বর্ধমান, 2 মার্চ: বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দান আলো করে রেখেছেন দুই মেদিনীপুর থেকে আসা পটশিল্পীরা (Pattachitra of Medinipur) ৷ ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পোশাক, নিত্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী তাঁরা সাজিয়ে তুলেছেন রকমারি রঙিন ছবিতে ৷ সেইসব ছবি আদতে এক-একটি কাহিনি ! সেখানে হিন্দু দেবদেবীর মাহাত্ম্য যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নানা ধরনের সাম্প্রতিক ঘটনা ও সামাজিক ইস্যু ৷ বাদ যায়নি সরকারি প্রকল্প কিংবা রাজনীতির কোন্দলও ৷ উৎসব ময়দানে চলছে হস্তশিল্প মেলা (Handicraft Fair in Bardhaman) ৷ সেই মেলাতেই নজর কাড়ছেন পটশিল্পীরা ৷
এই পটশিল্পীদের অধিকাংশই পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা ৷ শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকে রয়েছে নয়াগ্রাম ৷ এটি রাজ্যের একমাত্র পটচিত্র গ্রাম ৷ এই গ্রামের অন্তত 126টি পরিবার পটচিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৷ এছাড়াও, দুই মেদিনীপুরের আরও অন্য়ান্য জায়গায় পটশিল্পের চল রয়েছে ৷ তবে, এখন আর পটশিল্পের তেমন জনপ্রিয়তা নেই ৷ তাই মাটির কলসি, ফুলদানি, হাতপাখা, শাড়ি, চাদর, শালোয়ার কামিজ প্রভৃতিতে ছবি আঁকেন পটশিল্পীরা ৷ সেইসব সম্ভার সাজানো রয়েছেন উৎসব ময়দানের মেলাতে ৷
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বনবিবির উৎসব, বসেছে রামরুদ্রপুরের প্রাচীন বনবিবির মেলা
পটশিল্পী শাহিদা চিত্রকর, সৈকত চিত্রকর, সমীর চিত্রকররা জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরাও এই কাজ করতেন ৷ কিন্তু, এখনকার যুগে কেউ আর পটশিল্পীদের গান শোনেন না ৷ তবে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় ৷ যেমন, করোনার সময় মানুষকে সচেতন করতে অনেক কাজ পেয়েছিলেন পটশিল্পীরা ৷ এছাড়া, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারেও তাঁদের ব্যবহার করা হয় ৷
পটচিত্র একটি পরিবেশবান্ধব বিষয় ৷ ছবি আঁকার জন্য কেবলমাত্র ভেষজ রং ব্যবহার করা হয় ৷ এছাড়া, শিল্পীদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৷ অথচ, তাঁরা হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করেন ৷ বাংলার প্রাচীন সমাজব্যবস্থা একটা সময় যে কতটা উদার ছিল, পটচিত্র এবং পটশিল্পীরাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ ৷ অথচ, আজ এই শিল্পীদের বেহাল দশা ৷ প্রচুর পরিশ্রম করে কাজ করেন তাঁরা, কিন্তু সেই কাজের ন্যায্য দাম পান না ৷ বর্ধমানের মেলাতেও বাজছে আক্ষেপের সেই সুর ৷