মেদিনীপুর, 25 অগাস্ট : লকডাউনের জেরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব ব্যবসাতেও । বড় ব্যবসার পাশাপাশি ছোটো ব্যবসার ক্ষেত্রেও ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা । ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের ফুল ব্যবসায়ীরা । সংক্রমণ মোকাবিলায় লকডাউনে স্থগিত রাখা হয়েছে বিবাহ অনুষ্ঠান । ফলে লাখ লাখ টাকার অর্ডার বাতিল হয়েছে । সামনে দুর্গাপুজো । পুজোর বাজেটের হেরফের হওয়ায় প্রভাব পড়বে ফুল ব্যবসাতেও । এই মুহূর্তে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা । ঋণ মকুবের অনুরোধ করছেন ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জঙ্গলমহল অধ্যুষিত এবং ডেবরা, বালিচক, কেশিয়াড়ি, নারাণগড়, দাঁতন, সবং-সহ প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ফুলের চাষ হয় । সেই ফুল জেলার বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হয় । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে সূর্যমুখি, জারবেরা,গোলাপের চাহিদা বেশি । বিয়েবাড়িতে রজনীগন্ধারও চাহিদা রয়েছে ব্যাপক । এই ডেবরা, সবং, কেশিয়াড়ি, দাঁতন এবং গড়বেতা সহ জেলায় প্রায় 1500 মানুষ ফুলের কাজের সঙ্গে যুক্ত । যাঁদের এই জীবিকার উপর চলে । এই অবস্থায় তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ।
ফুল ব্যবসায়ীরা কাঁচা ফুল,ফুলের মালা এবং ফুলের স্টিক,ফুলের ঝুড়ি, রকমারি ফুলের তোড়া, বিয়ে বাড়ি সাজানো,গাড়ি সাজানো সহ যাবতীয় ফুলের কাজ করেন । এবং ফুল-শ্রমিকদের দিয়েও কাজ করান । কোরোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় লকডাউন জারি করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার । লকডাউনে সমস্ত জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা । পুজো, বিয়ে বাড়ি সহ যাবতীয় উৎসব-অনুষ্ঠান বন্ধ । আগে হাজার হাজার ফুলের মালা বিক্রি হত, সেখানে প্রতিদিন এক-দুটো মালা বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । অপর দিকে এই ভরা বিয়ের মরশুমে লজ, অনুষ্ঠান বাড়ি, বিয়ের গাড়ি সাজাতে ব্যস্ত থাকেন ফুল ব্যবসায়ীরা । সেখানে লকডাউনের জেরে সকাল-সন্ধে দোকান প্রায় ফাঁকাই । যদিও এক দুইজন গ্রাহক আসছেন, সেই সংখ্যা অনেক কম । কীভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় ব্যবসায়ীরা । পাশাপাশি জেলাজুড়ে কাঁচা ফুলের আমদানির সমস্যা দেখা দিয়েছে । পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে কাঁচা ফুল যথেষ্ট পরিমাণে আসছে না বাজারে । ফলে দাম বাড়ছে । কাঁচা ফুল প্রতিদিন সংরক্ষণ করে রাখতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা । শুকিয়ে যাচ্ছে ফুল । নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
এমন অনেকেই আছেন যাঁরা লেখাপড়া করে চাকরি পাননি, অথবা কম পড়াশোনা করে চাকরি না পেয়ে ঋণ নিয়ে ছোটো ব্যবসা শুরু করেছেন । সেই ব্যবসার উপর নির্ভর করে তাঁদের সংসার চলে । জীবিকা নির্বাহ করে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করেন । একইসঙ্গে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খচর জোগান ৷ কিন্তু, এইবার সেই ব্যবসার উপরই থাবা বসিয়েছে কোরোনা । লকডাউনের আগে এই ফুল ব্যবসায়ীরা শহর এবং জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছোটো-বড় উৎসব অনুষ্ঠানে ফুলের কাজ করে বহু টাকা রোজগার করতেন । বিশেষ করে বিয়ে বাড়ি, অন্নপ্রাশন, বিবাহ বার্ষিকী,সভা, জন্মদিন এবং শ্রাদ্ধাঅনুষ্ঠানে তাঁদের ব্যবসায় বড় লাভ হত । এবং এক বড় অংকের লাভ হত দুর্গাপুজোর সময় । এই বছর কোরোনা সংক্রমণের কারণে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে পুজো হবে । আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ক্লাবগুলিও । বাজেট কমবে পুজোর । ফলে সেই প্রভাবও পড়বে জেলার ফুল ব্যবসায় ।
এই বিষয়ে ফুল ব্যবসায়ী তরুণ বেরা বলেন, "আগে বিবাহ-অনুষ্ঠান, অন্নপ্রাশন এবং জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ফুলের কাজের ব্যাপক চাহিদা ছিল । আমরা এই মরসুমের দিকে সারাবছর তাকিয়ে থাকি । কিন্তু এখন শ্রাদ্ধশান্তিতেও কেউ ফুল কিনছেন না । এই অবস্থায় জীবন-জীবিকার আশঙ্কায় আমরা দিন কাটাচ্ছি । কীভাবে চলবে সেই চিন্তায় আছি ।"
শেখ সায়েদ আলি বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মরসুমের উপর ভরসা করে থাকি । জানি এই মরসুমে উপার্জন দিয়ে সারা বছরের সঞ্চয় হয়ে যায় । কিন্তু এই লকডাউনে ফুলের বাজার নেই । লকডাউন এবং কোরোনা সংক্রমণের জেরে কেউই ফুলের মালা কিনতে আসছেন না । ফুলের কাজ করার অর্ডার পাচ্ছি না । এই অবস্থায় আমরা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি । কারণ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছি । সেই ঋণ ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ।" একই অভিযোগ কালিপদ রায় ও সুভাষচন্দ্র রায়েরও । তাঁদের বক্তব্য, ছোটোবেলা থেকেই ফুলের কাজ করে আসছি । কিন্তু বর্তমানে লকডাউন সংক্রমণের ফলে সমস্ত কাজ বন্ধ । যা কাজ আসছে তা নামমাত্র । এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে ।