দিঘা, 18 জুলাই : রাজ্যের সৈকতশহর দিঘা ও সংলগ্ন উপকূল এলাকার অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হল পর্যটন । কোরোনা সংকটে বিপর্যস্ত দিঘা সৈকতের পর্যটন ব্যবসা । বীরকুল থেকে দিঘা হয়ে ওঠার পাঁচ দশকের ইতিহাসে এমন সংকট এই প্রথম । হোটেল, রেস্তরাঁগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে ৷ আর রোজগার তো নৈব নৈব চ । কাজ গেছে বহু কর্মীর । হাল ফেরাতে সরকারি নির্দেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনলক পর্বে খুলেছিল দিঘার হোটেল, লজ, রিসর্টগুলি । কিন্তু, কোরোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কনটেনমেন্ট জ়োনগুলিতে আবারও লকডাউন শুরু হয়েছে । এতেই আবারও শ্লথ হয়ে পড়েছে পর্যটনের আশার গতি । পর্যটন নিয়ে উদ্বেগ বহাল থাকায় এখন কোটি টাকার আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে চোখে ‘সরষে ফুল’ দেখছেন দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরা ।
কোরোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল 23 মার্চ । তারও আগে থেকে ধীরে ধীরে জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয় কোলাহলপূর্ণ দিঘা । প্রায় 650 টি হোটেলের মধ্যে 'আনলক 1' পর্বে 12 জুন থেকে খুলেছিল 30 শতাংশ হোটেল । 1 জুলাই 'আনলক 2' পর্বে খুলেছিল আরও কিছু হোটেল, লজ ও রেস্তরাঁ । সরকারি বাস পরিষেবা চালু থাকায় শুরু হয়েছিল পর্যটকদের আনাগোনা । 3 মাসের বন্ধ্যাদশা থেকে সবে জেগে উঠতে শুরু করেছিল দিঘা । আশা ছিল ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরবে পর্যটন নগরির । কিন্তু, কোরোনার জন্যে কনটেনমেন্ট জ়োনে পুনরায় লকডাউন চালু হওয়ায় ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে । ফের নেমেছে শূন্যতা । হোটেলগুলোতে আবারও ঝাঁপ পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা । এতেই অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছেন দিঘার পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় 10 হাজার হোটেলকর্মী ।
হোটেল মালিক সত্যব্রত দাস জানিয়েছেন, সুরক্ষা বিধি মেনে হোটেল খুলতে গিয়ে খরচের অঙ্ক বেড়েছে । শুরুতে পর্যটকরা আসা-যাওয়া শুরু করেছিলেন । ছন্দে ফিরছিল কিছুটা । কিন্তু নতুন করে কনটেনমেন্ট জ়োনগুলোতে লকডাউন লাগু হওয়ায় পর্যটকরা ফের দিঘাবিমুখ হতে শুরু করেছেন । কিভাবে ভবিষ্যতে ব্যবসা ফের ঘুরে দাঁড়াবে সেই চিন্তাতেই এখন দিন কাটছে । টানা লকডাউনের কারণে দিঘার প্রায় 10 হাজার হোটেলকর্মী অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছেন । চন্দন মাইতি নামের এক হোটেল কর্মী বলেন, আগে যে হোটেলে 6 জন কাজ করত, এখন সেখানে 3 জন কাজ করছে । মালিক কর্মীদের পালটে পালটে কাজ করাচ্ছেন । ব্যবসায় লোকসানের জন্য মালিকপক্ষ বেশি কর্মচারী রাখতে চাইছে না । মালিকের কথাও ভাবতে হবে ব্যবসা না চললে কিছু করার নেই । সরকারপক্ষ যদি আমাদের পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রচার করেন তাহলে হয়তো আবার পর্যটক আসবেন । আমাদেরও অনেকটা সুবিধা হবে । আমরাও খুব চিন্তায় রয়েছি ভবিষ্যতে আদৌ কাজ থাকবে কি না সে বিষয়ে । একটি রেস্তরাঁর ম্যানেজার সুকদেব গিরি জানান, আগে হোটেলে 15 জন কাজ করত । বর্তমানে মালিক মাত্র 3 জনকে কাজে রেখেছে । প্রতিদিন যে খাবার তৈরি করছি তার অধিকাংশই ফেলে দিতে হচ্ছে । দিনে একজন দু'জন আসছে ৷ এভাবে হোটেল চালানো সম্ভব নয় । মালিক ঠিকঠাক বেতন দিতে পারছে না । যে কারণে সংসার খুব দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে । কবে সবকিছু ঠিক হবে, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি ।
এই বিষয়ে দিঘা - শংকরপুর হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকর্তা রতন মাইতি বলেন, এই অবস্থায় হোটেল খুলে রাখা খরচবহুল ব্যাপার । পর্যটকের সংখ্যা ক্রমেই কমছে । হোটেলকর্মীদের মাইনে দেওয়া যাচ্ছে না ঠিকঠাক । যে কারণে কর্মী কমিয়ে ফেলতে হচ্ছে । তার ওপর ব্যবসার ঋণ মেটাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের । দেশ কোরোনামুক্ত না হলে পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানো খুব মুশকিল ।