বারাসত, 10 মার্চ : বামনগাছি গণধর্ষণে অন্যতম সাক্ষী তরুণ দেবনাথের উপর হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা । বাড়ির সামনেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় ৷ অভিযোগ, তারা দু'জনেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল ৷ উত্তর 24 পরগনার বামনগাছির কুলবেড়িয়া এলাকার ঘটনা ৷ ঘটনায় তরুণবাবুর কপাল ফেটে গেছে । গুরুতর আঘাত লেগেছে শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও । বারাসত হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ ঘটনায় গণধর্ষণে প্রধান অভিযুক্ত রতন দাস ওরফে তোতার এক আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । অপর অভিযুক্তর খোঁজ চলছে ।
অভিযোগ, দোলের রাতে তরুণবাবুর বাড়ির সামনে মদ্যপ অবস্থায় লিটন মালাকার ও শুভম মালাকার নামে দুই দুষ্কৃতী গালিগালাজ করছিল । তা দেখে প্রতিবাদ করেন তরুণবাবু । এরপরই লিটন ও শুভম তরুণবাবুকে হুমকি দেয় ৷ বিষয়টি স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুশান্ত দাস ও বারাসত 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দীপক কুমার রায়কে জানানো হয় । খবর পেয়ে রাতেই তরুণবাবুর বাড়িতে আসেন তাঁরা । এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই মদ্যপ দুষ্কৃতীরা দলবল নিয়ে চড়াও হয় তরুণবাবুর উপর । তৃণমূল নেতাদের সমানেই তাঁকে মারধর করতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা । বেধড়ক মারধর করা হয় তরুণবাবুকে । এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা । আহত তরুণবাবুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে ।
ঘটনার প্রেক্ষিতে তরুণবাবু বলেন, "বামনগাছিতে আমার বাড়িতে বর্ষবরণের রাতে যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, তাঁর অন্যতম সাক্ষী আমি । এই ঘটনায় রতন দাস ওরফে তোতা নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হওয়ার কারণেই সম্ভবত আমার উপর হামলা চালানো হয়েছে । আমি বিচার চাইছি । পুলিশ এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেই আমার বিশ্বাস ৷ " তিনি আরও বলেন," ঘটনার পর থেকে যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি । সারারাত দু-চোখের পাতা এক করতে পারিনি ৷"
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃণমূল নেতা সুশান্ত দাস বলেন, " তরুণবাবুর ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থানে চলে আসি । তখন ওই দুষ্কৃতীরা সেখানে ছিল না । কিছুক্ষণ পর তারা এসেই তরুণবাবুকে আমাদের সামনে মারধর করতে শুরু করে । আমরা যদি কিছু বলতাম, তাহলে আমাদেরও ছেড়ে দিত না ওরা ৷ সুপরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে তরুণবাবুর উপর । এর আগেও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল । রাত বিরেতে এখানে মদ, গাঁজা ও জুয়ার আসর বসে । বামনগাছি এলাকা ক্রমশ দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে । এখানে কার্যত জঙ্গল রাজ চলছে । পুলিশ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে । বিষয়টি দলের নজরে আনা হবে । প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থও হব আমরা ৷ "
বামনগাছিতে নিহত সৌরভ চৌধুরির বাবা ও স্থানীয় BJP নেতা স্বরোজ কুমার চৌধুরি ঘটনার জন্য শাসকদলকেই দায়ি করেছেন । তিনি বলেন, "শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনেই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে বামনগাছিতে । পুলিশ প্রশাসন নেই বললেই চলে । গণতন্ত্র ভূলন্ঠিত হচ্ছে এখানে । অনেকেই দুষ্কৃতী রাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলেও ভয়ে সাহস দেখাতে পারছে না । রাজ্য সরকারের কাছে আমার আবেদন, দুষ্কৃতী রাজের বিরুদ্ধে লাগাম টানুন । না হলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবে ৷ " নিহত সৌরভ চৌধুরির দাদা সন্দীপ বলেন, "আমার ভাই খুন হওয়ার পর আমাদের পরিবারের উপরেও হুমকি এসেছিল । তখন পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছিল । কিন্তু, এখন পরিস্থিতি তার ঠিক উলটো । পুলিশকে বলব, সাক্ষীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে । সাক্ষী যদি ভয়ে সাক্ষ্যই দিতে না পারে, তাহলে মামলার গুরুত্বই থাকবে না ৷ " এদিকে ঘটনার পর আজ সকালে দত্তপুকুর থানার তরফে আক্রান্ত তরুণ দেবনাথের বাড়িতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় । তবে, কোনও পুলিশ নয়, সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে । এরপরও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার লোকজন । তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, "পুলিশ যদি আগেই ওই সাক্ষীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করত, তাহলে তাঁকে দুষ্কৃতী হামলার মুখে পড়তে হত না ৷ "
অন্যদিকে, দত্তপুকুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, "অভিযোগের ভিত্তিতে শুভম মালাকার নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । পলাতক লিটনের খোঁজ চলছে । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । বারাসত আদালত 3 দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে ।"
এই সংক্রান্ত খবর : বামনগাছি গণধর্ষণে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বারাসত আদালতে বিক্ষোভ
প্রসঙ্গত, বর্ষবরণের রাতে বামনগাছির কুলবেড়িয়া এলাকায় এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ৷ দত্তপুকুর থানার বামনগাছি কুলবেড়িয়াতে ওই মহিলার ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকে চারজন । তারা পাশবিক অত্যাচার করে মহিলার উপর । অচৈতন্য অবস্থায় তাকে রাতে উদ্ধার করে স্থানীয়রা । সেই ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ রতন দাস ওরফে তোতা, সৌগত সরকার ও মৃনাল বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে । তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে বারাসত আদালতে । যে কোনও সময় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হতে পারে । যে 19 জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে, তার মধ্যে তরুণ দেবনাথ অন্যতম । তাঁর সাক্ষ্যর উপরই এই মামলার গুরুত্ব অনেকখানি নির্ভর করছে । তাই আগেই তাঁর উপর হুমকি ও মারধর করে মামলা প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল ধৃত রতন দাস ওরফে তোতার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে । এই রতন দাস ওরফে তোতা বামনগাছিতে সৌরভ চৌধুরি হত্যায় মূল আসামি ছিল । কয়েক বছর জেলও খেটেছিল সে । অভিযোগ, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই তোতা আবারও তার পুরানো অপকর্মে ফিরে যায় । রীতিমতো দল তৈরি করে বামনগাছির বিভিন্ন এলাকায় মদ, গাঁজা, জুয়ার আসর বসাত সে । মহিলাদের উত্ত্যক্ত করত বলেও অভিযোগ । এরপর, বর্ষবরণের রাতে দলবল নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় তোতা ওই মহিলার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় । বাধা দিতে আসলে মারধর করে তরুণ দেবনাথকে-ও ।