পুরুলিয়া, 16 জুন: দীর্ঘদিন ধরে কুড়মি সম্প্রদায় নিজেদের তফশিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে ৷ সেই দাবিকে আরও জোরালো করতে এবার শাসকদল ও রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ভোট না-দেওয়ার কথা ঘোষণা করল কুড়মি সমাজ ৷ তাদের সমর্থনকারী নির্দল প্রার্থীদের পক্ষেই থাকবে কুড়মিরা ৷ এমনটাই জানিয়েছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিত প্রসাদ মাহাতো ৷
নিজেদের সম্প্রদায়ের দেওয়ালেও সব রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন ও রাজনৈতিক প্রচার বন্ধ করছে কুড়মি সম্প্রদায় ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুড়মিদের এই ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে শাসক ও বিরোধী- উভয় রাজনৈতিক দলগুলিই । পঞ্চায়েত ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে কুড়মিদের এই প্রতিবাদে দলগুলি সমস্যায় পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ।
জঙ্গলমহলে কুড়মি সমাজের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে ৷ কুড়মিদের দাবি, পুরুলিয়া জেলাতেই প্রায় 23 শতাংশের বেশি ভোটার রয়েছে কুড়মি সম্প্রদায়ের । তাই এবার কুড়মিদের সমর্থন পেতে মরিয়া শাসক-বিরোধী উভয় দলই ৷ যদিও শাসকদলের দাবি, সব সমাজের মানুষের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করেছেন । মানুষ তা দেখেই ভোট দেবেন । অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বের আশা কুড়মি সমাজ তাদেরই সমর্থন করবে ৷ এ প্রসঙ্গে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিত প্রসাদ মাহাতো বলেন, "আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল এবং অন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা হবে না ৷ আদিবাসী কুড়মি সমাজের দাবিকে যাঁরা সমর্থন করেন, সেই নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করা হবে ।"
কুড়মিদের এই দাবি প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানান, সামাজিক আন্দোলন করতে বাধা নেই । কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বিচার করে মানুষ ভোট দেয় । এক্ষেত্রেও সেটাই হবে । তৃণমূল নেতার দাবি, সব স্তরের মানুষের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করেছেন । কুড়মিদের বিষয়টা কোনও ফ্যাক্টর নয় ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে ফের রক্তাক্ত মুর্শিদাবাদ! নবগ্রামে খুন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি
বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই জঙ্গলমহল, পুরুলিয়ায় ভালো ফল করেছিল পদ্মশিবির । তাই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরও ভালো ফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি । অন্যদিকে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া শাসকদল ৷ 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট 38 আসন বিশিষ্ট জেলা পরিষদে তৃণমূল পেয়েছিল 25টি, বিজেপি 10টি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল 3টি ।
এছড়াও পঞ্চায়েত সমিতির 20টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে 13টি, বিজেপি 7টি । একইসঙ্গে 170টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল দখল করেছিল 90টি, বিজেপি 64টি এবং কংগ্রেস দখল করেছিল 16টি । বিগত লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র দখল করেছে বিজেপি । আবার বিগত বিধানসভা নির্বাচনে 9টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে 6টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি ৷
তাই, কুড়মিদের ভোট যে গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ শাসকদল কুড়মিদের এই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও বিজেপি জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গার বক্তব্যে স্পষ্ট, নির্বাচনের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ কুড়মিদের ভোট ৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি জানান, কুড়মিরা যথেষ্ট দায়িত্বশীল । তারা ভালোই বোঝে, কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত । বিজেপি কোনও সমাজকে কোনওদিন অসম্মান করেনি । সব সমাজের মানুষের সমর্থন প্রয়োজন বলে আবেদন জানিয়েছেন বিজেপি নেতা ৷ তিনি আশাবাদী, কুড়মি এবং অন্য সমাজগুলি পদ্মফুলেই ভোট দেবে ৷
আরও পডু়ন : 'শয়তানের খেলা শেষ হবে', সন্ত্রাসের আবহে বিবৃতি জারি রাজভবনের