ETV Bharat / state

ছাই-জলে দূষিত এলাকা, ব্যবস্থার দাবি স্থানীয়দের

author img

By

Published : Jun 21, 2020, 8:05 PM IST

Updated : Jun 28, 2020, 5:10 PM IST

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দূষণ ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ যে কারণে বন্ধ মাছ চাষ, কৃষিকাজ ৷ এই দূষণ বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়রা ৷

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে দূষিত বিস্তীর্ণ এলাকা
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে দূষিত বিস্তীর্ণ এলাকা

কোলাঘাট, 21 জুন : কয়েকবছর ধরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়েছে প্লান্ট থেকে নির্গত ছাই ৷ আস্তরণ পড়েছে এলাকার পুকুরগুলিতে, চাষের জমিতে ৷ পুকুরের মাছ এই দূষণের ফলে প্রায়ই মরে যায় ৷ অন্যদিকে, চাষে ফসলের ফলনও ছাইয়ের দূষণের কারণে ভালো হয় না ৷ এই দূষণ যেভাবে হোক, বন্ধ করা হোক ৷ এমনই আর্জি জানিয়েছেন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা ৷

রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে 1984 সালে তৈরি হয়েছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৷ মোট ছ'টি ইউনিটে লাগাতার বিদ্যুতের উৎপাদনের কারণে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হতে শুরু করেছে । রাজ‍্যে বিদ্যুতের ঘাটতি বর্তমানে মিটেছে ৷ কিন্তু, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কয়লা পোড়া ছাই ও ছাই মিশ্রিত জল নির্গত হওয়ার কারণে দূষণে আক্রান্ত এলাকা । বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন তিনটি ব্লকের অধিকাংশ জমি ও পুকুরে ছাই ও দূষিত জল মিশে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মাছ চাষ ও কৃষিকাজের । ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা ৷ অবিলম্বে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা । স্থানীয়দের করা আবেদনের পর স্থানীয় ও রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছে । কিন্তু কবে দূষণমুক্ত হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা সে দিকেই তাকিয়ে সকলে ।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনি থেকে ছাই নির্গত হওয়ায় প্লান্ট সংলগ্ন কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ও পাঁশকুড়া ব্লকের অধিকাংশ জমির উপরই ছাইয়ের স্তর তৈরি হয়েছে । প্লান্টের কয়লা পোড়া ছাই বের করার জন্য যে ক'টি সাইলো প্রজেক্ট রয়েছে তাও ভরতি ৷ এর কারণে মেদিনীপুর ক্যানেল ও বাঁপুর খালে দূষিত জল ফেলা হচ্ছে । আর সেই দূষিত জল চাষের জমি ও পুকুরে মিশে মাছ চাষ ও কৃষিকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । যে কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষিকাজ । বর্তমানে শহিদ মাতঙ্গিনী ও কোলাঘাট ব্লকের বহু কৃষক জমিতে ফসল না ফলায় চাষ করাই ছেড়ে দিয়েছেন । তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর, মোহিষগোট, বড়নান এলাকা । কোলাঘাট ব্লকের রাইন, গোপালনগর ও সাগরবাড়েরও একই অবস্থা । ক্ষতিগ্রস্ত পাঁশকুড়া ব্লকের নারায়ণ পাকুড়িয়া, অগড়াজলা-সহ একাধিক গ্রাম ।

কৃষিনির্ভর জেলায় বিস্তীর্ণ জমি কৃষিকাজের অযোগ্য হয়ে ওঠায় ক্ষোভ জমছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে । একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানালেও তার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের । নিজেদের জমি ও পুকুর থাকা সত্ত্বেও চাষ করতে না পেরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই । শুধু কৃষিকাজে যে প্রভাব পড়েছে তা নয়, বাতাসে ছাই মেশায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগেও ভুগতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা । তবে সমস্যা মেটাতে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ৷ এমনই জানান শান্তিপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সেলিম আলি । তিনি জানান, প্লান্টের তিনটি ইউনিট বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে । সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই তিনটি ইউনিটকে গড়ে তোলা হচ্ছে দূষ নিরোধক হিসেবে ।

স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ মল্লিক বলেন, "নিজেদের 18 কাঠার একটি পুকুর রয়েছে । আগে সেই পুকুরে মাছ চাষ করে সংসার চলত । কিন্তু নর্দমা ও খালের মাধ্যমে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মিশ্রিত জল পুকুরে মেশায় পুরো জল দূষিত হয়ে গিয়েছে । মাছ চাষ আর করা যায় না । জলে মাছ ছাড়ার কয়েকদিন পরই সব মাছ মরে যায় । বহু টাকা খরচ করে একাধিকবার পুকুরটিকে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু তা কোনওভাবেই সম্ভব হয়নি । 10-15 বছর হল ওই পুকুরে মাছ ছাড়াই বন্ধ করে দিয়েছি । একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি । কোনও সুরাহা হয়নি । এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি । সরকার যদি চায় তবেই এলাকাকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব ।"

ছাই-জলে দূষিত এলাকা, ব্যবস্থার দাবি স্থানীয়দের

দূষণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষের জমিও ৷ জানিয়েছেন কোলাঘাট ব্লকের বাসিন্দা আবদুল মাজেদ শাহ । তাঁর অভিযোগ, "প্রতিনিয়ত মেদিনীপুর ক্যানেলে ছাই মিশ্রিত জল ফেলা হচ্ছে ৷ সেই জল খুব সহজেই মিশে যাচ্ছে চাষের জমিতে । ফলে জমির উপর ছাইয়ের স্তর পড়ে যাচ্ছে । সেই স্তর ভেদ করে সার গাছের গোড়ায় যেতে পারছে না । এক কাঠা জমিতে আগে দেড় কেজি সার প্রয়োগ করতে হত । এখন তিন কেজি সার প্রয়োগ করেও ফসল পাওয়া যাচ্ছে না । খুব সমস্যায় রয়েছি ৷ অবিলম্বে ছাই মিশ্রিত জলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা হোক । না হলে বহু এলাকা চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে ।" চিমনি থেকে নির্গত হওয়া ছাই বাতাসে মিশে ক্ষতি করছে শরীরেরও । ছাই থেকে বাঁচতে সবসময়ই নাকে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে যাতায়াত করেও লাভ হচ্ছে না । স্থানীয় বাসিন্দা অজয় সামন্ত জানান, "ছাই মিশ্রিত অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করায় এলাকার বহু মানুষ শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিতে ভুগছে । এছাড়া জলের সঙ্গে তা মিশে যাওয়ায় চামড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে ।"

এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান শেখ সেলিম আলি । বলেন, "তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পূর্বেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম । যে কারণে প্রায় 100 কোটি টাকা খরচ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে দু'বছর আগে থেকেই । সেই কাজ সম্পন্ন হলেই চিমনিগুলি থেকে ধোঁয়ার সঙ্গে আর ছাই বাতাসে মিশবে না । এছাড়া বাঁপুর খাল থেকে পুকুরগুলিতে ছাই মিশ্রিত জল ঢুকে পড়েছে । আমরা সেচ দপ্তর ও জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি । অবিলম্বে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খাল সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা । দু'টি কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলেই এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে । আশা করি আর সমস্যা থাকবে না ।"

বহুবার স্থানীয়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে এই দূষণ থেকে মুক্তির জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছে ৷ এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেনেরাল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটগুলি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ৷ এছাড়া, এলাকার বাঁপুর খালে যেখান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জল গিয়ে পড়ছে, সেটি সেচ দপ্তরের তরফে সংস্কার করা উচিত ৷ খাল সংস্কার হলেই পুকুরগুলিতে আর ছাই মিশ্রিত জল ঢুকবে না ৷

কোলাঘাট, 21 জুন : কয়েকবছর ধরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়েছে প্লান্ট থেকে নির্গত ছাই ৷ আস্তরণ পড়েছে এলাকার পুকুরগুলিতে, চাষের জমিতে ৷ পুকুরের মাছ এই দূষণের ফলে প্রায়ই মরে যায় ৷ অন্যদিকে, চাষে ফসলের ফলনও ছাইয়ের দূষণের কারণে ভালো হয় না ৷ এই দূষণ যেভাবে হোক, বন্ধ করা হোক ৷ এমনই আর্জি জানিয়েছেন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা ৷

রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে 1984 সালে তৈরি হয়েছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৷ মোট ছ'টি ইউনিটে লাগাতার বিদ্যুতের উৎপাদনের কারণে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হতে শুরু করেছে । রাজ‍্যে বিদ্যুতের ঘাটতি বর্তমানে মিটেছে ৷ কিন্তু, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কয়লা পোড়া ছাই ও ছাই মিশ্রিত জল নির্গত হওয়ার কারণে দূষণে আক্রান্ত এলাকা । বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন তিনটি ব্লকের অধিকাংশ জমি ও পুকুরে ছাই ও দূষিত জল মিশে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মাছ চাষ ও কৃষিকাজের । ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা ৷ অবিলম্বে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা । স্থানীয়দের করা আবেদনের পর স্থানীয় ও রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছে । কিন্তু কবে দূষণমুক্ত হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা সে দিকেই তাকিয়ে সকলে ।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনি থেকে ছাই নির্গত হওয়ায় প্লান্ট সংলগ্ন কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ও পাঁশকুড়া ব্লকের অধিকাংশ জমির উপরই ছাইয়ের স্তর তৈরি হয়েছে । প্লান্টের কয়লা পোড়া ছাই বের করার জন্য যে ক'টি সাইলো প্রজেক্ট রয়েছে তাও ভরতি ৷ এর কারণে মেদিনীপুর ক্যানেল ও বাঁপুর খালে দূষিত জল ফেলা হচ্ছে । আর সেই দূষিত জল চাষের জমি ও পুকুরে মিশে মাছ চাষ ও কৃষিকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । যে কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষিকাজ । বর্তমানে শহিদ মাতঙ্গিনী ও কোলাঘাট ব্লকের বহু কৃষক জমিতে ফসল না ফলায় চাষ করাই ছেড়ে দিয়েছেন । তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর, মোহিষগোট, বড়নান এলাকা । কোলাঘাট ব্লকের রাইন, গোপালনগর ও সাগরবাড়েরও একই অবস্থা । ক্ষতিগ্রস্ত পাঁশকুড়া ব্লকের নারায়ণ পাকুড়িয়া, অগড়াজলা-সহ একাধিক গ্রাম ।

