দত্তপুকুর, 29 নভেম্বর: পরীক্ষা চলাকালীন ক্লাসরুমে থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল কয়েকজন ছাত্রের। সেই আক্রোশে পরীক্ষা শেষের পর স্কুলের অস্থায়ী কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে। মৃতের নাম শিবু শী। বয়স 65। ঘটনার জেরে বুধবার উত্তাল হয়ে ওঠে দত্তপুকুরের ছোট-জাগুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকা। যদিও পড়ুয়াদের হাত থেকে বাঁচতে ওই বৃদ্ধ পালাতে গিয়ে পড়ে যান স্কুল চত্বরে। তখনই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এমনটাও দাবি করছেন কেউ কেউ।
তবে, যাই হোক না-কেন কেড়ে নেওয়া মোবাইল ফিরে পেতে পড়ুয়াদের এই আচরণে স্তম্ভিত সকলে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। বুধবারও দত্তপুকুরের ছোট-জাগুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। এছাড়াও অন্যান্য ক্লাসের পরীক্ষা চলছিল ওই স্কুলে।
নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা চলাকালীন কোনও পরীক্ষার্থীই মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা হলে বসতে পারবে না। সেই নিয়মের কথা নোটিশ দিয়ে আগেই এই স্কুলের সমস্ত পরীক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষের তরফে। তা সত্ত্বেও নিয়ম অমান্য করে কিছু পড়ুয়া মোবাইল নিয়ে এসেছিল স্কুলে।পরীক্ষা হলে মোবাইল নিয়ে ঢুকেও পড়েন তারা। বিষয়টি নজরে আসতেই শিক্ষকরা পড়ুয়াদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে তা জমা দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানবেন্দ্র মণ্ডলের কাছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পরীক্ষা শেষে অভিভাবকদের নিয়ে আসলে তবেই পড়ুয়ারা মোবাইল ফেরত পাবে। এরপর যথারীতি পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই শেষ হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বাড়িতেও ফিরে যান বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী। তবে, কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলে চত্বরেই অপেক্ষা করতে থাকে মোবাইল ফিরে পেতে। এমন সময় স্কুলের অস্থায়ী কর্মী শিবু শী গেট বন্ধ করতে বাইরে এলে তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে অপেক্ষারত পড়ুয়ারা। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কিও।
এমনকী, লাঠিসোঁটা দিয়েও ওই বৃদ্ধ অস্থায়ী কর্মীকে পেটানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে ছোট-জাগুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে নিয়ে যেতে বাঁধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কার্যত বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। পরে, পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষও। এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানবেন্দ্র মণ্ডল বলেন, "যে ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত। ভাবাই যায় না পড়ুয়াদের এই আচরণ। মোবাইল ফিরে পেতে ছাত্ররা শিবুদার ওপর হুজ্জুতি শুরু করেছিল। এর যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।" অন্যদিকে, এটি খুন না অন্য কিছু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন: