ETV Bharat / state

freedom fighter : স্কুল-কলেজের সংঘাতে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি এখন হানাবাড়ি

মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলা মামলার জেরে অবক্ষয়ের পথে ভারত তথা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ৷ অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সাহিত্যিক এবং শিক্ষক ছিলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু ৷ তাঁর কর্মজীবনে তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন, সেই বাড়ির অধিকার নিয়ে মামলা চলছে স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে ৷

author img

By

Published : Aug 17, 2021, 6:00 PM IST

Updated : Aug 18, 2021, 12:25 PM IST

Freedom fighter Rishi Rajnarayan Bose House Way to Decay in West Medinipur
স্কুল ও কলেজের সংঘাতে হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি

মেদিনীপুর, 17 অগস্ট : পরাধীন ভারতে অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সাহিত্যিক এবং শিক্ষক ছিলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু (Rishi Rajnarayan Bose) ৷ বলা হয় ব্রাহ্ম মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি ৷ সেই সময়ে গোটা ভারতবর্ষে সামাজিক শিক্ষা এবং রীতিনীতির প্রচারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ রাজনারায়ণ বসু 1851-1866 সাল, ষোলো বছর মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (Medinipur Collegiate School), তৎকালীন জেলা গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৷ সেই সময় স্কুলের পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু ৷ কথিত আছে ওই বাড়িতে বাংলার বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে, সাহিত্যিক এবং মনীষীরা আসতেন ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্র বসু, বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত এবং রাজনারায়ণ বসুর নাতি ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ৷ ভারত তথা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর সেই বাড়ি আজ হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে ৷ চারিদিকে জঙ্গল, সাপ এবং মাতালদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে বাড়িটি ৷ চুরি হয়ে গিয়েছে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বহু সামগ্রী ৷ রীতিমত ভগ্নদশা ওই বাড়ির ৷

Freedom fighter Rishi Rajnarayan Bose House Way to Decay in West Medinipur
ঋষি রাজনারায়ণ স্মৃতিভবন

আর এই বেহাল পরিস্থিতির কারণ, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজ (Medinipur College) কর্তৃপক্ষের মধ্যে ওই বাড়িটির অধিকার নিয়ে চলা মামলা ৷ শোনা যায় 1873 সালে মেদিনীপুর কলেজ তৈরি হওয়ার পর, স্কুলের প্রধান শিক্ষককেই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষকই ওই বাড়িটিতে থাকতেন ৷ পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ ভারত থেকে এক অধ্যাপককে কলেজের অধ্যক্ষ করে আনে সরকার ৷ তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষকে ওই বাড়িতে সাময়িকভাবে থাকতে দিয়েছিল ৷ এমনই দাবি করেছেন স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা হিমানী পড়িয়া ৷ সেই সময় থেকেই কলেজের অধ্যক্ষরা বছরের পর বছর সেখানে থাকতে শুরু করেন ৷ সেই প্রমাণপত্রও স্কুলের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষিকা ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষই একটা সময় লোকমুখে ওই বাড়িটিকে প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার নামে প্রচার করতে শুরু করে ৷ পরবর্তী সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই বাড়ির উপর নিজেদের অধিকার দাবি করলে, তা মানতে চায় না মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷

স্কুল-কলেজের সংঘাতে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি এখন হানাবাড়ি

এ নিয়ে মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরার দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষকে কেউ বা কারা ভুল বোঝাচ্ছে ৷ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ওই বাড়িটি প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার তার প্রমাণ হিসেবে সরকারি নথিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ৷ তাঁর মতে, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন ৷ তাই তিনি বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চান না ৷ তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে আলোচনা করে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে ৷ তবে, তা না হলে আদালত যা রায় দেবে তাই মেনে নেওয়া হবে ৷ তবে অধ্যক্ষের দাবি, বাড়িটি আগেও প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ছিল ৷ তাঁরা এখনও বাড়িটির সংস্কার করে প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার হিসেবে পুনরায় শুরু করতে চাইছেন ৷

স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের এই বিবাদ নিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত মেদিনীপুরের গবেষক থেকে শিক্ষানুরাগী সবাই ৷ তাঁদের দাবি, আলোচনার টেবিলে বসে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এই সমস্যার সমাধান করা হোক ৷ আর দ্রুত ওই বাড়িটিকে সংগ্রহশালায় রূপান্তর করা হোক ৷ এ বিষয়ে গবেষক অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের দাবি অবিলম্বে স্কুল এবং কলেজ এক টেবিলে বসে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়িটিকে আর্কিওলজিক্যাল বিভাগে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানাক ৷ ইংরেজ জেলাশাসক পেডি ডগলাস এবং বার্জকে মারার সময় বিভিন্ন চিঠি লেখা হয়েছিল ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সেই চিঠিগুলি সেখানে সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে ৷ এমনকি শহিদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর শুনানি যে কাঠগড়ায় হয়েছিল, সেটিকেও এখানে এনে রাখা যেতে পারে ৷’’

মেদিনীপুর, 17 অগস্ট : পরাধীন ভারতে অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সাহিত্যিক এবং শিক্ষক ছিলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু (Rishi Rajnarayan Bose) ৷ বলা হয় ব্রাহ্ম মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি ৷ সেই সময়ে গোটা ভারতবর্ষে সামাজিক শিক্ষা এবং রীতিনীতির প্রচারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ রাজনারায়ণ বসু 1851-1866 সাল, ষোলো বছর মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (Medinipur Collegiate School), তৎকালীন জেলা গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৷ সেই সময় স্কুলের পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু ৷ কথিত আছে ওই বাড়িতে বাংলার বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে, সাহিত্যিক এবং মনীষীরা আসতেন ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্র বসু, বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত এবং রাজনারায়ণ বসুর নাতি ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ৷ ভারত তথা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর সেই বাড়ি আজ হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে ৷ চারিদিকে জঙ্গল, সাপ এবং মাতালদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে বাড়িটি ৷ চুরি হয়ে গিয়েছে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বহু সামগ্রী ৷ রীতিমত ভগ্নদশা ওই বাড়ির ৷

Freedom fighter Rishi Rajnarayan Bose House Way to Decay in West Medinipur
ঋষি রাজনারায়ণ স্মৃতিভবন

আর এই বেহাল পরিস্থিতির কারণ, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজ (Medinipur College) কর্তৃপক্ষের মধ্যে ওই বাড়িটির অধিকার নিয়ে চলা মামলা ৷ শোনা যায় 1873 সালে মেদিনীপুর কলেজ তৈরি হওয়ার পর, স্কুলের প্রধান শিক্ষককেই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষকই ওই বাড়িটিতে থাকতেন ৷ পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ ভারত থেকে এক অধ্যাপককে কলেজের অধ্যক্ষ করে আনে সরকার ৷ তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষকে ওই বাড়িতে সাময়িকভাবে থাকতে দিয়েছিল ৷ এমনই দাবি করেছেন স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা হিমানী পড়িয়া ৷ সেই সময় থেকেই কলেজের অধ্যক্ষরা বছরের পর বছর সেখানে থাকতে শুরু করেন ৷ সেই প্রমাণপত্রও স্কুলের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষিকা ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষই একটা সময় লোকমুখে ওই বাড়িটিকে প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার নামে প্রচার করতে শুরু করে ৷ পরবর্তী সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই বাড়ির উপর নিজেদের অধিকার দাবি করলে, তা মানতে চায় না মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷

স্কুল-কলেজের সংঘাতে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি এখন হানাবাড়ি

এ নিয়ে মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরার দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষকে কেউ বা কারা ভুল বোঝাচ্ছে ৷ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ওই বাড়িটি প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার তার প্রমাণ হিসেবে সরকারি নথিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ৷ তাঁর মতে, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন ৷ তাই তিনি বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চান না ৷ তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে আলোচনা করে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে ৷ তবে, তা না হলে আদালত যা রায় দেবে তাই মেনে নেওয়া হবে ৷ তবে অধ্যক্ষের দাবি, বাড়িটি আগেও প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ছিল ৷ তাঁরা এখনও বাড়িটির সংস্কার করে প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার হিসেবে পুনরায় শুরু করতে চাইছেন ৷

স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের এই বিবাদ নিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত মেদিনীপুরের গবেষক থেকে শিক্ষানুরাগী সবাই ৷ তাঁদের দাবি, আলোচনার টেবিলে বসে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এই সমস্যার সমাধান করা হোক ৷ আর দ্রুত ওই বাড়িটিকে সংগ্রহশালায় রূপান্তর করা হোক ৷ এ বিষয়ে গবেষক অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের দাবি অবিলম্বে স্কুল এবং কলেজ এক টেবিলে বসে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বাড়িটিকে আর্কিওলজিক্যাল বিভাগে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানাক ৷ ইংরেজ জেলাশাসক পেডি ডগলাস এবং বার্জকে মারার সময় বিভিন্ন চিঠি লেখা হয়েছিল ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সেই চিঠিগুলি সেখানে সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে ৷ এমনকি শহিদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর শুনানি যে কাঠগড়ায় হয়েছিল, সেটিকেও এখানে এনে রাখা যেতে পারে ৷’’

Last Updated : Aug 18, 2021, 12:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.