ETV Bharat / state

লাইন পাতা হলেও অধরাই থেকে যায় মেদিনীপুরের ট্রামের স্বপ্ন - পশ্চিম মেদিনীপুরের খবর

লোহার পাত এসে গেছিল শহরে । কাজও শুরু হয়ে গেছিল । কিন্তু সব ব্যবস্থা হওয়ার পরেও ট্রাম লাইন চালু হয়নি । আজও শহরের মানুষের কাছে সেই ট্রাম রাস্তা ট্রামগলি বলেই চিহ্নিত ।

মেদিনীপুরের খবর
মেদিনীপুরের খবর
author img

By

Published : Aug 15, 2020, 9:07 PM IST

মেদিনীপুর, 15 অগাস্ট : সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এতদিনে মেদিনীপুরের বুকেও ট্রাম চলত ৷ ট্রাম লাইনও এসে গেছিল শহরে ৷ কিন্তু তারপর সেই কাজ আর এগোয়নি ৷ সময়ের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মেদিনীপুরের ট্রামলাইন পাতার ইতিহাস ৷

1924 সাল ৷ বি এন ইলিয়াস অ্যান্ড কোম্পানির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল এই শহরে ৷ হুগলি, দামোদর, রূপনারায়ন, কাঁসাই হয়ে মেদিনীপুরে আসত কয়লা ৷ নদীর ধারে রেল ব্রিজের কাছে দু'টি গুদামঘরও তৈরি হয়েছিল ৷ সেখান থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্যই ট্রাম লাইন পাতার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছিল ৷

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, একসময় তমলুক বন্দর দিয়ে রূপনারায়ন ও কাঁসাই নদীর জলপথে মেদিনীপুরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল । তখন মেদিনীপুরে কয়লা আসত লঞ্চে করে । কলকাতা থেকে কয়লা ভরতি লঞ্চ হুগলি নদী, দামোদর, রুপনারায়ন, কাঁসাই হয়ে মেদিনীপুরে আসত জলপথে । যেহেতু জলপথে পরিবহন খরচ কম, তাই নদীপথে আরও অনেক সামগ্রী মেদিনীপুরে আনা হত । এই কয়লা ও অন্যান্য মালপত্র নতুন বাজারের কাছে পাথরঘাটায় এবং রেল ব্রিজের কাছে স্টিমার ঘাটে খালাস করা হত । লঞ্চ থেকে মালপত্র নামিয়ে রাখার জন্য কাঁসাই নদীর উপর রেল ব্রিজের কাছে আকড়সা মাজারের পাশে দুটি গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছিল । কলকাতা থেকে আসা কয়লা পাথরঘাটা থেকে পাওয়ার হাউসে অবধি আনার জন্য ট্রাম রাস্তা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় বি এন ইলিয়াস এন্ড কোম্পানি । তৎকালীন নরমপুর ট্রামওয়ে কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ট্রাম লাইন বসানোর জন্য ।

মেদিনীপুরের খবর
সব ঠিকঠাক থাকলে এই পথ দিয়েই ট্রাম চলত

অনেকে আবার বলেন, মোহনপুরে যে অনিকেত সেচ বাঁধ নির্মাণ করতে প্রচুর পরিমাণে পাথরের প্রয়োজন ছিল । নরমপুর মৌজা থেকে সেই পাথর পাথরঘাটা আনার জন্য ট্রাম লাইন পাতা হয়েছিল । সেই জন্য এই পাথরঘাটা থেকে নদীরপাড় বরাবর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে 19 নম্বর ওয়ার্ড অফিসের সামনে দিয়েই আস্তানার ব্লাইন্ড মাদ্রাসার স্কুলের পাশ দিয়ে ট্রামলাইন পাতার পরিকল্পনা হয়েছিল ।

লোহার পাত এসে গেছিল শহরে । কাজও শুরু হয়ে গেছিল । কিন্তু সব ব্যবস্থা হওয়ার পরেও ট্রাম লাইন চালু হয়নি । আজও শহরের মানুষের কাছে সেই ট্রাম রাস্তা ট্রামগলি বলেই চিহ্নিত ।

ট্রাম নেই ৷ কিন্তু রয়ে গেছে ট্রামগলি ৷ অতীতের ফেলে আসা স্মৃতি নিয়ে আজও বর্তমান ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মেদিনীপুরের বুকে ৷ কিন্তু কেন বন্ধ হল ট্রাম লাইনের কাজ ? লাইন পাতার কাজ মোটেই সোজা ছিল না ৷ খরচসাপেক্ষ ৷ লাভজনকও ছিল না ৷ এর কিছু সময় পরেই রেল চলাচল শুরু হয় শহরে ৷ আসানসোল থেকে ট্রেনে কয়লা আসতে শুরু করে । ফলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রামের কাজ ৷ লোহার পাত এই নতুন বাজারে বহুদিন পড়ে থাকে । এক দশক আগেও সেই ট্রাম লাইন এখানে পড়ে থাকতে দেখা যেত ।

কেন ট্রাম লাইন পাতা সত্ত্বেও কাজ হলো না এর পেছনে দুটো কারণ আছে বলে মনে করা হয়।প্রথমত নতুন লাইন পাততে প্রচুর পরিমাণে পাথরের প্রয়োজন ছিল।নরমপুর থেকে সেই পাথর এনে লাইন পাতার কাজ খুব সোজা ছিল না, বিলম্ব হয়।দ্বিতীয়ত প্রকল্প লাভজনক হবে না বলেই কোম্পানির মনে হয়েছে।তার কিছুদিনের মধ্যে ট্রেন পরিষেবা চালু হয়ে যায়। তখন আসানসোল থেকে ট্রেনে কয়লা আসতে শুরু করে।তাই ট্রাম লাইন পাতার কাজ শুরু করেও বন্ধ করে দেয় কম্পানি।বহুদিন পড়ে থাকে লোহার পাত এই নতুন বাজারে জগন্নাথের মাসির বাড়ি কাছে।এক দশক আগেও সেই ট্রাম লাইন এর পড়ে থাকতে দেখেছেন ।

সময়ের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মেদিনীপুরের ট্রামলাইন পাতার ইতিহাস

মেদিনীপুরের ট্রাম গলির প্রাক্তন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌমেন খান । সৌমেন বাবুর বাবা দীর্ঘদিন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাঁরা জানিয়েছেন, "এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইংরেজদের আমলে ট্রাম লাইন হওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল । পাথরঘাটা থেকে আদালত পর্যন্ত নদীর ধার বরাবর এই ট্রাম লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছিল । কিছুটা কাজ হওয়ার পর কোনও এক কারণবশত তা বন্ধ হয়ে যায় । তবে এই ট্রাম যদি চালু থাকত তাহলে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রথম ট্রাম জেলা হিসেবে ঘোষণা হত ।"

অন্যদিকে গবেষক মধুপ দে বলেছেন, "তৎকালীন সময়ে এই নরমপুর মৌজা থেকে পাথরঘাটা পর্যন্ত পাথর পৌঁছানোর জন্য ট্রাম লাইন এর কাজ শুরু করতে চেয়েছিলে পার্সি কোম্পানি । অন্য এক মত অনুসারে এই মেদিনীপুরের পাওয়ার স্টেশনে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরে চালু ট্রাম চালু করতে চেয়েছিল এই কোম্পানি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাইন পাতা হলেও ট্রাম এসে পৌঁছায়নি মেদিনীপুর জেলায় । তবে ট্রাম রাস্তা কেন হল না সেই উত্তর আজও অজানা । তবে তা হলে হয়ত জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের চিত্র একটু অন্যরকম হত । কলকাতার সঙ্গে টেক্কা দিতে জঙ্গলমহল ।"

মেদিনীপুর, 15 অগাস্ট : সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এতদিনে মেদিনীপুরের বুকেও ট্রাম চলত ৷ ট্রাম লাইনও এসে গেছিল শহরে ৷ কিন্তু তারপর সেই কাজ আর এগোয়নি ৷ সময়ের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মেদিনীপুরের ট্রামলাইন পাতার ইতিহাস ৷

1924 সাল ৷ বি এন ইলিয়াস অ্যান্ড কোম্পানির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল এই শহরে ৷ হুগলি, দামোদর, রূপনারায়ন, কাঁসাই হয়ে মেদিনীপুরে আসত কয়লা ৷ নদীর ধারে রেল ব্রিজের কাছে দু'টি গুদামঘরও তৈরি হয়েছিল ৷ সেখান থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্যই ট্রাম লাইন পাতার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছিল ৷

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, একসময় তমলুক বন্দর দিয়ে রূপনারায়ন ও কাঁসাই নদীর জলপথে মেদিনীপুরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল । তখন মেদিনীপুরে কয়লা আসত লঞ্চে করে । কলকাতা থেকে কয়লা ভরতি লঞ্চ হুগলি নদী, দামোদর, রুপনারায়ন, কাঁসাই হয়ে মেদিনীপুরে আসত জলপথে । যেহেতু জলপথে পরিবহন খরচ কম, তাই নদীপথে আরও অনেক সামগ্রী মেদিনীপুরে আনা হত । এই কয়লা ও অন্যান্য মালপত্র নতুন বাজারের কাছে পাথরঘাটায় এবং রেল ব্রিজের কাছে স্টিমার ঘাটে খালাস করা হত । লঞ্চ থেকে মালপত্র নামিয়ে রাখার জন্য কাঁসাই নদীর উপর রেল ব্রিজের কাছে আকড়সা মাজারের পাশে দুটি গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছিল । কলকাতা থেকে আসা কয়লা পাথরঘাটা থেকে পাওয়ার হাউসে অবধি আনার জন্য ট্রাম রাস্তা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় বি এন ইলিয়াস এন্ড কোম্পানি । তৎকালীন নরমপুর ট্রামওয়ে কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ট্রাম লাইন বসানোর জন্য ।

মেদিনীপুরের খবর
সব ঠিকঠাক থাকলে এই পথ দিয়েই ট্রাম চলত

অনেকে আবার বলেন, মোহনপুরে যে অনিকেত সেচ বাঁধ নির্মাণ করতে প্রচুর পরিমাণে পাথরের প্রয়োজন ছিল । নরমপুর মৌজা থেকে সেই পাথর পাথরঘাটা আনার জন্য ট্রাম লাইন পাতা হয়েছিল । সেই জন্য এই পাথরঘাটা থেকে নদীরপাড় বরাবর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে 19 নম্বর ওয়ার্ড অফিসের সামনে দিয়েই আস্তানার ব্লাইন্ড মাদ্রাসার স্কুলের পাশ দিয়ে ট্রামলাইন পাতার পরিকল্পনা হয়েছিল ।

লোহার পাত এসে গেছিল শহরে । কাজও শুরু হয়ে গেছিল । কিন্তু সব ব্যবস্থা হওয়ার পরেও ট্রাম লাইন চালু হয়নি । আজও শহরের মানুষের কাছে সেই ট্রাম রাস্তা ট্রামগলি বলেই চিহ্নিত ।

ট্রাম নেই ৷ কিন্তু রয়ে গেছে ট্রামগলি ৷ অতীতের ফেলে আসা স্মৃতি নিয়ে আজও বর্তমান ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মেদিনীপুরের বুকে ৷ কিন্তু কেন বন্ধ হল ট্রাম লাইনের কাজ ? লাইন পাতার কাজ মোটেই সোজা ছিল না ৷ খরচসাপেক্ষ ৷ লাভজনকও ছিল না ৷ এর কিছু সময় পরেই রেল চলাচল শুরু হয় শহরে ৷ আসানসোল থেকে ট্রেনে কয়লা আসতে শুরু করে । ফলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রামের কাজ ৷ লোহার পাত এই নতুন বাজারে বহুদিন পড়ে থাকে । এক দশক আগেও সেই ট্রাম লাইন এখানে পড়ে থাকতে দেখা যেত ।

কেন ট্রাম লাইন পাতা সত্ত্বেও কাজ হলো না এর পেছনে দুটো কারণ আছে বলে মনে করা হয়।প্রথমত নতুন লাইন পাততে প্রচুর পরিমাণে পাথরের প্রয়োজন ছিল।নরমপুর থেকে সেই পাথর এনে লাইন পাতার কাজ খুব সোজা ছিল না, বিলম্ব হয়।দ্বিতীয়ত প্রকল্প লাভজনক হবে না বলেই কোম্পানির মনে হয়েছে।তার কিছুদিনের মধ্যে ট্রেন পরিষেবা চালু হয়ে যায়। তখন আসানসোল থেকে ট্রেনে কয়লা আসতে শুরু করে।তাই ট্রাম লাইন পাতার কাজ শুরু করেও বন্ধ করে দেয় কম্পানি।বহুদিন পড়ে থাকে লোহার পাত এই নতুন বাজারে জগন্নাথের মাসির বাড়ি কাছে।এক দশক আগেও সেই ট্রাম লাইন এর পড়ে থাকতে দেখেছেন ।

সময়ের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মেদিনীপুরের ট্রামলাইন পাতার ইতিহাস

মেদিনীপুরের ট্রাম গলির প্রাক্তন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌমেন খান । সৌমেন বাবুর বাবা দীর্ঘদিন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাঁরা জানিয়েছেন, "এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইংরেজদের আমলে ট্রাম লাইন হওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল । পাথরঘাটা থেকে আদালত পর্যন্ত নদীর ধার বরাবর এই ট্রাম লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছিল । কিছুটা কাজ হওয়ার পর কোনও এক কারণবশত তা বন্ধ হয়ে যায় । তবে এই ট্রাম যদি চালু থাকত তাহলে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রথম ট্রাম জেলা হিসেবে ঘোষণা হত ।"

অন্যদিকে গবেষক মধুপ দে বলেছেন, "তৎকালীন সময়ে এই নরমপুর মৌজা থেকে পাথরঘাটা পর্যন্ত পাথর পৌঁছানোর জন্য ট্রাম লাইন এর কাজ শুরু করতে চেয়েছিলে পার্সি কোম্পানি । অন্য এক মত অনুসারে এই মেদিনীপুরের পাওয়ার স্টেশনে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরে চালু ট্রাম চালু করতে চেয়েছিল এই কোম্পানি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাইন পাতা হলেও ট্রাম এসে পৌঁছায়নি মেদিনীপুর জেলায় । তবে ট্রাম রাস্তা কেন হল না সেই উত্তর আজও অজানা । তবে তা হলে হয়ত জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের চিত্র একটু অন্যরকম হত । কলকাতার সঙ্গে টেক্কা দিতে জঙ্গলমহল ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.