বারাসত, 22 ফেব্রুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আরও এক মধ্যস্থতাকারীর খোঁজ পেল ইটিভি ভারত ৷ রাজীব দে নামে ওই মধ্যস্থতাকারীর বাড়ি উত্তর 24 পরগনার বারাসতে ৷ নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত এজেন্ট শাহিদ ইমামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি (Rajib Dey Accused of Being Involved in Recruitment Scam) ৷ অভিযোগ, শাহিদের হয়ে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলতেন মধ্যস্থতাকারী রাজীব ৷ রাজীব দে-র প্রিন্টিং এবং জামাকাপড়ের ব্যবসা রয়েছে ৷ চাকরি বিক্রির টাকায় সেই ব্যবসা আরও বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ ৷ যদিও, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজীবের পরিবার ৷
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আগেই যোগ মিলেছিল বারাসতের ৷ তদন্ত করতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ নিয়োগ দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছতে তাঁকে একাধিকবার সিবিআইয়ের জেরায় মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ কিন্তু, এই দুর্নীতির দায় কখনও নিজের ঘাড়ে নিতে চাননি তাপস মণ্ডল ৷ নিজাম প্যালেসে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে ৷ তার দু’দিন আগেই নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়েন আরও এক এজেন্ট শাহিদ ইমাম ৷
শাহিদ ইমামের শ্বশুরবাড়িও এই বারাসতে ৷ সেই সূত্রেই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শাহিদ ঘনিষ্ঠ আরও এক মধ্যস্থতাকারীর নাম উঠে আসল সেই বারাসত থেকে ৷ যার বাড়ি বারাসত পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের মধুমুরালিতে ৷ যা শাহিদের শ্বশুরবাড়ি ঠিকানা ৷ সেখানেই রাজীব দে নামে ওই মধ্যস্থতাকারীর খোঁজে পৌঁছে গিয়েছিল ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল রাজীবের সুবিশাল দোতলা বাড়ি ৷ বাড়ির দেওয়ালের প্লাস্টার সদ্য করা হয়েছে ৷ বাড়ির নিচ তলার একটি ঘরে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা চালান তিনি ৷
আগে বাড়ি থেকে গার্মেন্টসের ব্যবসা চলত ৷ ব্যবসার পরিধি বাড়ায় স্থানীয় কাজীপাড়া এলাকায় দোকান ঘর নিয়ে সেই ব্যবসা চালাচ্ছেন রাজীব দে ৷ কান পাতলেই নিন্দুকেরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও এই অবস্থা ছিল না রাজীবের ৷ ব্যবসা থেকে যেটুকু আয় হত, তা দিয়েই কোনও রকমে সংসার চলত চারজনের ৷ বিগত চার-পাঁচ বছরে রাজীবের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করে ৷ এই পরিবর্তনের পিছনে অনেকেই মনে করছেন, শাহিদ ইমামের সঙ্গে সখ্যতা ৷ শাহিদ ইমামের অবাধ যাতায়াত ছিল রাজীবের বাড়িতে ৷
আরও পড়ুন: আজ সিজিও কমপ্লেক্সে কুন্তল-শান্তনুকে মুখোমুখি জেরার সম্ভাবনা ইডির
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল রাজীব দে-র বারাসতের বাড়িতে ৷ সেখানে তাঁর খোঁজ না মিললেও, রাজীবের স্ত্রী নমিতা দে জানান, সব অভিযোগ মিথ্যে ৷ তাঁর স্বামী কোনও বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত নন ৷ কোনও টাকা-পয়সা নিয়ে চাকরিও কাউকে পাইয়ে দেননি ৷ শাহিদের সঙ্গে পরিচয় ওর শ্বশুরবাড়ির সুবাদে ৷ কোনও অনুষ্ঠান হলে আর পাঁচজন যেমন আসতেন তেমনই শাহিদের পরিবারও আসত তাঁদের বাড়িতে ৷ তারপরও কেন তাঁর স্বামীর নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে আসছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন নমিতা দে ৷
এই বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণা সাহা জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই শোনেননি ৷ ওয়ার্ডের একজন বাসিন্দা হিসেবে তিনি রাজীবকে চেনেন ৷ এর বাইরে তাঁর সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, তা তিনি জানেন না ৷ অন্যায় করে থাকলে শাস্তি হবে বলে জানান 22 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ৷ অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে শাসকদলকে পালটা নিশানা করেছে পদ্ম শিবির ৷ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র এটিকে পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো অপরাধ বলে অভিযোগ করেছেন ৷