নন্দীগ্রাম, 15 সেপ্টেম্বর: মাস দুয়েক আগে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগে নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের কেন্দামারী জলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুনসুরা বিবি সাসপেন্ড হয়েছিল । ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে নতুন প্রধান নিয়োগের জন্য জেলা সভাপতি শিশির অধিকারি আজ দুপুর নাগাদ প্রধান নির্বাচনে পঞ্চায়েত সদস্য সাকিনা বিবির নাম প্রস্তাব করেন । কিন্তু হঠাৎই তিনি প্রধান হতে রাজি না হওয়ায় ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধান পদে বসলেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধান মনসুরা বিবি ।
তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দু'মাস ধরে কেন্দামারি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান না থাকায় এতদিন ধরে উপপ্রধানকেই প্রধানের সমস্ত দায়িত্বভার সামলে আসতে হচ্ছিল । সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করার লক্ষ্যে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নতুন প্রধান নির্বাচিত করা হবে । নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয় আজ । সেইমতো দুপুর নাগাদ প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত হন পঞ্চায়েত অফিসে । অফিস চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনীও । দলের তরফে পঞ্চায়েতের 15 জন সদস্যের হাতেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রধান হিসাবে সাকিনা বিবিকে সমর্থন করার নির্দেশ । দলীয় নির্দেশ মেনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সামনে প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করা হয় সাকিনা বিবির নাম । উপস্থিত 15 জন সদস্যই সাকিনা বিবিকে প্রধান পদে সমর্থনও করেন । কিন্তু হঠাৎই ব্যক্তিগত অসুবিধার দোহাই দিয়ে সাকিনা বিবি প্রধানের দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন । তারপরেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুয়ারা বিবি প্রাক্তন প্রধান মনসুরা বিবির নাম প্রস্তাব করেন । কিন্তু নির্বাচনে তৃণমূলের কোন সদস্যই দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ডেড প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি । ফলে ভোটাভুটি ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রধান পদে পুনর্বহাল হন মানসুরা বিবি । আর তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় নন্দীগ্রামের বুকে তৃণমূল নেতৃত্বদের রাস হালকা হওয়ার ছবি ।
যদিও তৃণমূলের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাথ পাল জানান, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মনসুরা বিবি প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন । আমরা যে দলীয় সদস্যাকে মনোনীত করেছিলাম তাকে ভয় দেখানোর জন্য তিনি কোন কারণে প্রধান পদে বসতে রাজি হননি । বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে । সেখানেই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় মনসুরা বিবির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে । বিষয়টি ইতিমধ্যেই জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি ।
যদিও নন্দীগ্রামের বুকে তৃণমূলের রাস আলগা হওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি BJP । BJP-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল জানান, দুর্নীতির দায় গা থেকে ঝেড়ে ফেলতেই লোক দেখানোর জন্য তৃণমূল কিছুদিন আগে বেশকিছু জনকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছিল । তারমধ্যে কেন্দামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন । স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃণমূল বহিষ্কার পর্ব শুরু করেছিল । কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই নেতাদের হুইপ না মেনে ফের দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের সমর্থনে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানই নির্বাচিত হল । বোঝাই যাচ্ছে তৃণমূল কতটা স্বচ্ছ । নির্বাচনের আগেই তৃণমূল নিজেরাই মারপিট করে নন্দীগ্রাম থেকে শেষ হয়ে যাবে আমাদের কিছু করতে হবে না । একুশের নির্বাচনে মানুষ তৃণমূলকে ছুড়ে দিয়ে BJP-কে নির্বাচিত করে নন্দীগ্রামে স্বচ্ছ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করবে ।