খড়ার (পশ্চিম মেদিনীপুর), 10 ডিসেম্বর: দু'জনেই বিশেষভাবে সক্ষম । একজন ছোটবেলা থেকে চোখে দেখেন না ৷ অন্যজন হাঁটতে পারেন না ৷ তবে পেট কি কথা শোনে? পেটের তাগিদে অন্নের জোগাড় করতেই হবে ৷ তাই একমুঠো খাবারের জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে রেখে জোট বেঁধেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়ার পৌরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের দলপতিপুরের বাসিন্দা অশোক ভূঁইয়া (55) ও নিতাই ঘোড়ুই(48) ৷ আট বছরের বন্ধুত্ব তাঁদের ৷ এখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন ৷ তাঁদের বন্ধুত্ব হার মানাবে সিনেমার 'জয়-বীরু'কেও ৷
তবে বাস্তবের জয় বীরুর থেকে মুখ ফিরিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা । এখন ভরসা বলতে মাসে হাজার টাকা সরকারি ভাতা ৷ আর সঙ্গে মা ক্যান্টিনের দু'মুঠো ভাত ৷ ওই খেয়েই চলে সারাটা দিন ৷ সরকার থেকে পাননি বাড়িঘর কিছুই ৷ তবে নিজেদের অন্ন জোগাতে ভিক্ষাবৃত্তি নয়, একে অপরের বন্ধু হয়ে পরের বাড়িতে কাজ করেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এই দু'জন ৷
অশোক ট্রাই সাইকেলের পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেন ৷ আর নিতাই ট্রাই সাইকেলে বসে দিক নির্ণয় করেন ৷ আর এভাবেই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে তাঁরা গন্তব্যে ঠিক পৌঁছে যান ৷ নিতাই ঘোড়ুই বলেন, "ঠিক মতন আমরা কথা বলতে পারি না ৷ কিন্তু মানুষের সাহায্য নিয়ে কোনওক্রমে চলে যায় । আমার বন্ধু আমাকে প্রায় সময় সাহায্য করে ৷ সঙ্গে সরকারি ভাতা কিছুটা সাহায্য করে। এসব থেকেই কোনওক্রমে দু'মুঠো খাবার জুটে যায় দু'জনের ৷"
অন্যদিকে অশোক ভূঁইয়া বলেন, "আমরা আট বছর ধরে একসঙ্গে রয়েছি। আমাদের পরিবার থাকা সত্ত্বেও আমাদের কেউ দেখে না ৷ তাই দু'জনেই দু'জনের সাহায্য করে কোনক্রমে দু'মুঠো খাবার জোগাড় করি। নিতাই আমাকে দিক নির্দেশ করে দেয় ৷ আমি সেই অনুযায়ী মা ক্যান্টিনে ভাত নিয়ে আসি । লোকের কাছে কাজ চাই ৷ যে যা কাজ দেয় করে দিই একে ওপরের সাহায্যে ৷" তাঁদের বন্ধুত্ব নিয়ে এলাকার বাসিন্দা চণ্ডীচরণ ঘোষ বলেন, "এই দু'জনকে গত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি ৷ একে অপরের পরিপূরক হয়ে খাবার জোগাড় করে তাঁরা । এই অসময়ে দুর্দিনে যাদের দেখার কেউ নেই তাদেরকে এভাবে একসঙ্গে থাকতে দেখে ভালো লাগে । এরা লোকের কাছে টাকার বিনিময়ে কাজও করতে যায় । তবে একে অন্যজনের পরিপূরক হয়েই ।"
আরও পড়ুন: