কলকাতা, 17 জুন : শুরুটা হয়েছিল এমনই এক সোমবারের রাতে । আজ আর এক সোমবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল । সাতদিনের অচলাবস্থার সমাপ্তি । আন্দোলন তুলে নিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা ।
আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে নবান্নে হাজির হয়েছিল 31 সদস্যের জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল । বৈঠকে 12 দফা দাবিতে শুরু হয়েছিল আলোচনা । যার মূল কথা ছিল নিরাপত্তা বাড়ানো । চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা । সাধারণ মানুষের কাছে পরিষেবা আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া । আর ছিল হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও উন্নত করা । গত সোমবার বিকেলে রোগীমৃত্যুর পর ডাক্তারদের মারধর করা হয় । প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনে নামেন তাঁরা । আন্দোলনে যে অনড় অবস্থান সাতদিন ধরে চিকিৎসকরা বজায় রেখেছিলেন, আজ নবান্নের 14 তলার ঘরে তার অনেকটাই ছিল অমিল । নমনীয় ও সৌহার্দ্যের পরিবেশেই হল আলোচনা ।
এই সংক্রান্ত খবর : পরিবহকে দেখতে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী
SSKM-এ মুখ্যমন্ত্রীর রুদ্রমূর্তি দেখা গেছিল । কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন । পালটা জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছিলেন নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার কথাও । কিন্তু আজ পরিস্থিতি পরিবেশ সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল । জুনিয়র ডাক্তাররা নমনীয়তার পরিচয় দিলেন, মুখ্যমন্ত্রীও সহনশীলতার সঙ্গে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন । স্বরাষ্ট্রসচিব, মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন । পাশাপাশি প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সংক্রান্ত খবর :"আমরা কারা ? লক্ষ্মী ছেলে" , স্লোগান আন্দোলনকারী ডাক্তারদের
চিকিৎসকদের তরফে প্রথমে বক্তব্য রাখেন অর্চিষ্মান ভট্টাচার্য । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন যেন চিকিৎসাধীন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের কাছে একটিবার যান তিনি । পাশাপাশি বুঝিয়ে দিলেন বাধ্য হয়েই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছিলেন । সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন এমন কোনও পদক্ষেপ করতে চাননি । কিন্তু "অত্যাচারি"ত হতে হতেই নিরুপায় হয়ে আন্দোলনে গেছিলেন তাঁরা । একইসঙ্গে অর্চিষ্মানের প্রশ্ন ছিল, "অপ্রীতিকর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ।" দাবি ছিল, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে হবে প্রশাসনকে ।
এই সংক্রান্ত খবর : আলোচনা ফলপ্রসূ, NRS-এ গিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা
মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনওরকম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া তথা মামলা করা হয়নি । পাশাপাশি সেদিন NRS-এর ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে । প্রতিনিধি দলের প্রস্তাব মতো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কোলাপসিবল গেট বসানো, সকলের চোখে পড়ে এমন জায়গায় রোগীদের জন্য অভিযোগকেন্দ্র রাখা, CCTV লাগানো সহ, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ডাক্তারদের জন্য বিশেষ নম্বর চালু করা সহ একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি ।
চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দলের তরফ থেকে মেনে নেওয়া হল সরকার রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রীও মেনে নিলেন কিছু সমস্যা রয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষস্তরের আমলা এবং পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দিলেন দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য।
SSKM-এ মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন পদবি দেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীক সেই অভিযোগের জবাবও আজ দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । তাঁরা বললেন, "পদবি দেখে আমরা চিকিৎসা করি না ।" একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীও বুঝিয়ে দিলেন সরকারের বিরুদ্ধে রোষ থাকতে পারে, অভিযোগ উঠতে পারে । কিন্তু কোনও ভাবেই যেন সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আমাকে গালি দাও, কিন্তু কাজে যোগ দাও ।"
মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপে স্বভাবতই খুশি জুনিয়র ডাক্তাররাও । যখন মুখ্যমন্ত্রী আলোচনাকক্ষ থেকে বেরোচ্ছেন তখন 31 জন প্রতিনিধি হাততালি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আলোচনা ফলপ্রসূ । মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপে খুশি সবাই । এখন একমাত্র বাকি ঘোষণা যা NRS-এ গিয়ে সরকারিভাবে করবেন তাঁরা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেরিয়ে গেলেন সভাকক্ষ থেকে, NRS-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন প্রতিনিধিরা । NRS এ গিয়ে সরকারিভাবে ঘোষণা হল আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ।