আসানসোল, 3 জুন : ছোটো থেকে সাইকেল চালিয়েই দেশ-বিদেশ ঘোরার স্বপ্ন ছিল ৷ বাকিদের মতো বড় হওয়ার সঙ্গে হারিয়ে যেতে দেননি নিজের স্বপ্নকে ৷ বড় হতেই স্বপ্ন পূরণে তাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া ৷ কখনও আসানসোল থেকে দিল্লি, কখনও বা চিত্তরঞ্জন থেকে মুম্বই ৷ আবার কখনও চুরুলিয়া থেকে বাংলাদেশ ৷ সাইকেল চালিয়েই গোটা দেশ চষে ফেলেছেন তিনি ৷ এমন কী, বিদেশের মাটিও ঘুরে এসেছেন ৷ তবে তাঁর দুঃখ একটাই, রাজ্যের তরফে তেমন কোনও সম্মান পেলেন না ৷ বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসে দুঃখপ্রকাশ করলেন মহিলা সাইক্লিস্ট প্রণতি দাস ৷
প্রণতি দাসের বাবা ছিলেন DVC কর্মী ৷ তাই বড় হয়ে ওঠা মাইথন DVC কোয়ার্টারে ৷ বর্তমানে আসানসোলে থাকেন ৷ কর্মসূত্রে কখনও কখনও কলকাতাতেও থাকতে হয় ৷ ইতিহাসে অনার্স নিয়ে স্নাতক ৷ কিন্তু, ছোটোবেলা থেকেই শখ ছিল সাইকেলের ৷ সাইকেল নিয়ে ঘোরাটা যেন নেশা ৷ তাই সাইকেল নিয়ে দেশ-বিদেশ জয়ের স্বপ্নও দেখতেন ৷ কিন্তু, অন্যদের মতোই মেয়ে বলে বাড়ি থেকে পড়তে হয়েছিল বাধার মুখে ৷ তাদের বক্তব্য ছিল, একা মহিলা সাইকেল নিয়ে কোথায় যাবে ৷ কিন্তু, নিজে কখনও ভয় পাননি প্রণতি ৷ ছোটো বেলা থেকেই সাইকেল নিয়ে এক শহর থেকে আর এক শহর ঘুরে বেড়াতেন ৷
তাঁর প্রথম বড় সফর 1993 সালে ৷ বার্নপুর ভারতী ভবন থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন ৷ প্রায় 15 দিন সাইকেল চালিয়ে 1,770 কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিলেন ৷ তখন থেকেই অ্যাডভেঞ্চার যেন পেয়ে বসে তাঁকে ৷ এরপরই চিত্তরঞ্জন রেল শহর থেকে মুম্বইয়ের উদ্দেশে পাড়ি দেন ৷ সেখানে সাংসদ সুনীল দত্তের বাড়িতেই ছিলেন প্রণতি দাস ৷ পরে হরিয়ানা, কর্নাটক, তেলাঙ্গানা প্রভৃতি রাজ্যে সাইকেল নিয়ে গিয়েছেন ৷
শুধু দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল নিয়ে ঘোরাই নয়, মৈত্রী যাত্রা করতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটে চুরুলিয়া থেকে তিনি সাইকেল নিয়ে বাংলাদেশেও সফরে গিয়েছেন ৷ পেয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার ৷ পেয়েছেন অনেক সম্মানও ৷ কিন্তু, কোথাও যেন দুঃখটা রয়েই গিয়েছে ৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলেও খেদ জমে রয়েছে মনে ৷ প্রণতি বলেন, "যতটুকু সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, ততটা আমি পাইনি ৷"
বর্তমানে রেসিং সাইকেলের অনেক দাম ৷ সামান্য বেসরকারি ফার্মে চাকরি করা প্রণতির পক্ষে সাইকেল কেনা বা সফরের খরচ ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না ৷ আগামী দিনে বিদেশে সাইকেল সফর কিংবা দেশের জায়গায় যাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে ৷ কিন্তু, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থের যোগান ৷ এমনই জানালেন তিনি ৷ আগামীদিনে গিনেজ় ওয়ার্লড রেকর্ডে নাম তোলার লক্ষ্য প্রণতির ৷ এই জন্য চায় সরকারের সহায়তা ৷