গোবরডাঙা, 14 অগাস্ট : 150 বছরের প্রাচীন শহর । পাকা রাস্তা, অথচ তার উপর দিয়ে বেমালুম চলছে নৌকা । কারণ এখন যাতায়াতের ভরসা এটি । গল্প নয়, বাস্তব । শহরে বাস করেও পাকারাস্তায় নৌকা চালিয়ে যাতায়াত করছেন উত্তর 24 পরগনার গোবরডাঙা শহরের বাসিন্দারা ।
জেলার অন্যতম পুরানো শহর গোবরডাঙা । কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্র 60 কিমি ৷ 1870 সালে গড়ে ওঠা পৌরসভায় বর্তমানে 17 ওয়ার্ডে 60 হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন । শহরের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা । গত কয়েক বছর ধরে সংস্কার হয়নি নদীর । নোংরা ও আবর্জনা জমে মজে গেছে সেটি । ফি বছর বর্ষাকালে একটু বৃষ্টি হলেই নদীর জল উপচে পড়ে । আর তাতে শহরের কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে যায় । চলতি বছর একদিন মাত্র ভারী বৃষ্টি হয়েছে । তাও 15 দিন আগে । কিন্তু এখনও জল নামেনি । শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গৈপুর, দক্ষিণপাড়া, পাকাঘর ও আট নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকায় কয়েকশো পরিবার জলবন্দী হয়ে রয়েছেন । এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, প্রত্যেকটি বাড়ির ভিতর জল জমেছে । তাও আবার হাঁটু সমান বা কোমর সমান । বাসিন্দাদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে নৌকা । কেউ বা টিন দিয়ে তৈরি করেছেন ডোঙা । তাতেই যাতায়াত করছেন তাঁরা । তিন নম্বর ওয়ার্ডের গৈপুরের বাসিন্দা উপেন্দ্রনাথ করাতি বলেন, "প্রতি বছর বর্ষাকাল এলে আমরা জলে ডুবে থাকি । পৌরসভাকে জানিয়েছি । কিন্তু তারা কোনও ভ্রূক্ষেপ করে না । কী করব বলুন । হাসিও পায় । লজ্জাও করে । নামেই আমরা শহরে থাকি । কিন্তু নৌকায় যাতায়াত করি ।" আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৌরী দাস বলেন, "পৌরসভার লোকেরা দেখে গেছেন । কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি । জল সরানোর কোনও উদ্যোগই নেই । ক'দিন পরে ডেঙ্গি শুরু হবে । মরব আমরাই।"
তবে এই বিষয়ে গৌবরডাঙার পৌরপ্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, "এই বছর বর্ষা বেশি তাই জল জমেছে ৷ গত বছর বর্ষা হয়নি তাই জলও জমেনি ৷" তবে বিষয়টি কিন্তু নজর এড়ায়নি বিরোধীদের ৷ BJP নেতা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গোবরডাঙা হল প্রাচীন শহর ৷ প্রাচীন পৌরসভা ৷ এখানকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমেছে ৷ এটা খুবই লজ্জার বিষয় যে এতদিনের পৌরসভা অথচ জলের তলায় মানুষ ৷ যাঁরা প্রশাসক পদে আছেন তাঁরা অপদার্থ ৷ কোনও কাজ করছে না ৷ মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে ৷"
একে কোরোনা পরিস্থিতি তাঁর উপর জমা জল থেকে ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া হওয়ার ভয় ৷ এক কথায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এই এলাকার বাসিন্দারা ৷ কবে ঠিক হবে পরিস্থিতি তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় তাঁরা ৷