ETV Bharat / state

Uttarkashi Tunnel Mishap: উত্তরকাশীর টানেল বিপর্যয় ফেরাল সেই নভেম্বরেরই মহাবীর খনি দুর্ঘটনার স্মৃতি

উত্তরকাশীতে টানেল দুর্ঘটনায় আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা চলছে ৷ এ রকমই এক নভেম্বরে ঘটেছিল একই ধরনের আরও এক ঘটনা ৷ 1989 সালে ৷ আসানসোলের মহাবীর খনিতে মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন 65 জন শ্রমিক ৷ তবে খনি ইঞ্জিনিয়ার জেএস গিলের বীরত্ব ও উপস্থিত বুদ্ধির জোরে সবাইকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছিল ৷

Uttarkashi Tunnel Mishap
মহাবীর খনি দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরল
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 13, 2023, 12:53 PM IST

Updated : Nov 13, 2023, 2:12 PM IST

আসানসোল, 13 নভেম্বর: সেই অভিশপ্ত নভেম্বরের স্মৃতি ফিরল । ক্যালেন্ডারের পাতায় বহু বছর পেরোলেও স্মৃতির পাতায় মাত্র একদিনের ব্যবধান । 1989 সালের 13 নভেম্বর রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে দুর্ঘটনায় আটকে পড়েছিলেন 64 জন খনি শ্রমিক । গতকাল, 12 নভেম্বর উত্তরকাশীর যমুনোত্রী জাতীয় সড়কে নির্মীয়মাণ টানেল ভেঙে আটকে পড়েছেন অন্তত 40 জন শ্রমিক । মহাবীর খনি থেকে রোমহর্ষক ভাবে উদ্ধার করা গিয়েছিল 64 জন খনি শ্রমিককে । উত্তরকাশীর টানেল থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় শ্রমিকদের সেদিকে তাকিয়ে দেশ । উদ্বিগ্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও । স্মৃতির ঝাঁপিতে ডুব দিয়ে দেখে নেওয়া যাক, সে দিন কী ঘটেছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে ।

1989 সালের 13 নভেম্বর । রাতের শিফটে কাজ চলছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে । খনির 21 এবং 42 নম্বর সেকশনে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা । দুটি সেকশনে 61 জন এবং 10 জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন । আর তখনই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা । খনির ভিতরে কয়লা খোঁড়ার জন্য ডিনামাইট ব্লাস্ট করতেই হু হু করে জল ঢুকে যায় খনিতে । পরে জানা গিয়েছিল, মহাবীর খনির পাশেই ছিল ব্রিটিশ আমলের একটি খনি । পরিত্যক্ত সেই খনিতে প্রচুর জল মজুত ছিল । ডিনামাইট বিস্ফোরণের কারণে খনির দেওয়াল ভেঙে যায় । যার ফলে প্রায় 11 লক্ষ গ্যালন জল ঢুকে পড়ে মহাবীর খনিতে । 6 জন খনি শ্রমিক যাঁরা দেওয়ালের কাছে ছিলেন, তাঁরা জলের তোড়ে ভেসে যান । অনেক পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল । কয়েকজন খনিমুখের সামনাসামনি থাকায় তড়িঘড়ি উপরে উঠে যেতে পেরেছিলেন । কিন্তু খনির ভিতর আটকে পড়েন 65 জন শ্রমিক । ঠিক যেভাবে এখন টানেলের ভিতর 40 জন আটকে আছেন উত্তরকাশীতে ।

কীভাবে উদ্ধার হয়েছিলেন শ্রমিকরা ?

খনির শ্রমিকরাই খনি থেকে বের হয়ে জানিয়েছিলেন সেই বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা । ঘটনার পরে তাঁরা খনির ভিতরেই একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন । চারিদিকে জল । খনির ভিতরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ভাবেই চলে যায় । অন্ধকার খনিগর্ভে মৃত্যুভয় বুকে নিয়ে 65 জন । খনি শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন, এত অন্ধকার খনির ভেতরে যে নিজের আঙুলও দেখা যাচ্ছিল না । তবু ক্ষীণ আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল খনির ভিতর থাকা টেলিফোন লাইন । যা দিয়ে যোগাযোগ করা যায় শ্রমিকদের সঙ্গে । শ্রমিকরাও জানান, তাঁরা কোন অংশে আটকে আছেন । এরপরে শুরু হয় শ্রমিকদের বাঁচানোর লড়াই ।

