মেদিনীপুর, 10 নভেম্বর: মেদিনীপুর জেলা তথা শহরের অন্যতম কালী মন্দির শহরের শ্মশানকালী মন্দির। যা উগ্রতারা মায়ের মন্দির নামে বিখ্যাত। এই উগ্রতারা কালী মন্দিরের বয়স দেখতে দেখতে দীর্ঘ দেড়শো বছর পার করেছে ৷ কথিত আছে, কোনও এক দ্বিচারিতা স্ত্রী ও তাঁর পতির মৃত শব এই মন্দিরেই রাখা ছিল ৷ এক তান্ত্রিক শবের অস্থি সংগ্রহ করে সাধনার জন্য মায়ের মূর্তি তৈরি করে এখানে পুজো শুরু করেন ৷ মহাতাবপুর শ্মশান কালীর উগ্রতারা মায়ের পুজোর চল শুরু সেই থেকেই ৷
বাংলার 1234 সনে, তান্ত্রিক পশুপতি মুখোপাধ্যায়ের তান্ত্রিক বিদ্যা দিয়ে তারা মায়ের পুজোর সূচনা হয়। প্রায় 150-200 বছর ধরে সেই অস্থি দ্বারাই মায়ের মূর্তি তৈরি হয়েছে। প্রতি 12 বছর অন্তর নবকলবরে এই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি তৈরি হয়। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে উগ্রতারা মায়ের পুজো করেন বর্তমান পুরোহিতরা ।
পুরোহিত দুর্গা শংকর মিশ্র বলেন, "এই কালী প্রতিমা মূলত তান্ত্রিক মতে হয় । এই পুজো দেওয়া হয় মায়ের প্রিয় খাবার শোল মাছ পোড়া । এছাড়াও এই প্রতিমার দুই পাশে তাঁর দুই সহচরী বিরাজমান সবসময় । মায়ের প্রতিমা তৈরি হয়েছে মৃত মানুষের অস্থি দ্বারা ।"
সেই সময় থেকেই নিয়ম ও বিধি মেনে মায়ের পুজো হয়ে আসছে এখানে ৷ এই কালীপুজোর বিশেষত্ব হল, পুজোয় মাকে ফলমূল-নৈবদ্যের সঙ্গে দেওয়া হয় শোলমাছ পোড়া ৷ কথিত আছে, শোলমাছ পোড়া নাকি মায়ের পছন্দের খাবার ৷ প্রথা অনুযায়ী এখানে পশুবলি হয় ৷ পাশাপাশি, প্রতিমার বিশেষত্ব হল, মায়ের দু'পাশে দুই সহচরী ডাকিনী ও যোগিনী সব সময় বিরাজমান নরমুণ্ড হাতে।
পুজো কমিটির সদস্য গৌতম পাখিরা বলেন, "আমাদের 12 বছর ছাড়া ছাড়া কলেবরে মায়ের মূর্তি নতুন প্রাণ ফিরে পায়। তবে অস্থি দিয়েই রচিত আমাদের কালী প্রতিমা । সেই কলেবর দেখতে সারা শহরের হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে ভিড় জমান । এই মায়ের কাছে কোন মনস্কামনা নিয়ে এলে বিফলে ফিরে যায় না তার ভক্তরা ।"
এই মূর্তির প্রতি বছর বিসর্জন হয় না ৷ 12 বছর অন্তর নবকলেবরে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় গান্ধি ঘাটে। সেই সময় শুধু অস্থি রেখে দেওয়া হয় ৷ সেই অস্থি দিয়ে আবার নতুন করে প্রতিমা তৈরি করা হয়। শোনা যায়, এখানে মা কালী অত্যন্ত জাগ্রত। মন থেকে কোনও কিছু কামনা করলে, মা খালি হাতে ফেরান না বলে বিশ্বাস সকলের ৷ কালীপুজোর দিন সারারাত তান্ত্রিক মতে পুজো হয় এখানে। শহর ছাড়াও ভিন রাজ্য থেকে অনেকে আসেন মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে ৷
আরও পড়ুন: