মেদিনীপুর, 16 মার্চ: একদিকে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা বড় বড় শপিংমল অন্যদিকে, দেদার অফারের ছড়াছড়ি অনলাইনে কেনাকাটা (Shopping Online) আর তাতেই হারাচ্ছে গ্রামবাংলার মুদিখানার ব্যবসা। যাঁরা একসময় গ্রাম বাংলা-সহ একদম অজপাড়াগাঁয়ের মানুষদের এক, দুই, তিন, পাঁচ টাকায় হেঁসেলের জিনিসপত্র দিয়ে এসেছে তাঁদের আজ ব্যবসা টিকবে কি না, সেই আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছে । যদিও এই ব্যবসায়ীদের পাশেই দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুরের ব্যবসায়ী সংগঠন।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, ডিজিটাল ইন্ডিয়া রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় অনলাইনের কেনাবেচা। যেখানে অন্যান্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি ঘরের হেঁসেলের টুকিটাকি-সহ যাবতীয় দ্রব্য পাওয়া যায় এই অনলাইনে আর তা ঘরে বসেই। জিরে, হলুদ, লঙ্কা থেকে শুরু করে তেল মশলা, সাবান, নির্মা এবং সঙ্গে ঘি মাখন ও সরষের তেল। একদিকে দামেও কম অন্যদিকে, বেশি কিনলে ডিসকাউন্ট। আর তাতেই মজেছে এখন তরুণ প্রজন্ম-সহ জঙ্গলমহলের গ্রামবাংলা ও শহরের মানুষজন। আর এই কারণে হারাচ্ছে ছোট ছোট মুদিখানার ব্যবসা। যারা একসময় পড়াশোনা করে চাকরি না-পেয়ে ব্যাংক থেকে ছোট ছোট লোন নিয়ে সংসার এবং জীবিকা নির্বাহ করার জন্য মুদিখানা শুরু করেছিল এবং এই গ্রামবাংলার মানুষদের অতি সহজে 2 থেকে 5 টাকায় জিনিস দিয়ে কেনাবেচার মাধ্যমে সংসার চলত, তাঁরা আজ পড়েছেন মহাফাঁপরে।
কারণ একদিকে প্রতিদিন যেভাবে মালের দামের ওঠানামা সেই সঙ্গে অফারের ছড়াছড়িতে হারাচ্ছে তাঁদের ব্যবসা ৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বড় বড় মল এবং শপিংমল। যেখানে অতি সহজে যেমন ডিসকাউন্ট দিচ্ছে সেই সঙ্গে ঘরে অতি সহজেই জিনিসপত্র সুলভে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জিনিসের ও দামের পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে 10-20 টাকা ৷ আবার কখনও 70-80 তো কখনও 100-200 টাকা। তাই গৃহস্থালির টুকিটাকি খরচ বাঁচাতে এখন ডিজিটাল মাধ্যম এবং অনলাইনের সঙ্গে মলের উপরেই ভরসা রাখছে আপামর এই জেলাবাসি। আর এই ঘটনায় খদ্দের হারিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ছোট ছোট এই মুদিখানার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁদের করা লোন কীভাবে শোধ করবে বা এই ব্যবসা আগামিদিনে কীভাবে চালাবে।
এই নিয়ে ছোট ছোট মুদি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, "আগে এই গ্রামবাংলার ভুসিমালের জোগান আমরাই দিয়েছি। কিন্তু আস্তে আস্তে বড় বড় শপিংমল গজিয়ে ওঠে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। যেখানে আগে প্রতিদিন হাজার, দু'হাজার টাকা বিক্রি হত সেখানে এখন 100 টাকা বিক্রি করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। চাকচিক্য ও অফারের ছড়াছড়িতে মানুষ আকর্ষিত হয়েছে অনলাইনে। আর তাই আমাদের কাছে আসছেন না সেইসব ক্রেতারা। গুটিকয়েক মান্থলি কাস্টমার রয়েছে তার ওপর ভর করে কোনওক্রমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। তবে কতদিন তা চলবে সেটাই প্রশ্নের।"
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলছে শপিং মল, ছবি তোলায় সাংবাদিকদের হেনস্থা
তবে এই মুদিখানা ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুরের ব্যবসায়ী সংগঠন। কনফেডারেশন অফ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য এডি বর্মন বলেন, "এই ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষ আকর্ষিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ব্র্যান্ডের মাল এবং ভালো জিনিস পেতে গেলে সেই ছোট ছোট মুদিখানায় ভরসা। কারণ এই ছোট ছোট মুদিখানা একদিকে যেমন মাসের পর মাস ধার দিয়ে ব্যবসা করেন, সেই সঙ্গে তারা ভালো জিনিসপত্র রাখেন। এটা মানুষের বুঝতে একটু সময় লাগবে। সাময়িক ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে কিন্তু আগামিদিনে আস্তে আস্তে করে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।"