ইসিএলের দক্ষ সার্ভেয়াররা মাটির উপর থেকেই স্থানটিকে খুঁজে বের করেন নির্ভুল ভাবে । এরপর 13 নভেম্বর প্রথম গর্ত বা 'বোর হোল' করা হয় । তা দিয়ে শ্রমিকদের কন্ঠস্বর শোনা যায় । পাঠানো হয় খাবার ও জল । ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে বিশেষ উদ্ধারকারী দলকে আনা হয় । কিন্তু জলে ভর্তি খনি থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যাবে শ্রমিকদের, তা ভেবেই রেসকিউ টিম প্রায় হাত তুলে নেয় । তখনই ত্রাতার ভুমিকায় এগিয়ে আসেন খনি ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত গিল ।

তিনি জানান, বিশেষ ক্যাপসুল তৈরি করা গেলে, তা মাটির ভিতর ঢুকিয়ে, তাতে একজন করে শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব । সেইমতো ইসিএলের নিয়ামতপুর ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা 14 নভেম্বর রাত থেকেই তড়িঘড়ি লোহার চাদর দিয়ে ক্যাপসুল তৈরি করে দিলেন ।

15 নভেম্বর রাত । ক্যাপসুল এল । হাজার হাজার মানুষের ভিড় । গিল সাহেব জানালেন, তিনিই নামবেন শ্রমিকদের উদ্ধার করতে । সেই মতো প্রাণ হাতে গভীর রাতে ক্যাপসুলে নিচে নামলেন তিনি । কিছু সময় পরেই উঠে এলেন এক খনি শ্রমিক । চারিদিকে তখন হর্ষধ্বনি । মানুষের চিৎকার । একে একে 65 জন শ্রমিক উঠে আসে । রাত পেরিয়ে পূব আকাশে যখন আলোর ছটা, তখন সবাইকে উদ্ধার করে শেষে উঠে এলেন যশবন্ত সিং গিল ।

এই ঘটনা জাতীয় বীরের উপাধি দেয় তাঁকে । সম্প্রতি সেই গিল সাহেব ও মহাবীর খনির দুর্ঘটনা নিয়েই মিশন রানিগঞ্জ ফিল্ম হয়েছে । তা দেখে স্মৃতি আরও তরতাজা দেশের মানুষের । কিন্তু গতকাল ঘটে যাওয়া টানেল দুর্ঘটনা যেন নভেম্বর মাসেরই সেই অভিশপ্ত স্মৃতি ফেরাল । তবে সে দিন যেভাবে সব শ্রমিককে নিরাপদে রক্ষা করা হয়েছিল, উত্তরকাশীতেও সেই ধারাই বজায় থাকুক, এটাই প্রার্থনা দেশবাসীর ৷

আরও পড়ুন:

  1. আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, জল-খাবার পৌঁছে দিল প্রশাসন
  2. নিজেদের খনির সত্যি ঘটনায় তৈরি অক্ষয়ের মিশন রানিগঞ্জে অভিনয় করে উচ্ছ্বসিত কর্মীরা

আসানসোল, 13 নভেম্বর: সেই অভিশপ্ত নভেম্বরের স্মৃতি ফিরল । ক্যালেন্ডারের পাতায় বহু বছর পেরোলেও স্মৃতির পাতায় মাত্র একদিনের ব্যবধান । 1989 সালের 13 নভেম্বর রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে দুর্ঘটনায় আটকে পড়েছিলেন 64 জন খনি শ্রমিক । গতকাল, 12 নভেম্বর উত্তরকাশীর যমুনোত্রী জাতীয় সড়কে নির্মীয়মাণ টানেল ভেঙে আটকে পড়েছেন অন্তত 40 জন শ্রমিক । মহাবীর খনি থেকে রোমহর্ষক ভাবে উদ্ধার করা গিয়েছিল 64 জন খনি শ্রমিককে । উত্তরকাশীর টানেল থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় শ্রমিকদের সেদিকে তাকিয়ে দেশ । উদ্বিগ্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও । স্মৃতির ঝাঁপিতে ডুব দিয়ে দেখে নেওয়া যাক, সে দিন কী ঘটেছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে ।

1989 সালের 13 নভেম্বর । রাতের শিফটে কাজ চলছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে । খনির 21 এবং 42 নম্বর সেকশনে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা । দুটি সেকশনে 61 জন এবং 10 জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন । আর তখনই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা । খনির ভিতরে কয়লা খোঁড়ার জন্য ডিনামাইট ব্লাস্ট করতেই হু হু করে জল ঢুকে যায় খনিতে । পরে জানা গিয়েছিল, মহাবীর খনির পাশেই ছিল ব্রিটিশ আমলের একটি খনি । পরিত্যক্ত সেই খনিতে প্রচুর জল মজুত ছিল । ডিনামাইট বিস্ফোরণের কারণে খনির দেওয়াল ভেঙে যায় । যার ফলে প্রায় 11 লক্ষ গ্যালন জল ঢুকে পড়ে মহাবীর খনিতে । 6 জন খনি শ্রমিক যাঁরা দেওয়ালের কাছে ছিলেন, তাঁরা জলের তোড়ে ভেসে যান । অনেক পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল । কয়েকজন খনিমুখের সামনাসামনি থাকায় তড়িঘড়ি উপরে উঠে যেতে পেরেছিলেন । কিন্তু খনির ভিতর আটকে পড়েন 65 জন শ্রমিক । ঠিক যেভাবে এখন টানেলের ভিতর 40 জন আটকে আছেন উত্তরকাশীতে ।

কীভাবে উদ্ধার হয়েছিলেন শ্রমিকরা ?

খনির শ্রমিকরাই খনি থেকে বের হয়ে জানিয়েছিলেন সেই বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা । ঘটনার পরে তাঁরা খনির ভিতরেই একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন । চারিদিকে জল । খনির ভিতরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ভাবেই চলে যায় । অন্ধকার খনিগর্ভে মৃত্যুভয় বুকে নিয়ে 65 জন । খনি শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন, এত অন্ধকার খনির ভেতরে যে নিজের আঙুলও দেখা যাচ্ছিল না । তবু ক্ষীণ আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল খনির ভিতর থাকা টেলিফোন লাইন । যা দিয়ে যোগাযোগ করা যায় শ্রমিকদের সঙ্গে । শ্রমিকরাও জানান, তাঁরা কোন অংশে আটকে আছেন । এরপরে শুরু হয় শ্রমিকদের বাঁচানোর লড়াই ।

ইসিএলের দক্ষ সার্ভেয়াররা মাটির উপর থেকেই স্থানটিকে খুঁজে বের করেন নির্ভুল ভাবে । এরপর 13 নভেম্বর প্রথম গর্ত বা 'বোর হোল' করা হয় । তা দিয়ে শ্রমিকদের কন্ঠস্বর শোনা যায় । পাঠানো হয় খাবার ও জল । ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে বিশেষ উদ্ধারকারী দলকে আনা হয় । কিন্তু জলে ভর্তি খনি থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যাবে শ্রমিকদের, তা ভেবেই রেসকিউ টিম প্রায় হাত তুলে নেয় । তখনই ত্রাতার ভুমিকায় এগিয়ে আসেন খনি ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত গিল ।

তিনি জানান, বিশেষ ক্যাপসুল তৈরি করা গেলে, তা মাটির ভিতর ঢুকিয়ে, তাতে একজন করে শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব । সেইমতো ইসিএলের নিয়ামতপুর ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা 14 নভেম্বর রাত থেকেই তড়িঘড়ি লোহার চাদর দিয়ে ক্যাপসুল তৈরি করে দিলেন ।

15 নভেম্বর রাত । ক্যাপসুল এল । হাজার হাজার মানুষের ভিড় । গিল সাহেব জানালেন, তিনিই নামবেন শ্রমিকদের উদ্ধার করতে । সেই মতো প্রাণ হাতে গভীর রাতে ক্যাপসুলে নিচে নামলেন তিনি । কিছু সময় পরেই উঠে এলেন এক খনি শ্রমিক । চারিদিকে তখন হর্ষধ্বনি । মানুষের চিৎকার । একে একে 65 জন শ্রমিক উঠে আসে । রাত পেরিয়ে পূব আকাশে যখন আলোর ছটা, তখন সবাইকে উদ্ধার করে শেষে উঠে এলেন যশবন্ত সিং গিল ।

এই ঘটনা জাতীয় বীরের উপাধি দেয় তাঁকে । সম্প্রতি সেই গিল সাহেব ও মহাবীর খনির দুর্ঘটনা নিয়েই মিশন রানিগঞ্জ ফিল্ম হয়েছে । তা দেখে স্মৃতি আরও তরতাজা দেশের মানুষের । কিন্তু গতকাল ঘটে যাওয়া টানেল দুর্ঘটনা যেন নভেম্বর মাসেরই সেই অভিশপ্ত স্মৃতি ফেরাল । তবে সে দিন যেভাবে সব শ্রমিককে নিরাপদে রক্ষা করা হয়েছিল, উত্তরকাশীতেও সেই ধারাই বজায় থাকুক, এটাই প্রার্থনা দেশবাসীর ৷

আরও পড়ুন:

  1. আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, জল-খাবার পৌঁছে দিল প্রশাসন
  2. নিজেদের খনির সত্যি ঘটনায় তৈরি অক্ষয়ের মিশন রানিগঞ্জে অভিনয় করে উচ্ছ্বসিত কর্মীরা
Last Updated : Nov 13, 2023, 2:12 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.