তমলুক, 20 সেপ্টেম্বর : খরচ হয়েছিল 3 কোটি টাকা ৷ উদ্বোধনও হয়েছিল ঘটা করে ৷ কিন্তু, পাঁচ বছর পরও তমলুকের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ স্ট্যান্ড ছাড়াই যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোয় যানজট সমস্যায় ভুগছে জেলা সদর শহর তমলুকের বাসিন্দারা ।
স্থানীয় ও তমলুক পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, 2011-12 অর্থবর্ষে তৃণমূল পরিচালিত পৌর বোর্ডের আমলে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয় । তমলুক শহরের চককামিনায় রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বাসস্ট্যান্ডটি নির্মাণে বরাদ্দ করা হয় প্রায় তিন কোটি টাকা । এরপর ঘটা করে 2014 সালে তৎকালীন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ (বর্তমান পরিবহন মন্ত্রী) শুভেন্দু অধিকারী এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন । তারপর কেটে গেছে পাঁচ বছর । এখনও চালু করা যায়নি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডটি । ফলে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের পরিকাঠামো ।
প্রসঙ্গত, জেলা সদর তমলুকের মধ্য দিয়ে গেছে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক । যা হলদিয়া থেকে মেচেদা, ঘাটাল, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম সহ কলকাতাগামী প্রায় দুশোটির উপর সরকারি ও বেসরকারি বাস প্রত্যহ যাতায়াত করে । এই রুটে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষের প্রতিদিন আনাগোনা রয়েছে । এমন অবস্থায় তমলুক শহরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড না থাকায় বাসগুলি শহরের বিভিন্ন জায়গায় সড়কের উপরই দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের নিয়ে ওঠানামা করতে হচ্ছিল । এর জেরে জনবহুল এলাকার উপর দিয়ে চলা এই সড়কে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছিল তীব্র যানজট । এই সমস্যা দূর করতেই বাম পরিচালিত তাম্রলিপ্ত পৌরসভার উদ্যোগে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল শহরের বুকেই তৈরি করা হবে একটি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড । সেই মতো রাজ্য কৃষি বিপণন দপ্তরের অধিগৃহীত জমির উপর বাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল । এরপর রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা সেই কাজ শুরুও করে দেয় । কিন্তু বাসস্ট্যান্ডটির জায়গা নির্বাচন নিয়েই উঠতে শুরু করে বিস্তর অভিযোগ । স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে যাত্রী ও বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্য সড়ক থেকে প্রায় 500 মিটার দূরে এই বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলায় তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে । এর ফলে শহরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত এই সেন্টাল বাসস্ট্যান্ড কোনও কাজে আসেনি ।
এবিষয়ে পৌরসভাকেই কাটগড়ায় তুলেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরা । তিনি বলেন, "সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের পরিকল্পনা শুরুর আগে অনেকগুলো দিক ভাবা উচিত ছিল । পৌরসভা স্ট্যান্ড নির্মাণ শুরুর সময় আমাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি । কোনও মতামতও না নিয়েই পৌরসভার এই একতরফা হঠকারী সিন্ধান্তের জেরে নতুন এই বাসস্ট্যান্ডে বাস ঢোকা ও বেরোনোর ক্ষেত্রে অনেকটাই সময় লেগে যাবে । ফলে কোনও বাসই আর সরকার নির্ধারিত সময় সূচি অনুযায়ী চলতে পারবে না । তাই সমস্ত বাসেরই সময়সূচি সম্পূর্ণ পরিবর্তন না করেই বৃহৎ এই পরিকল্পনা কোনওভাবেই বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় না । যদি প্রকল্প শুরুর সময়ই আমাদের সাথে এবিষয়ে আলোচনা করা হত তা হলে এই সমস্যাগুলি তুলে ধরা যেত । অপরিকল্পিত ভাবে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের জেরেই তিন কোটি টাকা ব্যয়ের তৈরি এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে ।"
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রাজু বলেন, "বাসস্ট্যান্ডে কোনও বাস না এসে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করার ফলে শহরের রাস্তায় যানজট বাড়ছে । সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে শুধুমাত্র কিছু টুরিস্ট বাস গ্যারেজ করে রাখা হয় । কোনও পাবলিক বাস এখানে আসে না । বাসমালিকদের সঙ্গে পৌর কর্তৃপক্ষের সমঝোতা না হওয়ার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে । যেখানে সেখানে বাস ড্রাইভাররা বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় আমাদেরও যাওয়া-আসার সমস্যা হচ্ছে । স্ট্যান্ড চালু হলে শহরের মানুষ যেমন যানজট থেকে মুক্তি পাবে, অপরদিকে এক জায়গা থেকে সব বাস ধরা যাবে । তাই আমরা চাই অবিলম্বে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড চালু হোক ।"
যদিও পরিকল্পনা অভাবের কথা মানতে নারাজ তমলুক পৌরসভার উপ-পৌরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় । তিনি বলেন, "আমরা বিভিন্ন বাস অ্যাসোসিয়েশনে সংগঠন ও রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তরকে বলেছি ওখানে বাস রেখে চালু করার জন্য । কিন্তু কিছু প্রাথমিক সমস্যা থাকার কারণে ওরা ওখান থেকে বাস রাখ চালু করতে পারছেন না । পরিকল্পনা হয়েছিল বামফ্রন্টের সময়ে ৷ তাই তখন কী হয়েছিল আমরা জানি না । পরবর্তীকালে আমরা সমস্ত কিছু ঠিকঠাক করেছি । অনেকটা কাজ এগিয়ে গেছিল তারপর থেকে আমরা কাজটা সম্পূর্ণ করেছি । স্ট্যান্ড চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে বাস ওনার অ্যাসোসিয়েশন রাজ্য সড়ক থেকে স্ট্যান্ড দূরে থাকার যে অভিযোগ করছে তা ঠিক নয় । কারণ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বাসষ্ট্যান্ড সড়ক থেকে অনেকটা দূরেই হয়েছে । আশা করছি আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যেই স্ট্যান্ড চালু করার ব্যবস্থা করতে পারব ।"