খণ্ডঘোষ, 15 অগাস্ট : 1927 সালের 17 ডিসেম্বর ৷ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন ভগৎ সিং ও শিবরাম রাজগুরু ৷ এই দুই বিপ্লবীকে হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করে ব্রিটিশ পুলিশ ৷ ততদিনে বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান) খণ্ডঘোষের ওয়ারি গ্রামের বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছে ভগৎ সিংয়ের । বটুকেশ্বর দত্তের পরামর্শে ভগৎ সিং চলে আসেন ওয়ারি গ্রামে । যে বাড়িতে থাকতেন বটুকেশ্বর দত্ত, ঠিক তার পাশে ঘোষেদের বাড়ি । সেই বাড়ির সুড়ঙ্গতেই লুকিয়ে ছিলেন ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত । এমন কী 15 দিন ওই সুড়ঙ্গতে লুকিয়ে থাকার সময় ভগৎ সিং দিল্লির ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা মারার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে শোনা যায় ।
বর্ধমান থেকে আরামবাগ রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে ডান দিকে পড়বে বাঁকুড়া মোড় । বাঁকুড়া মোড় ধরে সোজা প্রায় 10 কিলোমিটার গেলেই বাঁদিকে পড়বে ওয়ারি গ্রাম । গ্রামের রাস্তা ধরে ওয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বাঁ দিকে যে কাঁচা মাটির রাস্তা সেই রাস্তা চলে গেছে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর বাড়ির দিকে । বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ির পাশের বাড়ি ঘোষবাড়ি নামে পরিচিত । সেই বাড়িতে ডান দিকে ঢুকলেই যে প্রথম ঘর পড়বে সেই ঘরে ঢুকলে আপাতদৃষ্টিতে কিছুই বোঝা যাবে না ৷ চুন-সুরকির বাড়ি । দেওয়ালের জীর্ণ অবস্থা ৷ ঘরে ঢুকেই বাঁদিকে আছে ছোট্ট একটা দেওয়াল শোকেস । ঠিক উলটো দিকে যে খাট পাতা আছে তার উপরে ছোট্ট একটা পর্দা ঝুলছে । আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সাধারণ মনে হলেও সেই পর্দা সরালেই মিলবে দশ থেকে বারো ফুটের একটি সুড়ঙ্গ । যে সুড়ঙ্গটিতে 15 দিন ধরে লুকিয়ে ছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত । এমন কী এটাও শোনা যায় এই সুড়ঙ্গতে বসেই দিল্লির ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা মারার পরিকল্পনা করেছিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত ।
ঘোষ পরিবার জানিয়েছে, এখন যেখানে দেওয়াল শোকেস করা আছে অনুরূপভাবে ডানদিকে একটি দেওয়াল শোকেস করা ছিল । সেই শোকেসের তলায় ছিল মোটা পাটাতন । পাটাতন সরিয়ে দিলেই সহজে সুড়ঙ্গতে নেমে যাওয়া যেত । ফলে সেই সুড়ঙ্গে লুকিয়ে থাকলে কেউ সন্দেহ করতে পারত না ।
এই সংক্রান্ত খবর আরও পড়ুন :চাকরির জন্য যুবকরা যেন অন্য দেশে চলে না যান, বলছেন স্বাধীনতা সংগ্রামী চুনিলাল
দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরানো বাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ । ঘোষবাড়ির উত্তরসূরিদের ক্ষোভ, তাঁরা সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু কোনও জবাব পাননি । তাঁদের আবেদন যাতে সরকার তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন । তাহলে তাঁরা এই বাড়ি সংরক্ষণের জন্য সরকারের হাতে তুলে দেবেন ।
বটুকেশ্বর দত্ত সংরক্ষণ ট্রাস্টের জয়েন্ট সেক্রেটারি সর্বজিৎ যশ বলেন, পুরানো বাড়িতে কাগজ কলমে কিছু সমস্যা ছিল ৷ সেই সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় খণ্ডঘোষের BDO । ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তারা যদি বাড়ি ছেড়ে দেয় তাহলে থাকার ব্যবস্থা করা হবে ৷ পাশাপাশি সুড়ঙ্গকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হবে ৷ এবং এই পাতালঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঘোষ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে ।