দুর্গাপুর, ২৭ মেঃ একদিকে পরিবেশের উপর মানবজাতির স্বার্থের থাবা, অন্যদিকে কলকারখানার ধোঁয়া, মোবাইল টাওয়ারের তরঙ্গ এসবের মাঝে যেন উন্নয়নের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখির বাসা। দেশীয় গাছ নেই বললেই চলে। যার জন্য বাবুই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেই জন্যই তাঁতি পাখির শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে বহু মানুষ মনে করছেন। বন দফতরের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলেও মত অনেকের। কাঁকসার জঙ্গলমহলের গ্রামগুলিতে আজও বাসা বানাতে মরিয়া বাবুই পাখি। বাবুই পাখির বাসায় রয়েছে অন্যন্য কারুকার্য।
তাল, খেঁজুর, নারকেল গাছ বর্তমানে অনেক কমে আসছে, সেজন্য বাবুই পাখির বাসা বোনার চিত্র খুব কমই দেখা যায়। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা ‘তাঁতি পাখি’ নামেও পরিচিত। ঘাস, খড় দিয়ে ঠোঁটে করে দীর্ঘ সময় ধরে যত্ন সহকারে বাসা বানাতে দেখা যায় এদের। তারপর সেই বাসা পেট দিয়ে সুন্দরভাবে পালিশ করতেও দেখা যায়। এমন যত্ন সহকারে বাসা বানায় দমকা হওয়ায় বাসা নড়তে থাকে কিন্তু মাটিতে পড়ে না, সেই বাসায় প্রবেশ করে না বৃষ্টির জলও। উল্টোনো কলসির মত প্রথমে তৈরি করে বাসায় থাকে দুটি গর্ত পরে ডিম পাড়ার জন্য একটি গর্ত বন্ধ করে দেয়। তারপরই তাঁতি পাখি সঙ্গী খোঁজা শুরু করে ৷ পরে একসঙ্গে বসবাস শুরু করে সেই বাসার মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখির বাসা। কমে আসছে তাল, খেঁজুর, নারকেল গাছের সংখ্যা। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর জুড়েও খুব কমই দেখা মেলে এইসব গাছের সংখ্যা। যার জন্য হারিয়ে যেতে বসেছে দক্ষ তাঁতি পাখি বা বাবুই পাখির বাসা।
তবে এই বাবুই পাখির বাসা কাঁকসার জঙ্গলমহলের গ্রামগুলিতে আজও দেখা মেলে। মন কাড়ে বাসা বাঁধার চিত্র দেখলেও। বিষয়টিতে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মুচিপাড়া বন দফতরের রেঞ্জার তরুণকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্য জীবজন্তুদের এবং পাখিদের যাতে করে কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে প্রতি মুহূর্তে তৎপর বন দফতরের কর্মীরা বলে জানান তিনি ৷ তরুণবাবু আরও জানান, জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে এবং দেশীয় গাছ লাগানোর কথা জানানো হচ্ছে। বন দফতরের উদ্যোগেও একাধিক জায়গায় তাল, খেঁজুর, নারকেল, সুপারি গাছ লাগানো হচ্ছে।
এই প্রজন্ম বাবুই পাখির বাসা কম দেখতে পেলেও আগামী প্রজন্ম হয়ত আর দেখতে পাবে না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা নিত্যানন্দ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আগামী প্রজন্ম শুধুই শুনতে পাবে বাবুই পাখির কথা। হয়ত আর উপলব্ধি করতে পারবে না তারা।’’