এখানে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই ৷"
অপরদিকে, তৃণমূলের দিল্লি যাত্রাকে কটাক্ষ করে কৌস্তভ বলেন, "এত টাকা খরচ করে দিল্লি না গিয়ে সেই টাকা গরিব মানুষকেও দেওয়া যেতে পারত । দিল্লির বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যেতেই পারে । তার আগে কারও থেকে টাকা নিলে সেই হিসেবও দেওয়া প্রয়োজন ৷"
আরও পড়ুন: উপাচার্য পদে নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে কটাক্ষ সুজনের