তমলুক, 3 জুন: বালাসোরে বিপর্যয় ৷ দুর্ঘটনার কবলে পড়া জোড়া ট্রেনের প্রায় তিনশো যাত্রী। ওই ট্রেনদু'টিতে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু মানুষ । এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বালাসোরে বিপর্যয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের তিনজন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে । তাঁরা হলেন বৈশালী বর, বাড়ি ভূপতিনগর থানা এলাকায় ৷ অপরজন হলেন শেখ আজিমউদ্দিন ৷ তাঁর বাড়ি তমলুক থানা এলাকায় ৷ তৃতীয়জন হলেন রামনগর থানার চন্দনপুর গ্রামের নির্মলেন্দু দাস মহাপাত্র ৷ আহত হয়েছেন এই জেলার বহু এবং নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে বলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ।
জেলার বেশ কয়েকজন মানুষ ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে আহত অবস্থায় বাড়িও ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রামনগর বিধানসভা দেপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারাঙ্গার বাসিন্দা আতাবুল খান ৷ শুক্রবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই ছিলেন তিনি । আতাবুল কোনওক্রমে প্রাণে বেচেঁছেন । তবে ঘটনার ভয়াবহতা এখনও ভুলতে পারছেন না তিনি । নিজে আহত হলেও আতাবুল অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন বলে জানান। আহত অবস্থায় চিৎকার করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । তাঁর হাত ভেঙে গিয়েছে । গতরাতে সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা জিজ্ঞেসা করলে চোখে মুখে আতঙ্কের ছবি স্পষ্ট আতাবুলের । শুক্রবার রাতেই কোনওক্রমে বাড়ি ফিরেছেন তিনি ।
আতাবুল বলেন, "কীরকমভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি । তবে হঠাৎ একটা আওয়াজ হয়ে আমরা ট্রেনের যে বগিটায় ছিলাম সেটা উলটে যায় । আমি আহত অবস্থায় বহু লোককে টেনে বের করেছি । তারপর জোরে চিৎকার করলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য । রাতেই আমি বাড়ি ফিরে আসি কোনওক্রমে ।"
আরও পড়ুন: বালাসোর ট্রেন বিপর্যয়ে স্থানীয়দের মানবিক মুখ, লাইনে দাঁড়িয়ে দিচ্ছেন রক্ত
ঘটনার খবর পেয়ে রামনগর 2 ব্লকের দেপাল পঞ্চায়েতের তরফ থেকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়েছে বালিসাই হাসপাতালে । আতাবুল খানকে প্রশাসনের তরফ থেকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন দেপালের উপ প্রধান তাপসকান্তি দত্ত । অপরদিকে রামনগর দু'নম্বর ব্লকের কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের শেখ জাহাঙ্গীর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন । দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনিও আহত অবস্থায় শনিবার সকালে বাড়ি ফিরেছেন । তবে গতকাল দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি নিজের বিধানসভা এলাকায় কত লোক বাইরে গিয়েছিলেন ওই ট্রেনে তা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন । তার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার সমস্ত আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালাসোরের কাথে বড়সড়ো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুপার ফাস্ট করমণ্ডল ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি । ওই দিন দুপুর 3টা 15মিনিট নাগাদ শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসটি । পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে বিকাল 5:15তে । সন্ধ্যা 6টা 55 মিনিট নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছয় বালাসোরে কাছেই বাহানাগা বাজারের কাছে ৷ সেখানেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে 23 কামরার করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি । যাওয়ার পথেই লাইনচ্যুত হয়ে যায় সেটি । ওপর দিকে থেকে আসা ডাউন হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ একটি ট্রেনের বগি অন্যটির উপরে উঠে যায় ৷
আরও পড়ুন: অভিশপ্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাড়ি ফিরলেন চন্দ্রকোনার 4 পরিযায়ী শ্রমিক
জানা গিয়েছে, তিনটি বাদে করমণ্ডলের সমস্ত কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়েছে । বালাসোর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় 250,আহত বহু ৷ এমনটাই জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা । ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রেল দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব । শনিবার বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ৷ গাফিলতির কথা স্বীকার করে দোষীদের শাস্তির কথা বলেছেন তিনি ৷