মেদিনীপুর, 20 ফেব্রুয়ারি : না ডান, না বাম ৷ যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, চাকরি পাননি বহু শিক্ষিত নাগরিক ৷ ডিগ্রি বয়ে চললেও মেটেনি বেকারত্বের জ্বালা ৷ এমন উদাহরণ মেলে ভুরি ভুরি ৷ সে রকমই আর একজনের দেখা মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরে ৷ মাস্টার ডিগ্রি (masters in History) করেও পথে বসে চট পেতে ফর্ম ফিল-আপ (form fill up) করছেন গৃহবধূ । সরকারের কাছে তাঁর একটাই প্রার্থনা, শিক্ষিত বেকারদের (Unemployment problem) দিকে নজর দিন ।
কোনও এক সময় মেয়ের আধারের ফর্ম ফিল-আপ করতে গিয়ে সূচনা হয়েছিল এই গল্পের । ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন মেদিনীপুরের (West Midnapore news) গৃহবধূ সুদেষ্ণা দাস । তিনি জঙ্গলমহলের চাঁদড়ার বাসিন্দা । তাঁর বিয়ে হয় মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেল বাজারের মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অভিজিত দাসের সঙ্গে । তাঁদের একটি ফুটফুটে মেয়ে হয় । বর্তমানে সেই মেয়ে পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে ।
কিন্তু বছর তিনেক আগে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুদেষ্ণার স্বামীর । শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা ও অবহেলা ৷ এ ছাড়াও নিজে শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও বারবার চেষ্টা করে কোনও চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন সুদেষ্ণা ৷ অবশেষে উপার্জনের পথ খুঁজে পান গৃহবধূ ।
আরও পড়ুন: বাংলায় বেকারত্বের হার 40 শতাংশ কমেছে, দাবি মমতার
একদিন মেদিনীপুরের হেড পোস্ট অফিসে গিয়েছিলেন মেয়ের আধার কার্ডের ফর্ম ফিল-আপ করতে । ফর্ম জমা দেওয়ার পর দেখেন, গ্রামের বহু মানুষ সঠিক ফর্ম ফিল-আপ করতে না পেরে সাহায্য চেয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন । তাই দেখে অনেকের ফর্ম নিজেই ফিল-আপ করে দেন সুদেষ্ণা ৷
এরপর খুব কম দিনের মধ্যেই সুদেষ্ণা হয়ে ওঠেন প্রধান ডাকঘরের ফর্ম ফিল-আপ দিদি । তিন বছর ধরে প্রধান ডাকঘরের সামনে মাটিতে পলিথিন পেতে বসে সবার ফর্ম ফিল-আপ করে আসছেন তিনি ৷ তাঁর কাছে হাজিরও হন এলাকার মানুষজন । কারও স্কলারশিপ, তো কারও আধার কার্ড, কারও ব্যাংকের ফর্ম ফিল-আপ । রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা করেই এই কাজ করে চলেছেন মাস্টার ডিগ্রিধারী সুদেষ্ণা । আর তাতে 10 টাকা, 5 টাকা করে যা পারিশ্রমিক সবাই দেন, সেই টাকা দিয়ে কোনওক্রমে তিনি সংসার চালাচ্ছেন ৷
এ দিন ইটিভি ভারতকে সুদেষ্ণা বললেন, "পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছি বহুবার । বহু সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি ফর্ম ফিল-আপ করে দৌড়ে গিয়েছি চাকরির জন্য । কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চাকরি কিছুতেই হয়নি । স্বামী যখন ছিলেন তখন সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম । তাই এই কাজই শুরু করলাম ৷ কোনও কাজই ছোট নয় । তবে সরকারের কাছে আবেদন করব, শুধু কোটিপতি ও ধনীদের না দেখে বরং শিক্ষিত বেকারদের দিকে একটু নজর দিন ।"
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে রোজগার বেড়েছে, মোদির আমলে বেড়েছে বেকারত্ব : চন্দ্রবাবু