কাঁকসা, 14 মার্চ: পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ এই স্কুলেই পড়ে অঙ্কিতা বাগদি ৷ আর, তার সঙ্গে দেখা করতে রোজ স্কুলে হাজির হয় মিঠু ! ভাবছেন তো ? কে এই মিঠু ? মিঠু আদতে একটা বন্য শালিক পাখি ৷ থাকে স্কুলের কাছেই একটি গাছে ৷ কিন্তু, কেমন করে যেন অঙ্কিতার সঙ্গে ভারী ভাব (Bird Friendship with Child) হয়ে গিয়েছে তার !
রোজ সকালে নিয়ম করে স্কুলে প্রার্থনা হয় ৷ তারপর শুরু হয় ক্লাস ৷ মাঝখানে থাকে টিফিন টাইম ৷ তারপর আবার কিছুটা পড়াশোনা ৷ আর সবশেষে ছুটি ৷ এই পুরো সময়টা স্কুলেই থাকে মিঠু ৷ হয় অঙ্কিতার মাথায় চড়ে ঘোরে ! আর তা না হলে অঙ্কিতার বসার জায়গায় বেঞ্চের উপর ঠায় বসে থাকে ৷ টিফিন টাইমে অঙ্কিতা তাকে নিজের খাবার থেকেই খেতে দেয় ৷ মিঠু নামটাও অঙ্কিতারই দেওয়া ৷
স্কুলের টিচার ইন চার্জ রামদাস সোরেন জানালেন, এ এক অদ্ভূত বন্ধুত্ব ৷ এমন তাঁরা কোথাও দেখেননি ৷ পাখিটিকে এত দিনে তাঁরাও ভালোবেসে ফেলেছেন ৷ মাষ্টারমশাইদের হাত থেকেও মুড়ি, বিস্কুট খুঁটে খুঁটে খায় মিঠু ৷ টিফিন টাইমে বাকি বাচ্চাদের সঙ্গে খেলেও ৷ তবে, অঙ্কিতা স্কুলে না এলে আর খোঁজ পাওয়া যায় না মিঠুর ৷ সেদিন সে উড়ে যায় অঙ্কিতার বাড়ি ! অন্য়ান্য দিনগুলোয় স্কুল ছুটি হলেই মিঠু ফিরে যায় তার গাছের বাসায় ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে অঙ্কিতা জানিয়েছে, মিঠু রোজ 'সঠিক সময়' স্কুলে পৌঁছে যায় ৷ কোনও দিন তার আসতে দেরি হলে ভারী মন খারাপ হয় অঙ্কিতার ৷
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাই নেশা, রোজ জঙ্গল থেকে লোকালয়ে চিতাবাঘ শাবক
এমন আজব বন্ধুত্ব নজর কেড়েছে অন্যদেরও ৷ এক অভিভাবক জানালেন, তাঁরাও মিঠুকে দেখেন ৷ রোজ ৷ মজার বিষয় হল, মিঠু কিন্তু বড়দের খুব একটা পাত্তা দেয় না ৷ শিক্ষকদের হাত থেকে খাবার খেলেও অভিভাবক বা অন্য কর্মীদের কাছে আসে না সে ৷ ওই অভিভাবক মনে করেন, মিঠু আসলে ছোটদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে ৷ তাছাড়া, তার সঙ্গে অন্য কোনও শালিকও কেউ দেখেনি কোনও দিন ৷ তাতে সকলেরই ধারণা হয়েছে, জংলা এই পাখি আসলে মানবশিশুদেরই বন্ধু মনে করে ৷ তারাই যেন তার আপনজন ! সেই কারণেই সারাদিন ছোটদের স্কুলে কাটায় সে ৷ এমন বন্ধুত্ব দেখে কারও কারও মনে পড়ে যায় দ্য জাঙ্গল বুকের কথা ৷ অনাথ মোগলির সঙ্গেও এমনই 'অসম' বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল জঙ্গলের পশু, পাখি, সরীসৃপদের !