বর্ধমান, 2 জুন: বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছিল । আন্দোলনকারীদের আটকাতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ধমান শহরে বাঁশ ও লোহার ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় । ফলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় বর্ধমান শহর । বন্ধ হয়ে যায় স্টেশন থেকে কার্জনগেট হয়ে জিটি রোড ও বিসি রোডের যান চলাচল । যাতে কোনও দোকানে লোকেদের জমায়েত না হয়, সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে দু-একটা খাবারের দোকানের শাটার নামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
শুক্রবার শহরজুড়ে ছিল পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ । নামানো হয়েছিল র্যাফও । ছিল জল কামান, কাঁদানে গ্যাসের ব্যবস্থা । এ দিকে, রাস্তায় ব্যারিকেড থাকায় হাঁটা পথেও জিটি রোড ধরে মানুষ চলাচল করতে পারেনি । তার উপর দিনের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচলতি সাধারণ মানুষ । প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অনেককেই হাঁটা পথে দশ-বারো কিলোমিটার পথ যেতে হয় ।
জনৈক বর্ধমানবাসী শেখ নাজিমুদ্দিন বলেন, তাঁর বাড়ি বীরভূমের ইলামবাজারে । তিনি বর্ধমানে ঘোড়দৌড় চটি এলাকায় কাজে এসেছিলেন । হাঁটা পথে তাঁকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে স্টেশনে যেতে হয় । শ্রীমন্ত সোরেন নামে আর এক ব্যক্তির বাড়ি গুসকরাতে । তিনিও ঘোড়দৌড় চটি থেকে হাঁটা পথে বর্ধমান স্টেশনে যান । তিনি বলেন, আগে থেকে প্রশাসনের কোনও ঘোষণা না থাকায় তাঁরা শহরে কাজে এসে ভোগান্তিতে পড়েন । এ দিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অনেক রাস্তা হাঁটা পথে যেতে হয় । ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ।
এ দিকে, দুপুর নাগাদ বর্ধমান স্টেশন থেকে বাম ছাত্র সংগঠনের মিছিল শুরু হয় । মিছিল যাতে জেলা পরিষদের গেটে পৌঁছতে না পারে, সে জন্য বীরহাটা থেকে কার্জনগেট, পার্কাস রোড, জেলা পরিষদ অফিস সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা বাঁশ ও লোহার ব্যারিকেড গিয়ে ঘিরে ফেলা হয় । বিভিন্ন এলাকায় বিশাল পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয় । মিছিলটি বাদামতলা সংলগ্ন দুটি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে । তারপর তৃতীয় ব্যারিকেডের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে ।
বাম ছাত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্যজুড়ে শিক্ষার অচলাবস্থা চলছে । চলছে বিভিন্ন দুর্নীতি । পুলিশ প্রশাসন নীরব । অথচ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় রাস্তার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় । পুলিশ যদি এইভাবে ছাত্র সংগঠনকে আটকানোর মতো দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিত, তাহলে স্কুল কলেজ পাশ পরার পরে কারওকে আর বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে হত না । কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন দুর্নীতির বিরদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয় না । উলটে যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে তাঁদের জেলে পুরতে উদ্যোগ নেয় বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আন্দোলকারীদের ।
এ দিন বাম আন্দোলনকারীরা 15টি পুলিশ ব্যারিকেডের মধ্যে দুটি ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে । তাঁদের দাবি, ইচ্ছে করলে বাকি ব্যারিকেড ভাঙতেও তাঁদের সময় লাগত না কিন্তু তাঁরা সেই পথে হাঁটেননি । তবে পুলিশ ও প্রশাসন যদি এখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকে তাহলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, "এতগুলি ব্যারিকেড যদি পুলিশ চোর ধরার জন্য ব্যবহার করত, তাহলে সাধারণ মানুষের উপকার হত । পুলিশের যা কাজ ছিল তা পুলিশ করতে পারেনি । আজ ছাত্র-যুবদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য রাজ্যের নির্দেশে পথে নেমেছে । আজ পুলিশ আমাদের ভয় পেয়েছে ।"
আরও পড়ুন: কুস্তিগীরদের সমর্থনে দেশ জুড়ে প্রতিবাদে ডিওয়াইএফআই, রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন