ETV Bharat / state

Independence Day 2023: পার্লামেন্ট হাউসে ভগৎ সিং-বটুকেশ্বর দত্তদের বোমা বর্ষণ ও খণ্ডঘোষের সেই পাতাল ঘর - bhagat singh and batukeshwar dutt

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে এক বাড়ি ও পাতাল ঘর জড়িয়ে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে ৷ যাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত ৷ জানুন সেই ইতিহাস ৷

ETV Bharat
খণ্ডঘোষের সেই বাড়ি
author img

By

Published : Aug 15, 2023, 9:19 AM IST

Updated : Aug 15, 2023, 10:43 AM IST

খন্ডঘোষ, 14 অগস্ট: 1929 সালের 8 এপ্রিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক দিন ৷ ওইদিনই দিল্লিতে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের সেন্ট্রাল লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলি বা পার্লামেন্ট হাউসে বোমা ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত সেই । পাবলিক সেফটি ও ট্রেড ডিসপুট বিলের বিরোধিতা করে সেদিন ওই পদক্ষেপ করেছিলেন এই দুই বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ সেই বোমা মারার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে ।

তখন 1928 সাল । লাহোরে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে মিছিল শুরু করেন লালা লাজপত রাই । তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে মিছিলে অংশ নেয় । স্বাভাবিকভাবেই যা ব্রিটিশ পুলিশের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল । পুলিশ সেই বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে পারেনি । তখন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জেমস স্কট লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন । লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হন লালা লাজপত রাই । এর কিছুদিন পরে তিনি মারা যান । এই ঘটনা কানে যায় ভগৎ সিংয়ের । ঘটনার প্রতিবাদে জেমস স্কটকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ভগৎ সিং সহ তার সহযোগীরা । কিন্তু তারা জেমস স্কট কে মারতে গিয়ে ভুল করে স্যান্ডার্স কে হত্যা করে বসেন । এরপর অনেক জায়গা ঘুরে ভগৎ সিং, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর হাত ধরে চলে আসেন বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে । সেখানে বটুকেশ্বর দত্তর বাড়িতে ভগৎ সিং আত্মগোপন করে থাকেন । কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ সেই আত্মগোপনের খবর পেয়ে যায় । সেই সময় বটুকেশ্বর দত্তর পাশের বাড়ি ছিল ঘোষেদের বাড়ি । সেই বাড়িতে পাতাল ঘরে আশ্রয় নেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত ।

শোনা যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা মারার পরিকল্পনা ওই পাতাল ঘরে বসেই হয়েছিল । এরপর বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং বিভিন্ন পথ ঘুরে দিল্লি পৌঁছে যান । সেখানে তারা পার্লামেন্টে গিয়ে বোমা ছোঁড়েন । এরপর তারা ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দেন । সেই দিক দিয়ে দেখলে ওই বাড়িটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৷ বর্তমানে ওই ঘোষবাড়ি সরকার অধিগ্রহণ করেছে । বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে । তবে বাড়িতে ঢুকলে সহজে পাতাল ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না ।

আরও পড়ুন: বিপ্লবের আঁতুড়ঘর মুরারীপুকুর বোমা কারখানা নিশ্চিহ্ন, জন্মদিনে অরবিন্দ শুধুই ফলকে

যখন ওই বাড়িতে ঘোষ পরিবার বসবাস করত তখন তো ঘরের মধ্যে যেখানে খাট পাতা ছিল ঠিক তার উপরের দেওয়ালে একটি শো-কেস ছিল । যেটা দেখে কোনও সন্দেহ হতো না কারও মনে । অথচ সেই শো-কেস সরালেই দেখা যেত দেওয়াল কাটা । নিচের দিকে পাতাল ঘরে চলে যাওয়ার রাস্তা । যেখানে অনায়াসে চার-পাঁচ জন লুকিয়ে থাকতে পারতেন । ইতিহাস গবেষক ডঃ সর্বজিৎ যশ জানিয়েছেন, ওই বোমা মারার পরিকল্পনা ওই পাতাল ঘরে বসেই হয়েছিল বলে জানা যায় । স্যান্ডার্সকে ভুল করে হত্যা করার পরে ভগৎ সিং, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর সহযোগিতায় তার খন্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নেন । কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ চর মারফৎ সেই খবর পেয়ে যায় । ফলে বটুকেশ্বর দত্তর পরামর্শে তারা ঠিক পাশের ঘোষ বাড়িতে আশ্রয় নেয় । সেই বাড়ি সরকার অধিগ্রহণ করেছে ।

আরও পড়ুন: অমৃত আজাদিতেও আদিবাসী সমাজে উপেক্ষিত 'নেহরুর বউ' বুধনি মেঝান

কীভাবে যাবেন সেই পাতাল ঘর দেখতে? বর্ধমান স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা তেলিপুকুর মোড় । ওই রাস্তা দিয়ে দামোদর নদের ব্রিজ পার পরে আরও চার কিলোমিটার গেলে মিলবে বাঁকুড়া মোড় । এবার বাঁকুড়া মোড় থেকে ডানদিকে পশ্চিম দিক বরাবার প্রায় দশ কিলোমিটার গেলে রাস্তার বাঁ দিকে মিলবে ওঁয়াড়ি গ্রামে যাওয়ার রাস্তা । সেই গ্রামের রাস্তা ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার গেলেই মিলবে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর জন্মভিটে । বিপ্লবীর বাড়ির লাগোয়া পুরোনো ইটের বাড়িটাই ঘোষ বাড়ি । যেখানে রয়েছে সেই পাতালঘর ।

খন্ডঘোষ, 14 অগস্ট: 1929 সালের 8 এপ্রিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক দিন ৷ ওইদিনই দিল্লিতে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের সেন্ট্রাল লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলি বা পার্লামেন্ট হাউসে বোমা ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত সেই । পাবলিক সেফটি ও ট্রেড ডিসপুট বিলের বিরোধিতা করে সেদিন ওই পদক্ষেপ করেছিলেন এই দুই বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ সেই বোমা মারার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে ।

তখন 1928 সাল । লাহোরে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে মিছিল শুরু করেন লালা লাজপত রাই । তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে মিছিলে অংশ নেয় । স্বাভাবিকভাবেই যা ব্রিটিশ পুলিশের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল । পুলিশ সেই বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে পারেনি । তখন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জেমস স্কট লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন । লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হন লালা লাজপত রাই । এর কিছুদিন পরে তিনি মারা যান । এই ঘটনা কানে যায় ভগৎ সিংয়ের । ঘটনার প্রতিবাদে জেমস স্কটকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ভগৎ সিং সহ তার সহযোগীরা । কিন্তু তারা জেমস স্কট কে মারতে গিয়ে ভুল করে স্যান্ডার্স কে হত্যা করে বসেন । এরপর অনেক জায়গা ঘুরে ভগৎ সিং, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর হাত ধরে চলে আসেন বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে । সেখানে বটুকেশ্বর দত্তর বাড়িতে ভগৎ সিং আত্মগোপন করে থাকেন । কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ সেই আত্মগোপনের খবর পেয়ে যায় । সেই সময় বটুকেশ্বর দত্তর পাশের বাড়ি ছিল ঘোষেদের বাড়ি । সেই বাড়িতে পাতাল ঘরে আশ্রয় নেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত ।

শোনা যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা মারার পরিকল্পনা ওই পাতাল ঘরে বসেই হয়েছিল । এরপর বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং বিভিন্ন পথ ঘুরে দিল্লি পৌঁছে যান । সেখানে তারা পার্লামেন্টে গিয়ে বোমা ছোঁড়েন । এরপর তারা ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দেন । সেই দিক দিয়ে দেখলে ওই বাড়িটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৷ বর্তমানে ওই ঘোষবাড়ি সরকার অধিগ্রহণ করেছে । বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে । তবে বাড়িতে ঢুকলে সহজে পাতাল ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না ।

আরও পড়ুন: বিপ্লবের আঁতুড়ঘর মুরারীপুকুর বোমা কারখানা নিশ্চিহ্ন, জন্মদিনে অরবিন্দ শুধুই ফলকে

যখন ওই বাড়িতে ঘোষ পরিবার বসবাস করত তখন তো ঘরের মধ্যে যেখানে খাট পাতা ছিল ঠিক তার উপরের দেওয়ালে একটি শো-কেস ছিল । যেটা দেখে কোনও সন্দেহ হতো না কারও মনে । অথচ সেই শো-কেস সরালেই দেখা যেত দেওয়াল কাটা । নিচের দিকে পাতাল ঘরে চলে যাওয়ার রাস্তা । যেখানে অনায়াসে চার-পাঁচ জন লুকিয়ে থাকতে পারতেন । ইতিহাস গবেষক ডঃ সর্বজিৎ যশ জানিয়েছেন, ওই বোমা মারার পরিকল্পনা ওই পাতাল ঘরে বসেই হয়েছিল বলে জানা যায় । স্যান্ডার্সকে ভুল করে হত্যা করার পরে ভগৎ সিং, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর সহযোগিতায় তার খন্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নেন । কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ চর মারফৎ সেই খবর পেয়ে যায় । ফলে বটুকেশ্বর দত্তর পরামর্শে তারা ঠিক পাশের ঘোষ বাড়িতে আশ্রয় নেয় । সেই বাড়ি সরকার অধিগ্রহণ করেছে ।

আরও পড়ুন: অমৃত আজাদিতেও আদিবাসী সমাজে উপেক্ষিত 'নেহরুর বউ' বুধনি মেঝান

কীভাবে যাবেন সেই পাতাল ঘর দেখতে? বর্ধমান স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা তেলিপুকুর মোড় । ওই রাস্তা দিয়ে দামোদর নদের ব্রিজ পার পরে আরও চার কিলোমিটার গেলে মিলবে বাঁকুড়া মোড় । এবার বাঁকুড়া মোড় থেকে ডানদিকে পশ্চিম দিক বরাবার প্রায় দশ কিলোমিটার গেলে রাস্তার বাঁ দিকে মিলবে ওঁয়াড়ি গ্রামে যাওয়ার রাস্তা । সেই গ্রামের রাস্তা ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার গেলেই মিলবে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর জন্মভিটে । বিপ্লবীর বাড়ির লাগোয়া পুরোনো ইটের বাড়িটাই ঘোষ বাড়ি । যেখানে রয়েছে সেই পাতালঘর ।

Last Updated : Aug 15, 2023, 10:43 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.