বারাসত,15 জুলাই : প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল বারাসতের যুবতি মনুয়ার বিরুদ্ধে । আজ সেই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। রায়ের আগেই মনুয়ার ফাঁসি চাইলেন মনুয়ার স্বামী অনুপম সিংহের মা। বললেন, "আমার ছেলের হত্যাকারী মনুয়া ও অজিতের ফাঁসিই চাই । সন্তান হারানোর যে যন্ত্রণা, তা অনুভব করুক ওদের(মনুয়া ও অজিত)পরিবারও।" ETV ভারতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনুয়ার ফাঁসির দাবি করেন অনুপমের মা কল্পনা।
আজ বারাসত আদালতের ফাস্ট ট্রাক ফোর্থ কোর্টের বিচারক বৈষ্ণব সরকার এই মামলার দুই অভিযুক্ত মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিত রায়ের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারেন । তবে, তার আগেই এই মামলার মূল দুই অভিযুক্ত প্রসঙ্গে কল্পনা সিংহ বলেন, "আমি যে যন্ত্রণা,কষ্ট পাচ্ছি প্রতিদিন,তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে মনুয়া ও অজিতের ফাঁসি হলে । আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। সুবিচার পাব আমরা । আমাদের আদালতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এই বাড়িতে আমি বুকে পাথর বেঁধে রয়েছি । অনুপমের বাবা তো এখানে আসতেই চান না । ছেলের বাড়িতে আসবেন, অথচ ছেলেকে দেখতে পাবেন না । এটা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক,তা বলে বোঝানো যাবে না ।" আজ আদালতে অনুপমের বাবা জগদীশ চন্দ্র সিংহ, দিদি পপি সিংহ , ভাগ্নে অভীক সরকারসহ বন্ধু আত্মীয়-স্বজন সকলেই হাজির থাকবেন বলে জানান কল্পনা সিংহ ।
এই সংক্রান্ত খবর : আজ অনুপম হত্যা মামলার রায়
এদিকে, গতকাল সকাল থেকে অনুপম হত্যা মামলার দুই অভিযুক্ত মনুয়া ও অজিতের ফাঁসির দাবিতে বারাসত শহরে "জাস্টিস ফর অনুপম সিংহ" সংগঠনের তরফে মাইকিং করা হয় । এই সংগঠনের কর্মকর্তা কৃশানু ঘোষ দস্তিদার বলেন, "মনুয়া ও অজিতের মতো মানুষ সমাজের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর,তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা । আগামীকাল আদালতে যাতে সাধারণ মানুষ হাজির থাকেন, মাইকিংয়ের মাধ্যমে তারও অনুরোধ জানিয়েছি আমরা ।"
এই সংক্রান্ত খবর : মনুয়া-কাণ্ডের সাজা ঘোষণা 15 জুলাই
2017 সালের 2 মে । বারাসত হৃদয়পুরের তালপুকুরের বাড়িতে খুন হন বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার অনুপম সিংহ । প্রথমে এই খুন নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও পরে পুলিশের তদন্তে জানা যায় , খুনের সঙ্গে জড়িত অনুপমের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিত রায় । পুলিশের তদন্তে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য । খুনের সময় অজিতের মোবাইলে ফোন করে স্বামীর শেষ আর্তনাদ শুনেছিল মনুয়া । এরপরেই 16 মে বারাসত থানার পুলিশ মনুয়া ও অজিতকে গ্রেপ্তার করে । শুরু হয় মামলার বিচার প্রক্রিয়া । প্রায় দু-বছর ধরে মামলাটি বারাসত আদালতের ফাস্ট ট্রাক ফোর্থ কোর্টে চলে । এরমধ্যে এই হত্যা মামলার সরকারি আইনজীবী বিপ্লব রায়কে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি । তারপর নতুন সরকারি আইনজীবী শ্যামল দত্তকে নিয়োগ করে মামলাটির শুনানি প্রক্রিয়া শেষ হয় চলতি বছরের 26 জুন । সেদিনই বিচারক ঘোষণা করেন 15 জুলাই রায় দান করা হবে ।
এই সংক্রান্ত খবর : আইনজীবী বিপ্লবকে ফিরিয়ে আনতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ অনুপমের মা
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় মোট 31 জন সাক্ষী দিয়েছেন । প্রথম সাক্ষী দিয়েছিলেন মনুয়ার বাবা । এরপর, একে একে অনুপমের বন্ধু, অফিসের সহকর্মী , ফরেনসিক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ থেকে মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সকলেই সাক্ষী দিয়েছেন । 2017 সালের 14 জুলাই দুই অভিযুক্ত মনুয়া ও অজিতের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ বারাসত আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ । এরপরও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয় । অন্যদিকে,অনুপম হত্যা মামলার সরকারি আইনজীবী শ্যামল দত্ত বলেন, "আমরা অবশ্যই চাইব অনুপম হত্যা মামলায় দুই অভিযুক্তের সর্বোচ্চ সাজা হোক । সেটাই আমরা আদালতকে জানাব ।"
এই সংক্রান্ত খবর : BJP কর্মীর হয়ে মামলা লড়ার জের ? অনুপম কেসে সরানো হল সরকারি আইনজীবীকে