দুর্গাপুর, 25 নভেম্বর: দুর্গাপুরে (Durgapur) দু'দিনের ঝটিকা সফরে আসেন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী (Union Coal Minister Pralhad Joshi) । তিনি অন্ডাল বিমানবন্দরে নামার পরে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি বেসরকারি হোটেলে রাত্রিবাস করেন । কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপির দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই ও জয়দেব খাঁর (Joydev Khan) একটি ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল শিল্পাঞ্চলে ।
জয়দেব খাঁ এক সময় বেআইনি কয়লার কারবারি (Coal Smuggling) ছিলেন বলে অভিযোগ ৷ তাঁর সঙ্গে কেন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রীর সাক্ষাৎ হল, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ৷ বিজেপিকে নিশানা করে আসরে নামে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ৷ টুইট করেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷
যদিও 2021 সালে এই জয়দেব খাঁ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন । বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) তাঁর হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দেন । এরপরে বিজেপির বহু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছে এই জয়দেব খাঁকে । কয়লার বেআইনি কারবারে অভিযুক্ত রাজু ঝাকেও বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল দুর্গাপুরের পলাশডিহায় । এই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল তখনই৷ তা আবার নতুন করে শুরু হল ৷
অভিযোগ, বেআইনি কয়লা কারবারে অভিযুক্তদের মধ্যে যাঁরা বাম আমলে প্রভাব প্রতিপত্তি করেছিলেন, তাঁদের অনেককেই তৃণমূল কংগ্রেসের জমানার শুরুতেই গ্রেফতার করা হয় ৷ আর তার পরই কয়লা পাচারের রাশ অনুপ মাজি ওরফে লালার হাতে চলে যায় ৷ তাই বাম আমলের কয়লা মাফিয়াদের অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেন ৷ ফলে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) থেকে অগ্নিমিত্রা পাল, অনেকের সঙ্গে এই বিতর্কিত ব্যক্তিদের ছবি দেখা গিয়েছে ৷
কিন্তু গত কয়েকমাসে কয়লা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৷ দলের সবস্তরের নেতারাই এই নিয়ে সরব হয়েছেন ৷ দুর্গাপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা রমাপ্রসাদ হালদার বলেন, "কয়লামন্ত্রী সকালে বললেন কয়লাচুরি রুখবে রাজ্য সরকার আর রাতে তিনিই কি না কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেন ৷ এতেই স্পষ্ট তিনি সিন্ডিকেট ঠিক করতে এসেছিলেন ।"
সিপিএমের (CPIM) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, "আপনারা সাংবাদিক । আপনাদের হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল । আর কয়লা মাফিয়া মন্ত্রীর ঘরে । টেবিলে আপেল, কালো আঙুর সাজানো । বেআইনি কয়লার টেন্ডার রিনিউ করতে গিয়েছিল । কয়লা মাফিয়ারা দিল্লি আর ক্যামাক স্ট্রিট ঠিক রেখে কাজ করে যাচ্ছে । এই দুটো দলকে চালাচ্ছে মাফিয়ারা ।"
তৃণমূল ও সিপিএমের আক্রমণের জবাবে বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দোপাধ্যায় বলেন, "আমি যতদূর জানি মাননীয় দিলীপ ঘোষের হাত থেকে বিজেপির পতাকা নিয়ে জয়দেব খান বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন । নিশ্চিত তাঁর সম্পর্কে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে তাঁকে যোগদান করানো হয় । আর যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকে, আমি যেহেতু জেলা কমিটির একজন পদাধিকারী, তাই আমি বিষয়টি দলীয় অভ্যন্তরীণ বৈঠকে আলোচনা করব ।"
পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, "কয়লামন্ত্রী খনি পরিদর্শন করার আগে কয়লা চুরির জন্য রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করলেন আর তিনিই কি না, কয়লা মাফিয়ার হোটেলে কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে ছবি তুললেন । এদের মুখে রামনাম আর হাতে ছুরি । আমরা কয়লা চুরি বন্ধের জন্য ইসিএলকে বহু উপায় বলেছি । ইসিএল তা শোনেইনি ।"
আরও পড়ুন: কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকের অভিযোগ অভিষেকের