মেদিনীপুর, 25 অগস্ট: মেদিনীপুর শহরের লালভবন অর্থাৎ, ব্রিটিশ ভারতের ম্যাজিস্ট্রেট ভবনকে হেরিটেজ মর্যাদার দেওয়ার দাবি উঠল ৷ এই লালভবন বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অফিস ৷ এই লালভবনেই তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাসকে বৈঠক চলাকালীন বিপ্লবীরা গুলি করে মেরেছিলেন ৷ ভারতীয় ইতিহাসের এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার পাশাপাশি, সেখানে বিপ্লবীদের এবং ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন জিনিসপত্রকে সংরক্ষণের দাবি তুলেছে মেদিনীপুরের হেরিটেজ জার্নি নামে একটি সংগঠন ৷
1932 সালের 30 এপ্রিল ব্রিটিশ সরকারের আধিকারিকদের বৈঠক চলাকালীন লালভবনে ঢুকে বিপ্লবীরা গুলি করে মেরেছিলেন অত্যাচারী ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাসকে ৷ সেই অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন বাংলার দুই বিপ্লবী প্রদ্যোত ভট্টাচার্য এবং প্রভাংশু পাল ৷ ইংরেজ শাসক ডগলাসের সমাধি এখনও রয়েছে মেদিনীপুর স্টেশন রোড সংলগ্ন পুরনো গির্জা এলাকায় ৷ ডগলাসকে হত্যার দায়ে 1933 সালের 12 জানুয়ারি ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের ৷ এর পর কোনও ইংরেজ শাসক বিপ্লবীদের ভয়ে আর এখানে আসেননি ৷ সেই সময় লালভবনে অবাধ বিচরণ ছিল বিপ্লবীদের ৷
যে লালভবনে প্রদ্যোত ভট্টাচার্য এবং প্রভাংশু পাল এই দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, সেটি বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অফিস ৷ এখানে আজও ব্রিটিশ স্থাপত্যের সেই লালভবন রয়েছে ৷ এই ভবনটি অখণ্ড মেদিনীপুর জেলা, রাজ্য তথা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক ৷ এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে আছে ৷ আর এখানকার অডিটোরিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে শহিদ বিপ্লবী প্রদ্যোত স্মৃতি সদন হিসেবে ৷ সেই অডিটরিয়ামের সামনেই রয়েছে বিপ্লবীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি ৷
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ 2013 সালের আগে বামেদের দখলে ছিল ৷ এর পর নির্বাচনে জিতে শাসকদল তৃণমূল জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন করে ৷ তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিং হাজরার কাছে জেলা পরিষদকে হেরিটেজ করার দাবি জানিয়েছিল মেদিনীপুরের নাগরিকরা ৷ সেই সময় তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, সেই দাবি পূরণ হয়নি ৷ 2023 পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের 60 আসনেই জিতেছে তৃণমূল ৷ উত্তরা সিং হাজরার পরিবর্তে বর্তমানে জেলা সভাধিপতি হয়েছেন প্রাক্তন কর্মধ্যক্ষ প্রতিভা মাইতি ৷ তিনিই হেরিটেজের দাবির বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের মর্যাদা পেল মেদিনীপুরের জেলা কালেক্টরেট অফিস
হেরিটেজ জার্নি নামক সংগঠনের সদস্য নিসর্গ নির্যাস মাহাতোর দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের এই ভবন বহু ইতিহাসের সাক্ষী ৷ মেদিনীপুরের বহু বিপ্লবীদের আত্মবলিদানের সাক্ষী এই জেলা পরিষদ ভবন ৷ ঐতিহ্যবাহী এই পুরনো লালভবনকে খাতায়-কলমে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়া হোক ৷ সেই সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ছবি দিয়ে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তিনি ৷ তা না হলে অকালে ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের এই স্মৃতি সৌধ হারিয়ে যাবে বলে জানান সংগঠনের সদস্য ৷
মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তপন দাস, প্রশান্ত বেরাদের একই দাবি ৷ অবিলম্বে মেদিনীপুরের এই জেলা পরিষদ ভবনকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হোক ৷ যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে এবং সেখানকার গৌরব আরও ছড়িয়ে পড়ে ৷
আরও পড়ুন: হেরিটেজ তকমার পরও অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী 'ধান্যকুড়িয়া গাইন গার্ডেন'
এই বিষয়ে বর্তমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, ‘‘বিগত দিনে শিক্ষা কর্মধ্যক্ষ বিষয়টি দেখছিলেন ৷ আমি নতুন জেলা সভাধিপতি হয়েছি ৷ তবে, মেদিনীপুরের এই বিপ্লবীদের আত্মবলিদানের স্মৃতি কখনই বিফলে যাবে না ৷ আমরাও অবশ্যই এ বিষয়ে সচেষ্ট হব ৷ হেরিটেজ কমিশনের কাছে আবেদন করব ৷ হেরিটেজের দাবির সঙ্গে একটি মিউজিয়াম তৈরির আবেদনও করব ৷’’
উল্লেখ্য, বিগত দিনে হেরিটেজের আবেদন করাও হয়েছিল ৷ আগের জেলাশাসকের মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়েছিল হেরিটেজ কমিশনে ৷ সূত্রের খবর, এই বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে ৷ চিঠি দিয়েছিলেন কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র ৷ এর আগে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনে তথ্য ও ছবি-সহ ইমেল করেছিল সংগঠনের সদস্যরাও ৷