পুরুলিয়া, 26 ডিসেম্বর: গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ও বিজেপির (BJP) মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম (CPIM) ৷ প্রচারে এনেছিল তাদের ‘বিজেমূল’ তত্ত্বকে ৷ কিন্তু সেই প্রচার যে রাজ্যের মানুষের মনে জায়গা করতে পারেনি, ভোটের শূন্যহাতে ফেরার পর তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন আলিমুদ্দিনের নেতারা ৷ তার পরও বিজেপি-তৃণমূল ‘সেটিং’ নিয়ে অভিযোগ শোনা গিয়েছে লাল-পার্টির বহু নেতার গলায় ৷ এবার অন্য এক অভিযোগ শোনা গেল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের (Md Salim) মুখে ৷ তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস এখন বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ৷
সোমবার বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতা ছিলেন জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় (Purulia) ৷ সেখানে দলের কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি ৷ তারই ফাঁকে দলীয় কার্যালয়ে বসে এই অভিযোগ করলেন মহম্মদ সেলিম ৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির কাছে তৃণমূল বাঁচার জন্য আত্মসমর্পণ করেছে ৷’’
কিসের থেকে তৃণমূল বাঁচতে চায়, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সেলিম ৷ মূলত, দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ৷ আর এই দুর্নীতিতে তিনি সরাসরি টেনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) প্রসঙ্গ ৷ সেলিমের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা বিদেশে যেতে পারছেন না পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ৷ এর থেকে আর অপমানের কী হতে পারে !
একই সঙ্গে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন ও শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি ৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে নৈরাজ্যের অবস্থা তৈরি হয়েছে ৷ তৃণমূলই এই সংস্কৃতি তৈরি করেছে ৷ তাঁর আরও দাবি, মানুষই এর জবাব দেবেন ৷ সেই জবাব বাংলার ভোট বাক্সেই দেবেন বলে তাঁর বিশ্বাস ৷
এদিন বাংলার এই প্রান্তিক জেলায় বসে তিনি দাবি করেছেন, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন ৷ দুর্নীতি প্রসঙ্গে একসুরে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi) ৷ বলেছেন, ‘‘নবান্ন থেকে 56, দিল্লিতে মোদির লুঠ, রাজ্যে দিদির লুঠ ৷’’ তাই তাঁর দাবি, ‘‘এই লুঠেরাদের তাড়াতে মানুষ এখন লাল ঝান্ডায় জড়ো হচ্ছেন ৷’’
সম্প্রতি হুগলিতে বিজেপির একটি মিছিলে সিপিএমের লাল পতাকা দেখা গিয়েছিলেন ৷ যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি দাবি করেছিলেন যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা সিপিএম সমর্থক হয়েও বিজেপির পাশে আছেন ৷ এই নিয়েও এদিন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম ৷ তাঁর দাবি, যারা বলেছিল লালঝান্ডা দেখা যায় না, তারা লালঝান্ডা চুরি করে এনে টাকা দিয়ে মিছিলে ব্যবহার করছে ৷
অন্যদিকে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চাইছে না তৃণমূল ৷ কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, গত জুন-জুলাই মাসে তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে বুথ সম্মেলন করছিল ৷ দুর্নীতি বেরিয়ে আসার পর সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে ৷ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে ৷ আইন অনুযায়ী করতে হবে, সংবিধান মেনে করতে হবে ৷
আরও পড়ুন: মেঠো আলপথ পেরিয়ে লাল ঝান্ডা পৌঁছবে সাধারণের বারান্দায়, জনসংযোগ বাড়াতে নির্দেশ সেলিমের