কৃষিনির্ভর জেলায় বিস্তীর্ণ জমি কৃষিকাজের অযোগ্য হয়ে ওঠায় ক্ষোভ জমছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে । একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানালেও তার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের । নিজেদের জমি ও পুকুর থাকা সত্ত্বেও চাষ করতে না পেরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই । শুধু কৃষিকাজে যে প্রভাব পড়েছে তা নয়, বাতাসে ছাই মেশায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগেও ভুগতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা । তবে সমস্যা মেটাতে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ৷ এমনই জানান শান্তিপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সেলিম আলি । তিনি জানান, প্লান্টের তিনটি ইউনিট বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে । সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই তিনটি ইউনিটকে গড়ে তোলা হচ্ছে দূষ নিরোধক হিসেবে ।

স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ মল্লিক বলেন, "নিজেদের 18 কাঠার একটি পুকুর রয়েছে । আগে সেই পুকুরে মাছ চাষ করে সংসার চলত । কিন্তু নর্দমা ও খালের মাধ্যমে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই মিশ্রিত জল পুকুরে মেশায় পুরো জল দূষিত হয়ে গিয়েছে । মাছ চাষ আর করা যায় না । জলে মাছ ছাড়ার কয়েকদিন পরই সব মাছ মরে যায় । বহু টাকা খরচ করে একাধিকবার পুকুরটিকে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু তা কোনওভাবেই সম্ভব হয়নি । 10-15 বছর হল ওই পুকুরে মাছ ছাড়াই বন্ধ করে দিয়েছি । একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি । কোনও সুরাহা হয়নি । এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি । সরকার যদি চায় তবেই এলাকাকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব ।"

ছাই-জলে দূষিত এলাকা, ব্যবস্থার দাবি স্থানীয়দের

দূষণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষের জমিও ৷ জানিয়েছেন কোলাঘাট ব্লকের বাসিন্দা আবদুল মাজেদ শাহ । তাঁর অভিযোগ, "প্রতিনিয়ত মেদিনীপুর ক্যানেলে ছাই মিশ্রিত জল ফেলা হচ্ছে ৷ সেই জল খুব সহজেই মিশে যাচ্ছে চাষের জমিতে । ফলে জমির উপর ছাইয়ের স্তর পড়ে যাচ্ছে । সেই স্তর ভেদ করে সার গাছের গোড়ায় যেতে পারছে না । এক কাঠা জমিতে আগে দেড় কেজি সার প্রয়োগ করতে হত । এখন তিন কেজি সার প্রয়োগ করেও ফসল পাওয়া যাচ্ছে না । খুব সমস্যায় রয়েছি ৷ অবিলম্বে ছাই মিশ্রিত জলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা হোক । না হলে বহু এলাকা চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে ।" চিমনি থেকে নির্গত হওয়া ছাই বাতাসে মিশে ক্ষতি করছে শরীরেরও । ছাই থেকে বাঁচতে সবসময়ই নাকে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে যাতায়াত করেও লাভ হচ্ছে না । স্থানীয় বাসিন্দা অজয় সামন্ত জানান, "ছাই মিশ্রিত অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করায় এলাকার বহু মানুষ শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিতে ভুগছে । এছাড়া জলের সঙ্গে তা মিশে যাওয়ায় চামড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে ।"

এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান শেখ সেলিম আলি । বলেন, "তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পূর্বেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম । যে কারণে প্রায় 100 কোটি টাকা খরচ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে দু'বছর আগে থেকেই । সেই কাজ সম্পন্ন হলেই চিমনিগুলি থেকে ধোঁয়ার সঙ্গে আর ছাই বাতাসে মিশবে না । এছাড়া বাঁপুর খাল থেকে পুকুরগুলিতে ছাই মিশ্রিত জল ঢুকে পড়েছে । আমরা সেচ দপ্তর ও জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি । অবিলম্বে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খাল সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা । দু'টি কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলেই এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে । আশা করি আর সমস্যা থাকবে না ।"

বহুবার স্থানীয়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে এই দূষণ থেকে মুক্তির জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছে ৷ এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেনেরাল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটগুলি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ৷ এছাড়া, এলাকার বাঁপুর খালে যেখান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জল গিয়ে পড়ছে, সেটি সেচ দপ্তরের তরফে সংস্কার করা উচিত ৷ খাল সংস্কার হলেই পুকুরগুলিতে আর ছাই মিশ্রিত জল ঢুকবে না ৷

Last Updated : Jun 28, 2020, 5:10 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.