হলদিয়া, 3 ডিসেম্বর : শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনার মধ্যে 'বিতর্কিত' প্রাক্তন সিপিএম নেতা তথা বর্তমান কংগ্রেস নেতা লক্ষ্মণ শেঠকে সঙ্গে নিয়ে হলদিয়ায় এক মঞ্চে উপস্থিত হলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । বিপ্লবী শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এই দুই নেতার একসঙ্গে থাকাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে । নিছক অরাজনৈতিক মঞ্চে দুই নেতারা একসঙ্গে থাকা, নাকি একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে । শুধু রাজনৈতিক মহলের জল্পনা নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক শুভেন্দু অনুগামী নেতার দাবি, শুভেন্দুহীন পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে দখল রাখতেই তৃণমূল লক্ষ্মণকে পালটা ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার ছক কষছে। তবে, জমি আন্দোলনের হাতিয়ার হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, সাংগঠনিক দিক দিয়ে এই পদক্ষেপ তৃণমূলের ক্ষেত্রে বুমেরাং হওয়া সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বৃহস্পতিবার সকালে তমলুকে অরাজনৈতিক ব্যানারে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । আর একই দিনে বিকেলে হলদিয়াতে অপর এক অরাজনৈতিক ব্যানারে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান দেখা গেল এক সময়ের হলদিয়ার বেতাজ বাদশা তথা প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই সভায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও হাজির ছিলেন। হলদিয়ার দুর্গাচক টাউন ক্লাবের মাঠের এই অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনে জড়িত তথা মাওবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত মধুসূদন মণ্ডল ওরফে নারায়ণ । যা চলতি রাজনৈতিক আবহে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে । তবে এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে কুণাল ঘোষ ও লক্ষ্মণ শেঠ কারও গলাতেই কোন রাজনৈতিক কথা শোনা যায়নি । কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘লক্ষণদাকে বহুদিন ধরে চিনি । সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যখন বিধানসভা অধিবেশন কভার করতাম, তখন ঘটনাচক্রে আমাদের প্রেস গ্যালারির সামনে লক্ষ্মণ দা বসতেন । সরকার থেকে যখন নানা নথিপত্র দিত, তখন লক্ষ্মনবাবু সাংবাদিকতার স্বার্থে আগাগোড়া সহযোগিতা করেছেন । আজকের এই মঞ্চটি অরাজনৈতিক মঞ্চ । মধুদা এবং আপনাদের সকলের উদ্যোগে ক্ষুদিরাম বসুকে স্মরণ করা হচ্ছে । মধুদা সকলকে ডেকেছেন । ইদানিং, আপনাদের মেদিনীপুরে রাজনৈতিক সভা প্রচুর হচ্ছে। আশা করি এই অরাজনৈতিক সভা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠবে না।’’
অন্যদিকে লক্ষ্মণ শেঠ বলেন, ‘‘আমাদের দেশটা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বড় বড় কম্পানির কাছে । তারা আমাদের দেশের সম্পদ লুঠ করছে । আমরা আবার ব্রিটিশ রাজত্বের মতো শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছি ৷’’ তিনি পরাধীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হয়েছে, ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি ঠিকই ৷ কিন্তু, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এখনও আসেনি । অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষ পরাধীন । আমার দেশের এক ভাগ মানুষের হাতে সত্তর ভাগ সম্পদ রয়েছে। আর 70 ভাগ মানুষের হাতে মাত্র একভাগ সম্পদ রয়েছে।’’
সব মিলিয়ে একই দিনে দুই প্রাক্তন সাংসদের মুখে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য না থাকলেও, একই মঞ্চে তৃণমূল মুখপাত্র ও এক সময়ের 'শুভেন্দু বিরোধী' লক্ষ্মণ শেঠের উপস্থিতি উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয় বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ।